মুর্শিদাবাদ
ইতিহাস ছুঁয়ে বিশেষ ভ্রমণ

কাশিমবাজারের রাজাদের শ্রীপুর প্রাসাদে

ফারুক আব্দুল্লাহ

২০২২ সালের ১৭ অক্টোবরের কথা। হঠাৎ সকালে দেবারতির ফোন। এ কথা সে কথার মাঝে সে কাশিমবাজারের শ্রীপুর প্যালেস বা বড় রাজবাড়িতে কী ভাবে যাওয়া যায় জানতে চাইল। বহুদিন আগেও একবার রাজবাড়িতে গিয়েছিল। এবারে নিজের জন্য নয়, তাঁর পরিচিত বোন মনোসত্ত্বার আবদার পূরণের জন্য যেতে চায়। কাশিমবাজার বড় রাজবাড়ির বর্তমান অবস্থা করুণ। বাইরে থেকে রং করা আছে বটে কিন্তু ভেতরটা যেন হাহাকার করছে। দুঃখের বিষয়, জনসাধারণের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। ঢোকার অনুমতি পাওয়াটাও বেশ কঠিন। তবুও চেষ্টা করা। রাজবাড়ির ম্যানেজারবাবুর ফোন নম্বর ছিল। দেবারতিকে নম্বর দিয়ে বলেছিলাম, ‘‘তুমি চেষ্টা করে দেখো, অনুমতি পেলে আমিও একবার যেতে পারি তোমাদের সঙ্গে। আমার এই বাড়িতে খুব বেশি যাওয়া হয়নি।’’ দেবারতি ফোনে কথা বলে ঠিক অনুমতি আদায় করে ফেলেছে। ও পারবে সেই বিশ্বাস ছিল।

স্থির হয়, ২২ অক্টোবর যাত্রা হবে। দেবারতি বহরমপুরের মেয়ে। আকাশবাণীতে চাকরি করে। খুব ভাল গান গায়। ঘুরতে ভালবাসে। ইতিহাস ভালবাসে, লিখতেও। কোনও জরাজীর্ণ স্থাপত্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে। ভরপুর এনার্জি ওর মধ্যে। ইতিমধ্যেই লাবণী, পূজাকে অভিযানের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম। আমাদের অভিযান আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ডক্টর রাজর্ষি চক্রবর্তীবাবু এবং জিয়াগঞ্জ মিউজিয়ামের কিউরেটর মৌসুমীদি। লাবণী খুব গুণী। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী হলেও ইতিহাসেও তাঁর বেশ আগ্রহ। জেলার ইতিহাস নিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছে নানান পত্র পত্রিকায়। ওর কাশিমবাজারে আসার কয়েকটি কারণের মধ্যে রাজবাড়ি নিয়ে লেখাও একটি বড়ো কারণ। পূজাও গুণী মেয়ে। খুব ভাল লেখে। তবে ইতিহাস নিয়ে নয়, সমাজের নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক লেখা লিখতেই যেন পূজা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

কাশিমবাজার রাজবাড়ি।

আমাদের সাক্ষাৎ টাইম ছিল সকাল ৯টা। কিন্তু রাজবাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখি আমি প্রথমে পৌঁছেছি। বাকিরা তখনও রাস্তায়। দাঁড়িয়ে না থেকে রাজবাড়ির বাইরের দিকের নানান আঙ্গিকে ছবি তুলতে শুরু করলাম। রাজবাড়ির সামনের দিকটি খুব সুন্দর। বেশ কয়েকটি বড় বড় স্তম্ভ রয়েছে। বাইরের দিকের দেয়ালেও রয়েছে নানানা কারুকার্য। রাজবাড়ির প্রবেশপথে কাঠের তৈরি বড় দরজা। বোঝা যাচ্ছে, দরজার মাথায় এক সময় পঙ্ঘের সুন্দর কাজ করা ছিল। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে সেই সুন্দর কাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

সঙ্গীরা পৌঁছনোর ফাঁকে কাশিমবাজার রাজবাড়ির ইতিহাস শোনানো যাক। নবাবি আমলে বর্ধমান জেলার সিজলার কালীনাথ নন্দী কাশিমবাজারের শ্রীপুরে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম রাধাকৃষ্ণ নন্দী বাড়িতেই একটি মুদির দোকান খুলেছিলেন। পরে তাঁর পুত্র কৃষ্ণকান্ত রেশমের ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই তাঁর সঙ্গে তৎকালীন কাশিমবাজার কুঠির কর্মী ওয়ারেন হেস্টিংসের মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে সেই সময়ে ইংরেজদের সঙ্গে নবাবদের সম্পর্ক জটিল হচ্ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে। যার ফলশ্রুতিতে সিরাজউদ্দৌল্লা ১৭৫৬ সালে কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ করেন। সেখানকার বহু কর্মচারী নবাব বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। অনেকে কাশিমবাজার থেকে পালিয়ে যান। ওয়ারেন হেস্টিংসও নবাব বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। তিনি পুকুরে নেমে সারাদিন মাথায় কলসি দিয়ে ডুবে ছিলেন। সন্ধ্যা হতেই হেস্টিংস সোজা কৃষ্ণকান্তবাবুর বাড়ি গিয়ে তাঁর কাছে আশ্রয় চান। বন্ধুর বিপদে সাহায্য না করলে অধর্ম হবে, তাই ভীত সন্ত্রস্ত, ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ওয়ারেন হেস্টিংসকে তিনি আশ্রয় দেন। তবে সেদিন হেস্টিংসকে আপ্যায়ন করার মতো ভাল খাবার কান্ত মুদির বাড়ীতে ছিল না। ফলে পান্তাভাত আর চিংড়ি দিয়ে কান্ত মুদি অতিথি আপ্যায়ন করেন। কান্ত মুদির হেস্টিংসকে আশ্রয় দান এবং পান্তা ভাত ও চিংড়ি খাওয়ানোর ঘটনাটি সমাজে আলোড়ন ফেলেছিল। এই ঘটনাটি নিয়ে পরে জনপ্রিয় ছড়াও তৈরি হয়েছিল, ‘হেষ্টিংস্ সিরাজ ভয়ে হয়ে মহাভীত,/কাশিমবাজারে গিয়া হন উপনীত|/কোন স্থানে গিয়া আজ লইব আশ্রয়,/হেষ্টিংসের মনে এই নিদারুণ ভয়|/কান্ত মুদি ছিল তাঁর পূর্ব্বে পরিচিত,/তাঁহারি দোকানে গিয়া হন উপস্থিত|/নবাবের ভয়ে কান্ত নিজের ভবনে/সাহেবকে রেখে দেয় পরম গোপনে|/সিরাজের লোকে তাঁর করিল সন্ধান,/দেখিতে না পেয়ে শেষে করিল প্রস্থান|/মুশকিলে পড়িয়ে কান্ত করে হায় হায়,/হেষ্টিংসে কি খেতে দিয়া প্রাণ রাখা যায়?/ঘরে ছিল পান্তাভাত, আর চিংড়ি মাছ/কাঁচা লঙ্কা, বড়ি পোড়া, কাছে কলাগাছ|/কাটিয়া আনিল শীঘ্র কান্ত কলাপাত,/বিরাজ করিল তাহে পচা পান্তা ভাত|/পেটের জ্বালায় হায় হেষ্টিংস তখন/চব্য চুষ্য লেহ্য পেয় করেন ভোজন|/সূর্য্যোদয় হল আজ পশ্চিম গগনে,/হেষ্টিংস ডিনার খান কান্তের ভবনে’।

রাজবাড়ির অবস্থা

কান্তবাবু হেস্টিংসকে কয়েকদিন তাঁর বাড়িতেই লুকিয়ে রাখেন। নবাবের গুপ্তচর চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল। হেস্টিংসের পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। তাই কান্তবাবুও খুব বেশিদিন হেষ্টিংসকে লুকিয়ে রাখার সাহস পাননি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই কান্তবাবু হেস্টিংসকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। হেস্টিংস পালিয়ে বাঁচেন। পরে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়ে কান্ত মুদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনি তাঁকে বেশ কয়েকটি লাভজনক জমিদারি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেন। ওয়ারেন হেস্টিংস জোর করে কাশীর রাজা চৈত সিংকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কাশী অভিযানে গেলে কান্ত মুদিও বন্ধু হেস্টিংসের সঙ্গী হয়েছিলেন। পুরস্কার পেয়েছিলেন গাজিপুরের একটি জায়গির। হেস্টিংস রংপুর জেলার বাহারবন্দ পরগনাও রানি ভবানীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে মহারাজা লোকনাথ রায়কে বন্দোবস্ত করে দেন। সেই সঙ্গে তাঁর পুত্র লোকনাথের জন্য বাংলার নবাব নাজিমের কাছ থেকে ‘মহারাজা’ উপাধি এনে দিয়েছিলেন।

সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে এমন নির্মাণ।

হেস্টিংসের আদেশে ও গুডল্যাড সাহেবের সাহায্যে কান্তবাবু বাহারবন্দ পরগনা থেকে রাজস্ব আদায় করতে শুরু করেন। বাহারবন্দ পরগনা রানি ভবানীর হাতছাড়া হওয়ার সেই এলাকার মানুষ অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন। ভবানীর মতো একজন ব্রাহ্মণ-বিধবার সম্পত্তি বলপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে। কান্ত মুদি হেস্টিংসের সহায়তায় বিভিন্ন সম্পত্তি লাভে ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকেন। ১৭৭৮ সালে জগন্নাথ দর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে সেই বছরই মৃত্যুবরণ করেন। ছেলে লোকনাথ রায় বাহাদুর খুব বেশিদিন বাবার সম্পত্তি ভোগ করতে পারেননি। ১৮০৪ সালে একটি দুরারোগ্য রোগে তাঁর মৃত্যু হয়। লোকনাথের পুত্র এক বছরের শিশু হরিনাথ রায় রাজা হন। তাঁর বয়স অল্প হওয়ায় সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডস দেখাশোনা করত। লর্ড আমহার্স্ট হরিনাথকে ‘রাজা বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ১৮৩২ সালে রাজা হরিনাথ তাঁর স্ত্রী রানি হরসুন্দরী, নাবালক পুত্র কৃষ্ণনাথ রায় এবং গোবিন্দসুন্দরী নামে এক কন্যা রেখে মৃত্যুবরণ করেন। রাজা হন কৃষ্ণনাথ। তবে তিনি ১৮৩২-৪০ সাল পর্যন্ত কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনেই প্রতিপালিত হন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র কৃষ্ণনাথ ফারসি ও ইংরেজি ভাষা জানতেন। সরকার নিযুক্ত অভিভাবক উইলিয়াম স্টিফেন ল্যামব্রিক তাঁকে ইংরেজি, ইতিহাস, জ্যামিতি, ভূগোল, রসায়ন ও জ্যোতির্বিদ্যা শেখাতেন। সংস্কৃত কলেজের ছাত্র পণ্ডিত শিবপ্রসাদ তাঁকে সংস্কৃত ও বাংলা শেখাতেন। ১৮৩৬ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার অন্তর্গত ভাটাকুল গ্রামের এক তিলি সম্প্রদায়ের অতি দরিদ্র পরিবারের অপরূপ সুন্দরী স্বর্ণময়ীকে (পূর্বের নাম সারদা সুন্দরী) রাজা কৃষ্ণনাথ রায় বিয়ে করেন।

অপূর্ব নির্মাণকাজ।

পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত কৃষ্ণনাথ স্বাধীনচেতা ছিলেন। তাঁর এই মানসিকতা একটা সময় তাঁকে অবাধ্য করে তুলেছিল। সেই সঙ্গে অপব্যয়ের ফলে ঋণের পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পারিবারিক অশান্তিও শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এক অপবাদে আত্মসম্মান বজায় রাখতে আবেগ প্রবণ কৃষ্ণনাথ মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৮৪৪ সালের ৩০ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন। কৃষ্ণনাথ স্ত্রী স্বর্ণময়ী ও এক কন্যাকে রেখে যান। কন্যাটিও কিশোরী বয়সে মৃত্যুবরণ করে। নাবালক কৃষ্ণনাথের সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীন ছিল। বুদ্ধিমতী স্বর্ণময়ী বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী রায় রাজীবলোচনের সুপরামর্শে ও হরচন্দ্র লাহিড়ীর সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই নভেম্বর সম্পত্তি ফেরত পান। এর পর ছয়জন সদস্যের কমিটি গড়ে এবং সুপ্রসিদ্ধ উকিল বৈকুণ্ঠনাথ সেনের পরামর্শে স্বর্ণময়ী রাজকার্য পরিচালনা করতেন। স্বর্ণময়ী ছিলেন দানশীল। রাজবাড়ির চণ্ডীমণ্ডপ ও বিরাট নাটমন্দির তাঁর তৈরি। ১৮৭১ সালের ১১ অগস্ট স্বর্ণময়ী ‘মহারানি’ উপাধি পান। ১৮৭৮ সালের ১৪ অগস্ট জনহিতকর কাজে অসামান্য অবদানে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘ক্রাউন অব ইন্ডিয়া’ সম্মান দেয়।

আমার অভিযান সঙ্গীরা।

স্বর্ণময়ীর ১৮৯৭ সালের ২৫ অগস্ট প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভাগ্নে মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী মহারাজা হন। মুর্শিদাবাদ জেলা ছিল নবাব, রাজা, মহারাজা, জমিদার ও ধনী বণিকদের নগরী। তাঁদের ভিড়ে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন কাশিমবাজারের জমিদার রাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী। শিক্ষা দীক্ষায় কিম্বা দানশীলতায় তিনি ছিলেন বাকি সবার চেয়ে আলাদা। ‘দাতাকর্ণ’ নামে পরিচিত মণীন্দ্রচন্দ্র কাশিমবাজার রাজবাড়ির প্রধান প্রবেশপথের উপর লম্বা পিলারযুক্ত অংশটি তৈরি করেছিলেন। মণীন্দ্রচন্দ্র উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে। বাবা ছিলেন নবীনচন্দ্র নন্দী, মা ছিলেন রাজা কৃষ্ণনাথ রায়ের বোন গোবিন্দসুন্দরী। মণীন্দ্রচন্দ্র মাতৃহারা হন মাত্র দু’বছর বয়সে। পিতাকে হারান মাত্র দশ বছর বয়সে। অনাথ মণীন্দ্রচন্দ্র বাধ্য হয়েই মামা কৃষ্ণনাথের কাছে চলে আসেন। আবার ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে কৃষ্ণনাথ আত্মহত্যা করায়। রাজবাড়িতে তাঁর অবস্থা এতটাই বদলে যায় যে তিনি বাধ্য হন রাজবাড়ি ত্যাগ করতে। স্বর্ণময়ীর তত্ত্বাবধানে মণীন্দ্রচন্দ্র আবার ফিরে আসেন কাশিমবাজারে। অপুত্রক স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর পর জমিদারি এসে পড়ে স্বর্ণময়ীর ঠাকুরানি হরসুন্দরীর হাতে। কিন্তু তিনি কাশীতে চলে গেলে ১৮৯৮ সালের ৩০ মে একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে মণীন্দ্রচন্দ্রকে কাশিমবাজারের মহারাজা বাহাদুর ঘোষণা করা হয়। রাজা হওয়ার আগে পরাণ খানসামা নামে রাজবাড়ির এক কর্মচারী মণীন্দ্রচন্দ্রকে পছন্দ করত না। তার কারণেই মণীন্দ্রচন্দ্রের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু রাজা হওয়ার পর এই পরাণকেই তিনি রাজবাড়ির প্রধান খানসামা নিযুক্ত করেছিলেন।

বৈভবের চিহ্ন।

মণীন্দ্রচন্দ্র ইংরেজ অনুগত ছিলেন। কিন্তু ১৯০৫ সালের লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে বসেন তিনি। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে ১৯০৫ সালের ৭ অগস্ট কলকাতার টাউন হলে একটি বিরাট সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় মহারাজা জোরাল বক্তৃতা প্রদান করেন। কাশিমবাজার রাজ পরিবার যে বাংলা তথা ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য করেছিল সে কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন কলকাতায় টাউন হলের সেই ভাষণে। সভায় তিনিই ছিলেন সভাপতি। তিনি দেশবাসীকে আহ্বান করেছিলেন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য। তাঁরই আন্তরিকতায় ১৯০৭ সালের নভেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রচেষ্টায় বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন হয় কাশিমবাজার রাজবাড়িতেই। পরে মণীন্দ্রচন্দ্রের দানের জমিতে তাঁরই অর্থ সাহায্যে হালশিবাগানে (আপার সার্কুলার রোডের উপর) পরিষদের ভবন নির্মিত হয়। মণীন্দ্রচন্দ্র ১৯১৫ সালে ‘নাইটহুড’ পেয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ফেলোও ছিলেন। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯২৯ সালের ১২ নভেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর।

যেন খণ্ডহর।

মণীন্দ্রচন্দ্র ও মহারাণী কাশেশ্বরীর তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন মহারাজা শ্রীশচন্দ্র নন্দী। তাঁদের প্রথম সন্তান মহিমচন্দ্র নন্দী অল্প বয়সেই মারা যান। শ্রীশচন্দ্র নন্দী ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ.পাশ করেন। তিনিই ছিলেন কাশিমবাজারের শেষ মহারাজা। ১৯৩৬ সালে তিনি বাংলার নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করে এ কে ফজলুল হকের অবিভক্ত বাংলা সরকারের সেচ ও যোগাযোগ দফতরের মন্ত্রীও ছিলেন। প্রথমদিকে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও পরে কংগ্রেসে যোগদান করেন। শ্রীশচন্দ্রের পুত্র সোমেন্দ্রচন্দ্র কলকাতাবাসী।

সঙ্গীরা এক এক করে আসা শুরু করেছে। কিন্তু এই অভিযান যার আগ্রহে দেবারতির বোন সেই মনোসত্ত্বার তখনও দেখা নেই। ইতিমধ্যেই ম্যানেজারবাবু প্রাসাদের মূল প্রবেশদ্বার খুলে আমাদের ভিতরে ঢুকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। আমাদের অবস্থা বোধহয় ম্যানেজারবাবু বুঝতে পেরেছিলেন। দ্বিধা দেখে জানতে চাইলেন কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা। তাঁকে বলতে তিনি আশ্বস্ত করলেন। আমরা রাজবাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।

দুই বিদ্বান সঙ্গী।

ভেতরে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। প্রথমেই চোখে পড়ল রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর অল্প বয়সের বাঁধানো ছবি। যেন আমাদের স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর প্রাসাদে। পাশের এক দেওয়ালে পুরনো দিনের বন্ধ দেওয়াল ঘড়ি ঝুলছে। দরজা দিয়ে ঢুকতেই নতুন জগৎ উন্মুক্ত হয়ে গেল আমাদের সামনে। মাঝে ঘাসে ঢাকা বিস্তীর্ণ চত্ত্বর আর এই সবুজ চত্বরের চার পাশে সুন্দর কারুকার্য খচিত বেলে পাথরের স্তম্ভ বিশিষ্ট লম্বা বারান্দা। বারান্দার পাশে নানা আকারের অন্ধকার ও স্যাঁতসেঁতে ঘর। কোন ঘর কোন কাজে ব্যবহার করা হতো সেই তথ্য কেউ বলতে না পারলেও এটা জানা গেল যে, রাজবাড়ির নীচের তলায় জমিদারির দফতর ছিল। বারান্দার শুধু স্তম্ভই নয়, খিলানগুলিও অপূর্ব কারুকার্য খচিত। বেলে পাথরের স্তম্ভ, খিলান ও দেওয়ালে এলাহাবাদি শিল্পকর্মের নিদর্শন। যা হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ের সাক্ষী। কথিত, এই সব স্তম্ভ ও খিলান-সহ আরও অনেকে কিছু বেনারসের রাজা চৈত সিংয়ের ভাঙা প্রাসাদ থেকে রাজা কৃষ্ণকান্ত খুলে এনেছিলেন।

গতবার যখন এসেছিলাম তখন প্রাসাদের মূল ফটকের সামনের এই খোলা চত্ত্বরটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। কিন্তু এবার দেখলাম সেটি পরিষ্কার করা হয়েছে। এই খোলা সবুজ চত্বরের প্রায় মাঝ বরাবর একটি অচল ফোয়ারাও চোখে পড়ল। লম্বা বারান্দার একদিকে রয়েছে রাজা মণীন্দ্রচন্দ্রের বড় মূর্তি। ভেতরে গিয়ে আমরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিলাম নিজের মতো। ধীরে ধীরে আবার একসঙ্গে হলাম। রাজর্ষিবাবু ও মৌসুমীদি তখনও রাজবাড়ির ম্যানেজারবাবুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন দূরে বসে। আমাদের প্রাসাদে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মনোসত্ত্বা এসে যোগ দেয়।

সবাই ঘুরছি। রাজর্ষিবাবু ও মৌসুমীদি ম্যানেজারবাবুর সঙ্গে কথা শেষ করে আমাদের যোগ দিলেন। রাজর্ষিবাবু রাজবাড়ির বিভিন্ন ঘটনা বলে যাচ্ছিলেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। আসলে প্রাসাদের নীচের তলার বেলে পাথরের স্তম্ভ বিশিষ্ট চারদিকের বারান্দাগুলো এতই সুন্দর যে অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছেই করছিল না কারও। কিন্তু ঘুরতে এসেছি আমরা। তাছাড়া পুরো বাড়িটি ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য ম্যানেজারবাবু কয়েকজনকে আমাদের সঙ্গে দিয়েছেন। নীচের বিভিন্ন ঘরগুলো দ্রুত দেখে নিতে থাকলাম দল বেঁধেই। দেবারতিই সবার আগে চলছে। আমরা চলছি তাঁর পিছনে। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখি দেবারতি নেই। দেখি এক ভাঙা দরজার সংকীর্ণ পথ দিয়ে সে একটি জরাজীর্ণ ঘরে ঢুকে পড়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আরও কয়েকটি ঘর ঘুরে দেবারতি একটি অদ্ভুত ঘরের সন্ধান পায়। প্রথমে সেই ঘরে মনোসত্ত্বাকে নিয়ে ঢুকে পড়ে। ঘরটি দেখে মনে হল, সম্ভবত স্নান ঘর বা জল সংরক্ষণের ঘর হবে। ইটের তৈরি একটি বড় জলাধার আছে। সেখানে ওঠার একটি ভাঙা সিঁড়িও আছে। দেবারতি সেই অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে ঘরের সেই বিপদজনক সিঁড়ি ভেঙে জলাধারটি দেখতে উঠে পড়ে। পরে মনোসত্ত্বাও উঠল। ওদের দেখে আমিও।

খণ্ডহরেও রয়েছে কিছু সৌন্দর্য।

জলাধারটির চারদিক ঢাকা এবং মধ্যে একটি অন্ধকার মুখ রয়েছে। মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে সেই মুখটি দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আলো ভেতর পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। এতটাই অন্ধকার! দেখেই গাছমছম করছে। ঘরে যেন একটা পুরনো গুমোট গন্ধ ছড়িয়ে আছে। আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে রাজবাড়ির দোতলায় ওঠার জন্য এগিয়ে গেলাম। একটি লম্বা সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একপাশে পড়বে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউয়ের মন্দির। রাজবাড়ির লোকেরা মন্দিরের দরজা খুলে দিলেন। মন্দিরের দেওয়ালে পঙ্খের সুন্দর কাজ করা রয়েছে। যা মন্দিরের ঠিক সামনেই খোলা চত্ত্বর। উপরে মন্দির ছাড়াও রয়েছে আরও ঘর এবং লম্বা বারান্দা। কিন্তু জরাজীর্ণ বারান্দায় যাওয়ার কোনও উপায় নেই। যেহেতু মেঝেতেও ফাটল ধরছে তাই বারান্দায় যাওয়ার দরজা তালা দেওয়া। জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে সেখানকার ছবি তুললাম।

রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র।

ঘুরে ঘুরে আমরা সবাই বেশ ক্লান্ত। তাই মন্দিরের সামনের চত্বরে সবাই একটু জিরিয়ে নিতে বসে পড়লাম। দেবারতি খুব ভাল গান করে। ওকে অনুরোধ করলাম গাওয়ার জন্য। দেবারতি গাইল, ‘কা কারু সাজনি আয়ে না বালম…’। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। আমাদের অনুরোধে দেবারতি আরও দু’টি গান করে। গান শেষে গ্রুপ ছবি তুলে নীচে নামতে হবে। অনেক কিছুই দেখা বাকি। রাজর্ষিবাবু রাজবাড়ির অডিয়েন্স হলে যেতে (খুব সম্ভবত নাটমন্দির) চাইলেন। রাজবাড়ির তিন কর্মী আমাদের ভাঙা পথ ধরে নিয়ে গেলেন। রাজর্ষিবাবু জানালেন, ১৯০৭ সালে এখানেই বাংলার প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপত্বিতে।

এই প্রাদেশিক সম্মেলনে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের সাহিত্যিক-সহ বহু অভিজাত ব্যক্তি রাজবাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন। অতিথিদের কাশিমবাজার স্টেশন থেকে পাল্কি ও এক্কা গাড়িতে রাজবাড়িতে আনা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ স্বরচিত গান গেয়ে অতিথিদের আপ্লুত করেছিলেন। রাজপ্রসাদের আটটি ঘরে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। দুপুরের খাবারে নাকি ৬৪ রকমের পদের আয়োজন করা হয়েছিল। যে অনুষ্ঠান কক্ষ একদিন রবীন্দ্রনাথ-সহ খ্যাতনামা ব্যক্তিদের আলাপে মুখরিত হয়ে উঠেছিল আজ সেখানে শুধুই নিস্তব্ধতা। একটা বিষণ্ণতা ছেয়ে আছে অডিয়েন্স হলের সর্বত্রই।

অডিয়েন্স হল থেকে বেরিয়ে রাজপ্রাসাদের নীচের আরও কিছু কক্ষ দেখে ঢুকতে যাব রাজবাড়ির কর্মীরা বলে উঠলেন, ‘‘ওই দিকে যাবেন না, ছাদ ভেঙে পড়ছে, খুব রিস্ক হয়ে যাবে।’’ কিন্তু ঝুঁকিকে দেবারতি থোড়াই কেয়ার করে! সে ঢুকে গেল সেই ঘরে। আমিও বাধা মানি না। কিছুদিন আগে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ফেটে বেশ ভুগিয়েছে। ব্যথা ছিল তখনও। তাই দেবারতিকে অনুসরণ করতে ভয় হচ্ছিল। কিন্তু সুযোগ তো বার বার আসবে না। আমিও দেবারতির সঙ্গী হলাম। ভেতরে যেতেই রাজবাড়ির এক কর্মী এসে তাঁর জখম হাত দেখিয়ে বললেন, এই ঘরের তীরবর্গা তার হাতে ভেঙে পড়েই নাকি। ঘরে ঢুকেছি ঠিক আছে। কিন্তু ঘরের সিঁড়িতে যেন না চড়ি। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা ভদ্রলোককে কথাও দিলাম। ঘরের অবস্থা সত্যিই ভীষণ করুণ। ছাদের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। তীরবর্গা ঝুলছে। প্রথমে ভাঙা ঘরের বেশ কিছু ছবি তুললাম। তার পর দেখলাম দেবারতি ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। প্রথমে দেবারতিকে উঠতে নিষেধ করে আমিও তার পিছু নিলাম। এক অদ্ভুত নেশা কাজ করে এমন পুরনো বাড়িতে। কোনও বাধাই মন মানতে চায় না। উপরে উঠে দেবারতি সেই ভাঙা বারান্দায় এগিয়ে যাচ্ছে দেখে আমার ভয় হচ্ছিল। বারান্দাগুলি যে কোনও মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া অস্বাভাবিক কিছু না।

রাজবাড়ির অন্দরমহলের পরিধি বোঝা যায় এই অংশ থেকেই।

রাজবাড়ির করুণ দশা দেখে কষ্ট হচ্ছিল। গোলাবাড়ি, খাসবাড়ি, রাসবাড়ি, চুনগোদাম, ছুতোরখানা, শেলেখানা, কামারখানা, পিলখানা, তোষাখানা, ফরাসখানা, ভান্ডারখানা, আস্তাবল, গোশালা, গাড়িখানা, কেরনিখানা, অতিথি নিবাস, চিড়িয়াখানা আলাদা করে চেনার কোনো উপায় নেই। রাজবাড়ির কর্মচারীরাও সেগুলো চেনেন না বলে জানান। এক সময় রাজবাড়িতে বেশ কিছু বাগান ছিল। যেমন, গোলাপবাগান, সবজী বাগান, খেলার বাগান। কিন্তু আজ সেগুলোরও কোনও অস্তিত্ব নেই। কালের করাল গ্রাসে আজ সব কিছুই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

ভাঙা ঘরে রাজবাড়ির এক কর্মী আমাদের সিঁড়ির উপর দেখতে পেয়ে বলছেন, ‘‘আপনাদের কিছু হলে আমাদের দোষ হয়ে যাবে, আপনারা দয়া করে নেমে আসুন।’’ একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমরা নীচে নেমে এলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। কোথায় গেল বাকিরা? কিছুটা এগোতেই দেখলাম মৌসুমীদি মূল দরজার সামনে একটি চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিতে নিতে রাজবাড়ির এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন। দিদি তাঁর কিউরেটরের চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন সব কিছু। দিদির দৃষ্টির সঙ্গে আমাদের দৃষ্টি মিলবে না। আরও কিছুটা এগোতেই দেখি রাজর্ষিবাবু লাবণী, পূজা, মনোসত্ত্বাদের নিয়ে একটি ঘরে পুরনো আমলের দলিল দস্তাবেজ ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। আমি এবং দেবারতিও শেষ মুহূর্তে সেখানে গিয়ে কিছু কাগজপত্রের ছবি তুললাম।

সুন্দর লাগে এখনও।

এবার আমাদের বেরোতে হবে। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে। মৌসুমীদি ও দেবারতির ফেরার তাড়া ছিল। কিন্তু কারও বোধহয় মন চাইছে না এখান থেকে বেরোতে। আমাদের মনের অবস্থা দেখে রাজবাড়ির এক কর্মচারী বললেন, ‘‘এখন রাজবাড়ি পরিষ্কার করার কাজ চলছে। কয়েকমাস পরে আসুন তখন আরও ভাল লাগবে।’’ আমরা সেই ভদ্রলোকের কথায় সায় দিয়ে রাজবাড়ীর মূল প্রবেশপথ দিয়েই রাজবাড়ি থেকে প্রস্থান করলাম।

ছবি— লেখক

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *