জলাধার, ঝালদা, তুলিন
পাহাড়িয়া বাঁশি বিশেষ ভ্রমণ

নরহরা ঝরনার খোঁজে তিন নর

দীপক দাস

মাথাটা ঠান্ডা হল স্টেশনে পা দিয়ে। স্টেশন থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে যে! একটু কাছে, অনেকটা দূরে সারি দেওয়া, চুড়ো উঁচু করা পাহাড়। দু’একটা পাহাড় যেন একটু টেকো। চুড়োর কাছে সবুজ কম। ধূসর পাথর বেশি। স্টেশনে নামলে পাহাড়, ঘরের জানলা খুললে পাহাড়, সকালে দাঁত মাজতে মাজতে এলাকা টহল দিতে গেলে পাহাড়— ঘুরতে গেলে এমন দৃশ্য মনে আলো আনে। উঁচুর কাছে মাথা আপনা থেকেই নত হয়ে আসে কিনা। তুলিন স্টেশনে নেমে সেই পরিবেশ পেলাম কিনা। তাই মাথাটা ঠান্ডা হল।

তুলিন স্টেশনটাই বাঁচিয়ে দিল ইন্দ্রকে। যে কাণ্ড ও ঘটিয়েছে তাতে ভস্ম না হলেও মস্তিষ্কের গরম বাষ্পে ওর ভাপা হয়ে যাওয়ার কথা। চিত্তরঞ্জন সন্দেশের মতো। শুরুতেই গুবলেট করেছে আমাদের গুবলেটেশ্বর। এবং আমাদের সফরে ওর কীর্তি অক্ষয় রাখার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এবার পুজোয় আমাদের সফর অনিশ্চিতই ছিল। বাবলা ছাড়া কেউ আগ্রহ দেখায়নি চতুর্থী পর্যন্ত। সকলেই ব্যস্ত। আমিও চুপ করে ছিলাম। দেখছিলাম, নিজে থেকে কারা কারা আগ্রহী। তাহলে বোঝা যাবে, পুজোর দিনে ঘরের বাইরে বেরোতে কে আগ্রহী আর কার আপত্তি আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুপ থাকা গেল না। পুজোর পাঁচদিন রাতে ট্রেন দিয়েছে। একেবারে পুরুলিয়া পর্যন্ত যাবে। রাতে ঘুমোত ঘুমোতে গিয়ে সকালে পৌঁছে যাওয়া। গোটা দিন মিলবে ঘোরার জন্য। এমন সুযোগ ছাড়া যায়!

পাহাড় দেখতে পাওয়া তুলিন স্টেশন।

দীপু যাবে না। এখন সে ঘাসপুসের নাড়িনক্ষত্রের খোঁজে ব্যস্ততম সদস্য। সৌগত সংসারি এবং ভিন জেলার বাসিন্দা। ওর ছুটিও কম। বাকি ইন্দ্র। ফোন করে, বাড়ি গিয়ে পলাতক ইন্দ্রকে কব্জা করা গেল। রাজি হল। টিকিট কাটা হল বড়গাছিয়া স্টেশন থেকে। ষষ্ঠীর রাতে ১টায় সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেন। আমার সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অফিস। তার পর বেরোব। কাজ করছি। ৮টার সময়ে ইন্দ্রর ফোন। ধীর এবং কিঞ্চিৎ সিরিয়াস গলায় যা জানাল তার অর্থ, ট্রেন নাকি এক ঘণ্টা এগিয়ে দিয়েছে। ছাড়বে ১২টায়। ওকে নাকি মেসেজও দিয়েছে। শুনে মাথায় হাত। আমার অফিস শেষ না করে তো ওঠা যাবে না! ওদের গাড়ি করতে বললাম।

খাওয়া হল না। কম্পিউটার বন্ধ করেই বেরিয়ে পড়তে হল। সাঁতরাগাছিতে পৌঁছে গিয়েছিলাম সাড়ে ১১টা ১০-১৫ মিনিটে। ওদের দাঁড় করিয়ে খেতে গেলাম টিকিট কাউন্টারের পাশের একটা হোটেলে। খেয়ে এসে শুনি ট্রেন তখনও দেয়নি। বাবলা বসে ঝিমোচ্ছে। ইন্দ্র দাঁড়িয়ে মোবাইল ঘেঁটেই যাচ্ছে। ব্যাপার কী! জানা গেল, ট্রেনের সময় পরিবর্তন হয়নি। ইন্দ্র ভুল দেখেছে। এর পর মাথা আর কার ঠিক থাকে। প্রতিটা সফরে এই গুবলেটেশ্বরের জন্য আমাদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবার শুরুতেই হাজার টাকার অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া।

তুলিনের প্রকৃতি এমনই সুন্দর।

তুলিন স্টেশনে নেমেছিলাম সপ্তমীর সকালে। পুরুলিয়া থেকে রাঁচিগামী ট্রেন ধরে। পুরুলিয়া স্টেশনে আবার আমি গুবলেট করলাম। টিকিট কাটতে ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা ফেরত নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। যখন মনে পড়ল তখন তুলিনের ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মাথা গরম ছিল।

স্টেশন থেকেই ঘর খোঁজা শুরু হয়েছিল। আমাদের এক সহযাত্রী নেমেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল। বড় রাস্তার ধারে এসে এক গ্রিলের দোকান, এক দর্জিওয়ালাকে আরেক প্রস্ত জিজ্ঞাসা। মিলল ডেরা। গোস্বামীবাবুর লীলা নিবাস। ইনি আমাদের জেলার অনেকটা অংশ চেনেন। ঠিকাদারি করতেন। কাজের লোকের খোঁজে হাওড়ার বাইনান, বাগনান, আমতায় যাতায়াত ছিল। আলাপ জমে উঠতে দেরি হল না। আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। অবসরের পরে তুলিনে বসত করেছেন। বাড়ির একটি অংশ ভাড়া দেন পর্যটকদের। তবে এখানে শুধু থাকার ব্যবস্থা। খাওয়াদাওয়া বাড়িটির পাঁচিল ঘেঁষা হোটেলে। আমরা পোশাক বদলে খেতে গেলাম। অর্ডার দেওয়ার পরে কিছুটা সময় ছিল। ইন্দ্র আর বাবলাকে বসিয়ে রেখে গাড়ির খোঁজে গেলাম। আগের মোড়ে গাড়ি মেলে বলছিলেন গোস্বামীবাবু।

নোড়াহারা জলাধারের কাছে সেই মাঠ, প্রকৃতি আর আমাদের সারথি ক্যাবলাদা।

বেশি দূর যেতে হল না। সামনেই রাস্তার পাশে একটা অটো দাঁড়িয়েছিল। চালক গাড়ি ঝাড়পোছ করছিলেন। তিনি ক্যাবলাদা নামে বেশি পরিচিত। উনি সাহায্য করলেন। প্রথমে ফোন করে পরের দিনের জন্য গাড়ি জোগাড় করে দিলেন। কিন্তু আজ! কাছের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে। এই সফরে অটো উপযুক্ত। ক্যাবলা সাহায্য করেছেন। তাঁকেই প্রস্তাব দেওয়া যাক। রাজি হলেন উনি। সঙ্গীদের ফোন করে জানিয়ে দিলাম গাড়ির কথা। খেয়েদেয়ে দ্রুত হোটেলে ফিরে পৌনে ১২টার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম। শুরু হল তুলিন সফর। যেদিকে এগোচ্ছিল অটো সেদিকে প্রচুর পাহাড়। ডানে-বায়ে সব দিকেই। ধান জমির পরে। প্রান্তর পেরিয়ে। এই পাহাড়গুলোই আমরা দেখেছিলাম স্টেশন থেকে। অপূর্ব সব দৃশ্যপট। দেখে মন ভরানো যায়। লিখে বোঝানো শক্ত। অটো আরেকটু এগোতে দোকানের সাইনবোর্ডে দেখলাম ঝালদা। আমাদের বেগুনকোদর হয়ে ঝালদার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সেবার অবশ্য সৌগত মানে গার্ডবাবু সঙ্গী ছিল আমার আর ইন্দ্রর।

নোড়াহারা জলাধার।

ঝালদা ছাড়িয়ে অটো গিয়ে থামল পাহাড়ের কোলে এক মাঠের কাছে। জঙ্গল পাহাড় ঘেরা সুন্দর একটা জায়গা। ক্যাবলাদা এগিয়ে যেতে বললেন। মাঠ ছাড়িয়ে বাঁক নিতেই আমরা এক অসাধারণ দৃশ্যরাজির সামনে এসে দাঁড়ালাম। একটা জলাধার। জলাধার ঘিরে অনেকগুলো পাহাড়। জলাধারে পাহাড়ের ছায়া পড়েছে। পাহাড় শ্রেণির সবুজের ছায়ায় জলের রং যেন গাঢ়। সব মিলিয়ে এক নৈসর্গিক দৃশ্য। গ্রামের নাম নোড়াহারা। জলাধারের একদিকের ক্যানালে চান করছিলেন কয়েকজন। তাঁরা নাম বললেন। গ্রামের নামেই জলাধারের নাম।

আমরা ছবি তুলে এগিয়ে গেলাম। সেখানে দু’টো দৃশ্য দেখলাম। একজন গরু চরাচ্ছেন। হাতে একটা কুড়ুল। অন্য দৃশ্যটি হল, জলাধারের পাশে বসে দু’জন। দু’জনের মাঝে মদের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস আর চিপসের প্যাকেট। অসুন্দর না থাকলে বোধহয় সুন্দরের মহিমা সম্পূর্ণ খোলতাই হয় না। গরু চরাচ্ছিলেন গোপাল মাহাতো। গল্প জুড়েছিলাম তাঁর সঙ্গেই। জানালেন, জঙ্গলে হরিণ, ময়ূর আছে। আছে বুনো শুয়োর। মাঝে মাঝে হাতিও আসে। হাতি বন দফতরের একটা ফলক ভেঙে দিয়েছে। দেখালেন। গোপালবাবু অভয় দিলেন। আমরা জঙ্গলে ঢুকে গেলাম। যদি কিছুর দেখা মেলে। বন দফতর জঙ্গলের সীমানায় পরিখা কেটে দিয়েছে। যাতে গবাদি পশু জঙ্গলে ঢুকে রোপণ করা চারাগাছ না খেতে পারে। গোচারণ পৃথিবীর বহু জঙ্গলের বিপদ। নিয়মিত গোচারণে বনভূমির অনেকটা অংশ ঊষর হয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

গোচারক গোপাল মাহাতো।

বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম জঙ্গলে। ফিসফিস করে কথা বলছিলাম। উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিলাম। দফতরের লাগানো গাছ দেখলাম, বিশাল ফড়িংয়ের দেখা মিলল। কিন্তু ময়ূর, হরিণ অদেখাই রইল। ডাকও শুনতে পেলাম না ময়ূরের। বেরিয়ে আসতে হল জঙ্গল থেকে। দ্বিতীয় গন্তব্যে যেতে হবে। ক্যাবলাদা অটোতেই ছিলেন। মাঠের পাশ থেকেই একটা পাহাড়ের পাদদেশ শুরু হচ্ছে। ওই পাহাড়ে একটুখানি চড়ার ইচ্ছে ছিল সকলেরই। অটোর দিকে যেতে যেতে সেই কথাই বলাবলি করছিলাম। রাস্তার পাশে বসেছিলেন একজন। তিনিও গোচারক। আমাদের কথা শুনে জানালেন, ওই পাহাড়ের পিছন দিকে একটা ঝরনা আছে। যেতে মিনিট পাঁচেক লাগবে। যদিও ক্যাবলাদা বললেন, আধ ঘণ্টা লাগবে। একটানা আধ ঘণ্টা চড়তে পারব? টানাপড়েনে অটোয় উঠেই পড়েছিলাম। ঠিক তখনই ক্যাবলাদা বললেন, ‘‘আমরা কেউ এই ঝরনার কথা জানি না। কোনও পর্যটক যায় না।’’ এই কথাটাই আমাদের যেন প্রেরণা দিল। নেমে পড়লাম অটো থেকে।

বিড়ি বাঁধতে ব্যস্ত বধূটি।

গোচারকের নাম ভবতারণ মাহাতো। প্রবীণ ব্যক্তিটি নোড়াহারা গ্রামেরই বাসিন্দা। উনি আমাদের পথপ্রদর্শক। ভবতারণবাবু গরুগুলো তাড়িয়ে মাঠ পার করে পাহাড়ের কিছুটা চড়াইয়ে তুলে দিলেন। জানালেন, এবার আর কোথাও যাবে না। আমরা চড়াই ভাঙতে শুরু করলাম। পথপ্রদর্শক কথা বলতে শুরু করলেন। পাহাড়ের কথা, পাহাড়বাসীর কথা, নিজের ঘরের কথা। ঘরের কথায় বিষাদ ছিল।

কিছুটা ওঠার পরে এক বধূর সঙ্গে দেখা হল। পাহাড়ে ওঠার পথরেখার পাশে ঢালু জায়গায় বসে বিড়ি বাঁধছেন। ইন্দ্র অনুমতি নিয়ে ছবি তুলল। বধূটির হাত একবারের জন্যও থামেনি। মহাজনি তাড়া রয়েছে নিশ্চয়। বধূকে তাঁর রুজির কাজে ছেড়ে আমরা আবার উপরে উঠতে শুরু করলাম। উঁচুর দিকে চলার পথে পাথর বেশি। মাটি কম অনেক জায়গাতেই। চলার সরু পথের উপরে গাছপালা ঝেঁপে এসেছে। চলতে চলতে মনে হচ্ছিল, পাঁচ মিনিটটা কথার কথা। হাঁফ ধরে গিয়েছে আমাদের। ভবতারণবাবু আমাদের লজ্জা দিচ্ছেন।

ঝরনার আগে সেই গুহার মতো জায়গাটি।

অবশেষে ওঠা শেষ হল। ভবতারণবাবু থামিয়ে দিলেন। চুপ করে দাঁড়াতেই কানে এল জলধারার শব্দ। জঙ্গলে ঢাকা নীচের কোনও স্থান দিয়ে বয়ে চলেছে সে। দেখা যাচ্ছে না। আরও কিছুটা এগোতে একটা সুড়ঙ্গের মতো জায়গা। দু’পাশে পাথরের চাঁই, গাছপালা মিলে গুহার বা সুড়ঙ্গের মতো তৈরি করেছে জায়গাটা। সুড়ঙ্গ পেরোতেই দেখা মিলল আমাদের অভীষ্টের। সে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘তরলিত চন্দ্রিকা’ নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কলধৌত প্রবাহ’। নিস্তব্ধ বনরাজির মাঝে উপলপথে আপন ছন্দে, শব্দে বয়ে চলেছে। পাথরের ধাপে ধাপে নামতে নামতে জলধারা নীচে জঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো অদেখা কোনও পথে গিয়ে পড়ছে নোড়াহারা জলাধারেই। উপরের দিকেও প্রবাহের উৎস মুখ দেখা যাচ্ছে না। জঙ্গলে ঢাকা ওইদিকটাও।

নরহরা ঝরনা ।

নির্জন বনস্থলীতে আপন মনে কত যুগ ধরে বয়ে চলেছে জলধারাটি। তখন হয়তো তার চলার পথে আরও বড় বড় পাথরের বাধা ছিল। অবিরাম চলতে চলতে বাধা ক্ষইয়ে, সরিয়ে নিজের পথ করে নিয়েছে। প্রবাহের কলেবর বাড়িয়েছে। তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পরিবেশ। জীববিজ্ঞানের ভাষায় বাস্তুতন্ত্র। এমন জায়গাই দু’দণ্ড শান্তি দেয়। আমরা মুগ্ধ। মুগ্ধতা থেকেই নিজের শরীরের ভার অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়লাম আমরা। ইন্দ্র ‘খাতে পিতে ঘর কা’। ও রইল উপরের দিকে। আমি উপাধিপ্রাপ্ত বুড়ো। শরীরও ভারী হয়েছে। রইলাম মাঝামাঝি জায়গায়। বাবলা নওজওয়ান। তার উপরে খেলাধুলো করে। ও তরতরিয়ে নেমে গেল অনেকটা নীচে। আমিই আর যেতে বারণ করলাম। ভেজা পাথরে পা হড়কালে কুড়িয়ে আনায় সমস্যা হবে ছোটা ডনকে।

আমাদের পথপ্রদর্শক ভবতারণবাবু।

বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম। দেখছিলাম, কথা বলছিলাম, উপভোগ করছিলাম। জায়গাটি নির্জন। কিন্তু জনমানবহীন নয়। ঝরনাটা যেদিক থেকে নেমে এসেছে সেই দিকের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল দু’জনকে। মাথায় ডালপালার বোঝা। জ্বালানি সংগ্রহ করে ফিরছেন। ভবতারণবাবুও আসার সময়ে বলছিলেন, তাঁরা জঙ্গলে ঢোকেন নানা কাজে।

নরহরি ঠাকুরের থান।

এবার ফেরার পালা। উঠতে শুরু করলাম সকলে। এ ঝরনার কোনও নাম নেই? ভবতারণবাবু জানালেন, নরহরা। ঢোকার সময়ে সেই গুহার মতো জায়গাটা পার করে একটা বিশাল পাথরের চাঁই দেখিয়ে বলেছিলেন, সেটি নরহরি ঠাকুরের থান। আগে নাকি নরবলি হত। এখন পায়রা, মুরগি ইত্যাদি বলি দেওয়া হয়। নরহরি ঠাকুরের নামেই ঝরনার নাম। এই পাহাড়ের চারপাশে আরও পাহাড় রয়েছে। সেগুলোর নাম কী? পথপ্রদর্শক জানালেন, গুরুঠাকুর, মাথানি, চুটাবুরু আর দেউলিয়া। কোনটা কার নাম সেই বর্ণনা দেওয়া মুশকিল। এতদিনে ভুলেও গিয়েছি।

পাহাড় থেকে নামতে নামতে আরও অনেক কথা হয়েছিল ভবতারণবাবুর সঙ্গে। পাহাড়, গাছপালা, এলাকাবাসীর জীবন নিয়ে। কথা বলতে বলতে এসে গেলাম সেই জায়গায়। বধূটি তখনও বিড়ি বেঁধে চলেছেন। আরও এক বৃদ্ধ এসেছেন গরু নিয়ে। ভবতারণবাবু বিদায় জানালেন আমাদের। এবার আমরা নেমে যেতে পারব।

ঝরনাটা বয়ে এসেছে এই দিক থেকেই।

নরহরা ঝরনার অপরূপ রূপ, পাহাড়, জঙ্গল, অরণ্যবাসী জীবনের খণ্ডচিত্র চড়াইয়ের ধাপে ধাপে রাখতে রাখতে নামছিল তিনজনে।

ছবি— ইন্দ্র, বাবলা

কভারের ছবি— নোড়াহারা জলাধার

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *