পাহাড়িয়া বাঁশি

সিলেরি আর লেপচা রাজার ভূত

দেবমাল্য চক্রবর্তী

এমনিতে বেড়াতে যাওয়া খুব একটা হয় না। বেড়াতে যাওয়ার কথাই শুধু ভাবা। ভাবতে তো আর পয়সা লাগে না। ছুটি লাগে। সেটা পাওয়াও যায়। কিন্তু তার আগে ল্যাদ নামক একটা বস্তুর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়, ‘ভ্যাই ল্যাদ, তাহলে যাই?’, এরকম আর কী! ব্যাটা পারমিশন দিলও। ভাবতাম, আমাকে দেবে না। কিন্তু দিল!

বাচ্চা বয়সে কোন এক শুশুনিয়া পাহাড়ে উঠেছিলাম বটে। কিন্তু সেই স্মৃতি যেন ব্যাঙ্কের লকারে চলে গিয়েছে। আছে জানি, কিন্তু মনে পড়ে না কিছুতেই! অতএব আবার একখানা স্মৃতি জোগাড় করার জন্য সিকিমের উদ্দেশে রওনা দিলাম। ইস্ট সিকিম। যে সিকিমের মানচিত্রটাই জানে না, তার কাছে কী বা ইস্ট, কী বা ওয়েস্ট! লোকেরা বলল যখন, তখন মেনেই নিলাম।

একটা দলও হল। পাঁচজনের। একজন কলেজের বন্ধু। দু’জন দাদাস্থানীয় মেসের বন্ধু। আরেকজন এসে জুটে পড়ল। তার বাবা-মা গত হয়েছেন। সে একাই থাকে। তার একটা ক্যামেরা দেখে চোখটা জ্বলজ্বল করে উঠল। যাক, ছবি মিস্ হবে না। কিন্তু সেই ক্যামেরাকুমারের গল্প একটু পরে বলছি। আমার কলেজের বন্ধুটির কথা একটু বলেনি। যে দার্জিলিং মেলে চাপার সময় থেকেই বলতে থাকে, ‘সাত জন্মের স্বপ্ন! রাতের বেলার ফরাক্কা ব্রিজটা দেখতেই হবে ভাই।’ আজকাল ভাই শব্দটা কার্যত অশ্লীলতার পর্যায়ে গিয়েছে যদিও। সে আবার আপার বার্থেও উইন্ডো সিট খোঁজে! মেসের বাকি যে দু’জনের কথা বললাম, তারা আমার চেয়ে বয়সে একটু বড়। একজনের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। বড় ব্যাঙ্কে বড় চাকরি করে। ফ্যামিলির সঙ্গে বেরিয়ে বোর হয়ে যাওয়ায় আমাদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল সে। আমরা তত্কালীন কোটায় নিয়ে নিয়েছিলাম। যতই হোক বয়সে বড়দের অভিজ্ঞতার তো একটা দাম আছে! সেটা যখন বিনি পয়সায় আসছে, কেউ ছাড়ে নাকি!

দার্জিলিং মেলে আমাদের কেউই ফরাক্কা ব্রিজ দেখতে পাইনি। ঘুমে অচেতন ছিলাম বলেই হয়তো। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখলাম উঁচু-নিচু চা-বাগান। এখান থেকে আমি আর সঙ্গীদের বর্ণনা দেব না। আমি যা যা দেখলাম, সেটাই বলার চেষ্টা করব। প্রয়োজনে তারা এসে পড়লে, আসবে ক্ষণ! চা-বাগান ‘চামেলি মেমসাহেব’এ আমি প্রথমবার দেখেছিলাম। মা দেখছিল, পাশে বসে দেখে নিয়েছিলাম। সে-ও আবার প্রাক্তন স্মৃতির কথা। ছাড়াছাড়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবার মনে পড়ে গেল। চা-বাগান দেখতে দেখতে সামান্য আবছা পাহাড় চোখে পড়ল। বুঝতে পারলাম পাহাড়ে উঠছি। এবং আরও পড়ে বুঝতে পারলাম, ওটা পাহাড় নয় পর্বতমালা। চোখে ধাঁধা।

ট্রেনের স্লিপার ক্লাসে আমার ঘুম হয়নি। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন বস্তায় পুরে পাহাড় থেকে গড়িয়ে দিয়েছে! তবে দার্জিলিং মেল তো! এলিট বস্তা! অতএব ঘুমভাঙা মাত্র হৃত স্ফুর্তির পুনরুদ্ধার হল! চা-বিস্কুট-মিনারেল ওয়াটার— সব খেতে খেতে ট্রেন শিডিউল্‌ড টাইমেই নিউ জলপাইগুড়ে ঢুকল।

নতুন কেনা রুকস্যাক নিয়ে নেমে পড়লাম। নেমেই ইঞ্জিনের কাছে গিয়ে দুম করে একখানা সেলফি! সেটা নিয়েই আমরা ফোন করলাম প্রেমা শেরপা’কে।

অনেকদিন আগে থেকেই মনে হচ্ছিল, এরাই কি সেই এভারেস্টজয়ী এডমন্ড হিলারিদের রাস্তাদেখানো লোকগুলোর বংশধর। যবে থেকে থেকে সাধারণজ্ঞানের বই পড়তে শুরু করেছি, তবে থেকেই তো শেরপা মানে আলাদা রোমাঞ্চ! তবে শেরপা আমাদের নিতে এলেন না। এলেন তাঁরই এক পরিচিত। টাটা সুমো নিয়ে। যদিও কথা ছিল পুরো ট্যুরই হবে টোয়োটা ইনোভা কিংবা টাটা সাফারিতে। তবে এতদূর এসে তো আর সুমোর সঙ্গে লড়া যায় না। যদিও সেটা জাপানি সুমো নয়, দেশি!

গাড়িতে উঠতেই খিস্তি বন্ধ। সেলফি শুরু। আমিই একমাত্র যে কখনও কোনও পাহাড়ে বেড়াতে যায়নি। অতএব আমার উত্সাহ সবচেয়ে বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এনজেপি’র রাস্তা ধরে সেবক রোড। সেই রাস্তা ধরে তিস্তার ধারা। আবার রোমাঞ্চ। এই প্রথম তিস্তা দেখছি কিনা! একের পর এক তিস্তা জলবিদ্যুত্ প্রকল্প, লোহায় বাঁধা পুলগুলো পার হচ্ছি। হঠাৎ বজরঙ্গবলীদের হামলা। পাহাড়ি রাস্তায় ডানদিকে নিস্তব্ধতা, বাঁদিকে বাঁদরের বিকট চিৎকার। মম্দ লাগছিল না। শুধু ভয় করছিল, বাইচান্স যদি কোনও একটা গাড়ির তলায় চাপা পড়ে। পড়েনি যদিও! পাকদণ্ডী যতই উপরে উঠছে মনে হচ্ছে, আরও উঁচুতে, আরও উঁচুতে যাই। এদিকে চিপ্‌স, বাদাম, বিস্কুটের বিশাল ভাণ্ডার শেষ। খেতে হবে। ওদিকে আমাদের নতুন বন্ধুটি, যাকে ক্যামেরাকুমার আখ্যা দিলাম, সে ব্যাটা ক্লিক করেই চলেছে। কিন্তু সে ক্লিক যে কী অপগণ্ড, আর্বাচীন ক্লিক সেটা অবশ্য বোঝা গিয়েছিল ট্যুর শেষ হওয়ার পর। যখন সে অফিসে প্রায় আট জিবি ছবি দিয়ে গেল, তখন। যার মধ্যে মেরেকেটে দেড় জিবি বোধহয় কাজে লেগেছে লোকজনের! বাকিটা শুধুই ঝাপসা কীসব!

আমাদের রুট ছিল ক্যালিম্পং হয়ে সিলেরি গাঁও। সেখান থেকে পেডংয়ের রাস্তা দিয়ে আরিটার লেক যাওয়া। তারপর পদমচিহ্ন বলে একটা পাহাড়ি গ্রামে যাওয়া। আরও উঁচুতে উঠে ওল্ড সিল্ক রুট হয়ে ইয়ুংথাং। সেখান থেকে নাথাং ভ্যালি, কুপুপ। তারপর গ্যাংটক।

আমাদের প্রথম হোম স্টে সিলেরি গাঁও পৌছলাম প্রথম দিন। ক্যালিম্পং অবধি গিয়ে সুমো আমাদের ত্যাগ করল। অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন প্রেমাজি। সিলেরি গাঁও সোজা। হোম স্টে বুক করা ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়েও বিপত্তি। যেখানে আমাদের বলা হয়েছিল, সেখানে বুকিংই নেই। অগত্যা প্রেমার নির্দেশে অন্য একটি হোমস্টে। সেই প্রথম অনুভব করলাম ঠান্ডা কাকে বলে! পুজোর ঠিক পরেই যা ঠান্ডা পেলাম, মন্দ নয়। হিহি করে কাঁপছি। তার সঙ্গে মেঘ আর কুয়াশা। বাড়িতে ঢুকেই কোনও মতে হাত-পা ছড়িয়ে বসতেই সন্ধে নেমে এল। গরম জল পাওয়া গেল চাইতেই। চান-টান সেরে বেরিয়ে খেতে বসলাম। ওখানে সবকিছু রাখাই থাকে। নিজেদের সার্ভ করে নিতে হয় শুধু। সে এক জিভে জল আনা খাবার। কতটা যে খেয়েছিলাম মনে নেই। ভাত, ডাল, লোকাল সব্জি, ডিমের কারি আর পাঁপড়।

একটু বিশ্রাম নিয়েই আমরা তিনজন বেরোলাম ড্যামস্যাং ফোর্ট দেখতে। কোনও এক লেপচা রাজার ভূত নাকি সেখানে এখনও ঘুরে-টুরে বেড়ায়। আমরা যদিও একটু গা-ছমছমে পরিবেশ পেয়েছিলাম। সঙ্গে কিছু অদ্ভুত পাখির ডাকও। পুরোটা যাইনি আমরা। ফিরে এসেছিলাম, রাস্তা পিচ্ছিল আর ঘনিয়ে আসা সন্ধের ভয়ে। নেমে আসতেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল যেন। ক্লান্তি কাটাতে হবে। বেরিয়ে পড়লাম রামের কাছে।

ওল্ড মঙ্ক সেখানে আড়াইশো এমএল কিংবা একশো এমএলের হিসেবেও মেলে! ঠিক যেমন দেখেছি, পাড়ার মুদির দোকানে আসা অপেক্ষাকৃত কম অবস্থাপন্ন বাড়ির কোনও সদস্যকে তেল চাইতে দেখে। পাহাড়ে আবার মাতৃতন্ত্র চলে। সবটা মেয়েরাই করেন। ছেলেরা সেখানে শুধু মদ-গাঁজা খায় আর জুয়ো খেলে। সে রকমই একজনকে ধরে ওল্ড মঙ্কের চাট হিসেবে পকোড়া বানিয়ে ফেললাম আমরা। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যাঙ্কার বয়োজ্যৈষ্ঠ দাদার অভিজ্ঞতা কাজে দিল। পার্টি হল ঘরোয়া মেজাজে। তারপর রাতে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। আগে থেকে বলে রাখলে বন-ফায়ারও হয়ে যেত। সেদিন রাতেই কথা হয়ে গিয়েছিল, সকালে উঠেই আমরা সুইসাইড পয়েন্টে যাব। গেলাম। ঠিক যেন মহাপ্রস্থানের পথে। একটা কুকুরও গেল আমাদের সঙ্গে। সেখানে পৌঁছে আমাদের ফোটোশ্যুট হল। স্মার্ট ফোন আর আনস্মার্ট ফোটোগ্রাফারদের দিয়ে।

সিলেরি গাঁও থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলাম আমরা। পাহাড়ি রাস্তায় আজব-অপূর্ব সব গাছগাছালি, পাতাবাহার। ফুল-ফল! যেন স্বর্গোদ্যান! সুইসাইড পয়েন্ট থেকে তিস্তাকে মনে হয় সরু সুতোর মতো। বেশিক্ষণ থাকার উপায় নেই। নীচে তো নামতেই হবে। নামলামও। নেমে গোছগাছ করে বেরিয়ে পড়লাম পেডং হয়ে আরিটারের দিকে।

আবার অন্য গাড়ি। এবার বোলেরো। যদিও সিলেরি গাঁও ঢোকার সময় যেটা পেয়েছিলাম, সেটা খানিকটা নারদের ঢেঁকির মতো! সবদিক খোলা….

লেপচা রাজার গড়, রামিতে পয়েন্টের কথা বলতে বলতে বোধহয় আগের পর্বটা ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফুরোয়নি আসলে। ফুরলে তো নটেগাছটিও বুড়িয়ে যেত। সব ‘সাইলেন্ট’ হয়ে যেত। হ্যাঁ, সাইলেন্ট শব্দটার অবতারণারও কারণ আছে বইকী।

সিলেরি থেকে লোকাল সব্জি আর লোকাল আটার লুচি খেয়ে যখন বেরচ্ছি পরের দিন সকালে, এক দাজু এসে হাজির। নামটা মনে নেই। দাজু মানে দাদা। পাহাড়ের মিষ্টি মানুষগুলোর তো বয়স বোঝা একটা বড় পরীক্ষা পাশ করার মতো। তাই দাজুই ভাল। উনি আমাদের গাড়িতে মালপত্র তুলে দিলেন। গাড়ি এসে গিয়েছিল সকাল ৯’টার মধ্যেই। পাংচুয়াল সিকিমিজ ড্রাইভার। সিলেরি গাঁও ছেড়ে যখন যাচ্ছি, একটা দু’ফুট লম্বা গঙ্গাফড়িং এসে হাজির। আজব বস্তু! ছবিও তুলে ফেললাম মোবাইলে। আসলে দাজু ইনসিস্ট করলেন, ‘দাদা, ইসকা ভি ফোটো লিজিয়ে না!’ হোম স্টে’র হোস্টদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চলে এলাম। যে লোকটা আগের দিন রাতে আমাদের অনুরোধে চিকেন পকোড়া বানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁকেও টা-টা করে এলাম। যে চিকেন পকোড়া চাঁদের আলো, লোডশেডিং, মোমবাতি এবং স্যাঁতস্যাঁতে ঘর এবং ‘বৃদ্ধ সাধু’র সঙ্গে আমাদের মনে একইভাবে নাচানাচি করবে আজীবন! যে দিদির হোম-স্টে’তে ছিলাম, তাঁর দুই মেয়ের সঙ্গে ছবিও তোলা হল। সিলেরি শেষ।

এবার আসা যাক সাইলেন্ট ব্যাপারটায়। আসলে প্রেমা শেরপা, যিনি আমাদের ট্যুর অপারেটর ছিলেন তিনিই এটা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সিলেরি গাঁও থেকে পেডং হয়ে আমাদের পরের ডেস্টিনেশন আরিতার। হঠাত্ ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিলেন একটা থমথমে জায়গায়। খানিকটা ভুতুড়ে, খানিকটা মায়াবী। বললেন, ‘আপ লোগ সাইলেন্ট ভ্যালি দেখ লিজিয়ে’। আমরা চোখ চাওয়াচাওয়ি করে ভাবছি, এটা সাইলেন্ট? এত পাখির কিচিরমিচির! আর সবচেয়ে ব়ড় কথা, এতো রাস্তার ধার! ভ্যালি কোথায়! কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘চলিয়ে দাদা, বহুত বড়িয়া থা!’ ড্রাইভার চললেন সুমো হাঁকিয়ে।

ধাপচাষ হচ্ছিল সেই সময়। এই প্রথম দেখলাম, পাহাড় কেটে কীভাবে ধানচাষ হচ্ছে। পেডং পেরিয়ে আমরা এলাম ঋষিখোলা নদীর উপর একটা ব্রিজে। সেটাই সিকিমের সীমান্ত। এতক্ষণ পশ্চিমবঙ্গ ছিল। এবার সিকিম। পূর্বদিকের সিকিম। ‘খোলা’ মানে নদী। ঋষিনদীর উপরেও হোম স্টে রয়েছে। সেখানেও থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। কিন্তু আমরা শুধু নদীটা দেখতে দেখতে চলে গেলাম আরিতারের উদ্দেশে।

ঘণ্টা তিনেকের পাহাড়ি পথে আরিতার। তার আগে প্রয়োজনীয় রেশন। মানে সিকিমের সস্তা অথচ বিদেশি তরল! শুনেছিলাম ডিউটি ফ্রি। শুল্ক-টুল্ক জানি না বাবা! লাগবে, তাই নিয়ে নিলাম। কিন্তু অবিশ্বাস্য কম দাম! দেখি হান্ড্রেড পাইপার্স, বৃদ্ধ সাধু এবং বাকিদের পটাপট তুলে আরিতারের হোটেলে ঢুকে পড়লাম। সিলেরি যতটা গ্রাম্য ছিল, আরিতার তুলনায় বেশ শহুরে। দোকানপাট, সাজসজ্জা সবকিছু মিলে। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরেই চলে গেলাম আরিতাম লেকে। চারিদিকে পাহাড়। মাঝখানে অমন অপরূপ একটা হ্রদ। অক্টোবরে গিয়েছিলাম, তাই জমে যায়নি লেক। আর মাস দুয়েক পরেই জমে যেত এটা হলফ করে বলা যায়। লেকের পাড়ে বাঁধানো রাস্তা। সাজানো পার্ক। ঘুরতে ঘুরতে একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। লেখা, ম্যাখিম পয়েন্ট টু কিলোমিটার। বুঝতে পারলাম, ট্রেক করে যেতে হবে। রেলিং দেওয়া রাস্তা রয়েছে যদিও। তবে শেওলাধরা রাস্তাটাও দেখতে হবে। সন্ধে নেমে এসেছিল বলে আর ভয়ে গেলাম না কেউই। একটু থেকে সোজা হোটেল।

পরের দিন ভোরে আমরা দু’জন বেরিয়ে পড়েছিলাম ম্যাখিম পয়েন্টে যাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে। লোভটা বেড়ে গেল পয়েন্টে ওঠার রাস্তাটা দেখে। স্থানীয়েরা বললেন, একটু উঠলেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। যদি মেঘ না থাকে তবেই। পাহাড়ি রাস্তা সিমেন্টে বাঁধানো হলে সেটা দিয়ে উঁচুতে ওঠা যে কী চাপ! তার উপর খাড়াই পথে দু’কিলোমিটার স্রেফ ছেলেখেলা ভেবে বেড়িয়ে পড়াও ঠিক হয়নি বোধহয়! উঠতে উঠতে টের পাচ্ছিলাম সেটা!

পুরোটা উঠতে ৪৫ মিনিট লাগল প্রায়। কিন্তু ওঠার পর যখন দূর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়াটা দেখতে পেলাম, প্রাণ জুড়িয়ে গেল। যে তিনজন যায়নি আমাদের সঙ্গে, তারা যে কী মিস্ করল বলে বোঝানো যাবে না। বুঝে দরকারও নেই। পা-পিছলাতে পিছলাতে উঠে পড়লাম আমরা। অবাক ভাগ্য! দেখি, সেখানে চায়ের দোকানটা সবে খুলছে। সে এক অপূর্ব চা! অত উঁচুতেও যে চা-পাতা ফোটে, জানা ছিল না!

নামার পথে পড়লাম মহাবিপদে! অন্য পথে নামতে গিয়ে প্রায় পথই হারিয়ে ফেলছিলাম। এদিকে ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে গলা! ওদিকে রাস্তা হাতড়াচ্ছি। ভাবছি, যদি পাইথম জড়িয়ে ধরে? যদি একটা লেপার্ড হানা দেয়? দেয়নি শেষমেশ! পরের ডেস্টিনেশন পদমচিহ্ন গ্রাম। যেখান থেকে ভুটান দেখা যায়।

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *