খাদ্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

মিষ্টি পথে যেতে যেতে খেতে খেতে

দীপক দাস

একটা মিষ্টি মানচিত্র অনায়াসেই তৈরি করা যায়। কিংবা রেশম পথের মতো মিষ্টি-পথ! অন্তত হাওড়ার। যতদূর পর্যন্ত জিভের নাগালে এসেছে ততদূর পর্যন্ত করা যেতেই পারে। পথ চলা মসৃণ হলে মানচিত্র আপনই আন্ত:জেলা বা আন্ত:রাজ্যের রূপ পাবে।

শুরুটা হওয়া উচিত মূল শহর থেকে। কিন্তু শহরের দোকানে মিষ্টি বেশি খাইনি। বিশেষত্ব আছে এমন দোকানে তো নয়ই। বন্ধুবান্ধব-পরিচিতদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা অনায়াসে শহরের ভাল মিষ্টি ও মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানের সন্ধান দেবে। পরের মুখে ঝাল খাওয়াই বারণ। এই করোনার বাজারে পরের মুখে মিষ্টি খাওয়াটা স্বাস্থ্যসম্মত হবে না বোধহয়। ছোটবেলায় প্রশ্নপত্রের ‘যাহা জানো লিখো’র নির্দেশ মেনে চলাই ভাল।

অন্নপূর্ণার পান্তুয়া

গ্রামীণ হাওড়াই ধরলাম। মাকড়দহ থেকে শুরু। মাকড়দহ মোড়ে অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার। এই দোকানের দই খুব ভাল। বেশ নাম। ছোটখাট চেহারার দোকান। কিন্তু গুণমানে বেশ ভাল। এদের পান্তুয়ারও বেশ কদর রয়েছে। একই নামে খানতিনেক দোকান। মাকড়দহ মোড় ছাড়িয়ে কিছুটা গেলে আরেকটা দোকান। তৃতীয় দোকানটি রয়েছে ডোমজুড়ে। একই পরিবারের শাখা দোকানগুলোর মালিকেরা। প্রতিটি দোকানই মিষ্টির গুণমান বজায় রাখে। তবে আমার স্মৃতিকাতরতা দই নিয়েই। তখন নবম বা দশম শ্রেণিতে পড়ি বোধহয়। দশহরার দিনে দই চিড়ে দিয়ে ফলাহার করার রীতি। দই যখন খেতেই হবে তখন একটু ভাল দোকানে খাওয়া ভাল। এত বাস, অটো, টোটোর যুগ নয় সেটা। ট্রেনও চলত কম। সেই সময়ে, ওই বয়সে বড়গাছিয়া থেকে ডোমজুড় যাওয়াটা বেশ সাহসের ব্যাপারও ছিল। সেই কাজই করেছিলাম। বাবার সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে জানা গেল, আমার এবং আমার মেজো ভাইয়ের অন্নপ্রাশনের দই আনা হয়েছিল অন্নপূর্ণা থেকেই। এই রে! লেখার উপকরণ খুঁজতে গিয়ে অন্নপ্রাশনের দই উঠে এল যে! মাকড়দহ মোড়ের অন্নপূর্ণার দই-পান্তুয়া পরেও খেয়েছি। ‘যুগের খবর’এ কাজ করার সময়ে। সম্পাদক সমীরদার বাড়িতে যাতায়াতের পথে।

অন্নপূর্ণার দই।

১৪ অগস্ট একদিন দীপু আর আমি গিয়েছিলাম মাকড়দহ মোড়ের অন্নপূর্ণায়। দোকানে চাখলাম পান্তুয়া। বেশ ভাল খেতে। মানে সুনাম ধরে রেখেছেন দোকানের। বাড়িতে এনে স্বাদ নেওয়ার জন্য কেনা হল দই। সেই সময়ে দোকানে ছিলেন বর্তমান মালিক স্বপন ঘোষ। তিনি দোকানের পুরনো দিনের গল্প শোনালেন। চার পুরুষে পড়েছে তাঁদের দোকানের পথ চলা। দোকানের প্রতিষ্ঠাতা স্বপনবাবুর দাদু রজনীকান্ত। সেই সময়ে মাকড়দহের গায়ে শহরের কোনও ছাপ ছিল না। শেয়াল চরে বেড়াত। রজনীকান্ত একটা রেডিয়ো কিনেছিলেন। রেডিয়ো শোনার জন্য সন্ধ্যেবেলা দোকানের সামনে ভিড় করতেন এলাকার লোক। রজনীকান্তের পরে দোকানের ভার নেন তাঁর ছেলে অনন্তকুমার ঘোষ। অনন্তবাবুর দুই ছেলে স্বপন আর স্বরূপ। বর্তমানে দোকানে বসছেন স্বপনবাবুর ছেলে রাহুলও। দেখা হল তাঁর সঙ্গেও।

স্বপনবাবু জানালেন, তাঁর দোকানের মিষ্টি পছন্দ ছিল উত্তমকুমারের। তখন টালিগঞ্জে জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা সত্যনারায়ণ খাঁয়ের চণ্ডীমাতা ফিল্মসের রমরমা। চণ্ডীমাতা প্রযোজিত অনেক সিনেমায় মহানায়ক অভিনয় করেছেন। তিনি জগৎবল্লভপুরে শ্যুটিং করতে গেলে মাকড়দহের উপর দিয়েই যেতেন। গাড়ি থামিয়ে উত্তম কুমারের জন্য মিষ্টি নিতেন ইউনিটের লোকেরা। উত্তমকুমার কী ভাবে জানলেন এই দোকানের সুনামের কথা? স্বপনবাবুর কথায় কিছুটা অনুমান করা যায়। সত্যনারায়ণ খাঁয়ের স্ত্রী শোভারানি ছিলেন মাকড়দহের মেয়ে। শ্রীমানি পাড়ায় তাঁর বাড়ি। সত্যনারায়ণের সূত্রেই হয়তো মহানায়ক জেনেছিলেন অন্নপূর্ণার পান্তুয়া আর দইয়ের কথা। স্বপনবাবু দোকানের দই খাওয়ালেন। স্বাদ যথেষ্টই ভাল। তবে অন্নপ্রাশনের সময়ের দইয়ের সঙ্গে তুলনা করা মুশকিল। সে স্বাদ কি আর মনে আছে? এই দোকানের সঙ্গে তিন গায়কের যোগ আছে। সে কথা পরে হবে। ও হ্যাঁ, এই দোকানে এসেছিলেন ক্রিকেটার বিনোদ কাম্বলিও।

বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে। ছবিতে রয়েছেন স্বপনবাবুও।

ডোমজুড় যখন এসেই পড়েছি তখন দুলাল ঘোষের নাম নিতেই হবে। এঁদের দোকান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অনেকগুলো দোকান হাওড়া জুড়ে ছড়িয়ে। ডোমজুড়েও একটা দোকান আছে। দুলাল ঘোষের কথায় মনে পড়ল, শহরের মিষ্টি নিজের মুখেই খেয়েছি। এই দুলাল ঘোষের দোকান থেকেই। পঞ্চাননতলার কাছে একটা দোকান আছে। ওই দোকানে ‘যুগের খবর’এর প্রকাশক তুহিন একবার সন্দেশ খাইয়েছিল। উপাদেয়।

ডোমজুড়ের পরে বড়গাছিয়া। এখানে তিনটি দোকানের নাম বেশি। শ্রীহরি, যশোদা আর মহাপ্রভু। প্রত্যেকেই ভাল মিষ্টি তৈরি করেন। স্পেশাল বলতে মহাপ্রভুর দইয়ের নাম আছে বেশ। বড়গাছিয়া থেকে আরেকটু এগোলে মুন্সিরহাট। বিডিও অফিসের কাছে ফণী কুণ্ডুর দোকান। এলাকার রসিক মাত্রই জানেন এঁদের পান্তুয়ার কথা। সুস্বাদু। আকারও নজর ধরা। ভাল পান্তুয়ার যা লক্ষণ বলে বিবেচিত হয়, ছাল হবে শক্ত। কম আঁচে ভেজে লাল রং আনা পান্তুয়ার মতো থ্যাসথ্যাসে নয়। বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার খেয়েছি আমরা ফণী কুণ্ডুর পান্তুয়া।

ফণী কুণ্ডুর পান্তুয়া।

মুন্সিরহাট ছাড়ালে এবার অনেকটা যেতে হবে। সেই আমতা। এখানকার পান্তুয়া তো কিংবদন্তীর মতো। মূলত ভাল পান্তুয়ার গুণ কেমন তা আমতা বাজারের চরিতের দোকান থেকেই শিখেছিলাম। সাংবাদিকতার ঊষা লগ্নে তা শিখিয়েছিলেন দোকানের মালিক নারায়ণ চরিত ও বিকাশ চরিত। এঁদের পান্তুয়ার ছাল বেশ শক্ত। একটু কালচে ধরনের। মানে যথাযথ ভাজা। পান্তুয়া ভাঙলে দেখা যাবে ভিতরে জালি জালি। ভিতরটা সুন্দর ভাবে রসসিক্ত। কিন্তু রসের আলাদা উপস্থিতি বোঝা যায়। বিকাশবাবুরা বলেছিলেন, একসময়ে তাঁদের দোকানের মোদকদের তৈরি পান্তুয়া কানের কাছে নাড়ালে ভিতরে রসের ছলবল আওয়াজ শোনা যেত। আমতা বাজার থেকে কিছুটা দূরে বেতাই বন্দরে বেচু দেনের দোকানের পান্তুয়াও ভাল।

মুশকিল হল, মিষ্টি পথ আমতার বেশি আর এগোচ্ছে না। মালমশলা নেই। কী করা যায়? মুশকিল আসান হল দীপুবাবু। আমাদের মিস্টার ঘাসপুস। ও বলল, ‘‘চলো, মঙ্গলবারে বেরনো যাক। খুঁজে দেখা হবে।’’ প্রস্তাব মন্দ নয়। অতিমারিতে দু’বছর ধরে শরীরে চর্বির পাহাড়। মনে অবসাদের ভার। বেরোলে মন্দ লাগবে না। ওর প্রস্তাব হল, ‘‘বাগনানের দিকে চলো। ওদিকটা খোঁজা হয়নি।’’ যুগ যুগ ধরে এমনই হয়ে এসেছে। এক সাহসী পথে নামে। পরের সাহসী সেই পথ আরেকটু প্রসারিত করে। বা কখনও অন্য পথ আবিষ্কার করে। কলম্বাস, ম্যাগেলান, ওরেলানা, গঞ্জালো পিজারো। দীপু সেই ভূমিকা নিল। বেরিয়ে পড়া গেল বাগনানের দিকে।

ভাল পান্তুয়ার বৈশিষ্ট্য, ভিতরে এই রসের আধারটি তৈরি হওয়া। আমতার পান্তুয়ার কারিগরেরা এতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। যে জন্য চরিতরা বলেছিলেন, তাঁদের পান্তুয়া কানের কাছে ধরলে ছলবল করে আওয়াজ হয়। ছবি ফণী কুণ্ডুর পান্তুয়ার।

মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে বাগনান আর বামাচরণ সমার্থক। দোকানটা বেশ পছন্দ হল। পুরোপুরি পুরনো ছাঁদের দোকান। কড়ি, বরগার ছাঁদ। কাচ লাগানো কাঠের শোকেস। বেঞ্চের উপরে মিষ্টির নৌকা, নোনতার ঝুড়ি সাজানো। চৌকির মতো পাটার উপরে বসে মালিক দোকানদারি করছেন। মানে তবিল সামলাচ্ছেন। এমন দোকান মানেই ইতিহাসের সঙ্গী। সে ইতিহাস নিজের। আবার এলাকারও। দোকান সামলাচ্ছিলেন মানস চক্রবর্তী। তাঁদের পাঁচ ভাই এখন দোকান চালান। মানসবাবু জানালেন, বামাচরণ চক্রবর্তী হলেন তাঁদের দাদু। দোকানের প্রতিষ্ঠা ১৩১০ বঙ্গাব্দে। বামাচরণ কিন্তু প্রথমে মিষ্টির দোকান করেননি। তাঁর ছিল তেলেভাজার দোকান। চপ, বেগুনি ভাজার সঙ্গে দানাদার, সন্দেশ তৈরি করতেন। তেলেভাজার সঙ্গে মিষ্টিও লোকের পছন্দ হওয়ায় বামাচরণ ‘আইটেম’ বাড়াতে শুরু করেন। তার পর মিষ্টির দোকান খোলেন।

মানসবাবু জানালেন, বামাচরণ যখন দোকান চালু করেছিলেন তখন কিছুদিন হল বাগনান স্টেশন চালু হয়েছে। স্টেশন রোড তখনও তৈরি হয়নি। কাজ শুরু হয়েছিল। উইকিপিডিয়া বলছে, হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় রেল চলাচল শুরু হয়েছিল ১৯০০ সালে। আর বামাচরণের ১১৮ বছরের দোকান। ইংরেজি সাল ধরলে ১৯০২-০৩ সালে দোকান চালু হয়েছিল। বামাচরণের পরে দোকানের হাল ধরেন মানসবাবুদের বাবা কানাইলাল। দোকানের সুনাম বজায় রয়েছে তিন পুরুষ ধরে। দোকানের কোন কোন মিষ্টি ভাল? মানসবাবু জানালেন, তাঁরা সব মিষ্টিরই গুণমান বজায় রাখতে চেষ্টা করেন। প্রশ্ন পাল্টালাম। জানতে চাইলাম, কোন কোন মিষ্টি খদ্দের বেশি পছন্দ করেন? নাম আছে? মানসবাবু বললেন, ‘‘ছানার গজা আর ল্যাংচা।’’ এমন পছন্দের কারণ? ‘‘সেটা খদ্দেররাই বলতে পারবেন।’’ সংক্ষিপ্ত জবাব মানসবাবুর।

বামাচরণের দোকানের ল্যাংচা।

কথাটা ভাল লাগল। নিজের ঢাক পেটানোর যুগে জনমতের উপরে ভরসা রাখছেন! কিন্তু জনমত সংগ্রহ করা যায় কী করে? দোকানে খদ্দেরদের আনাগোনা লেগেই আছে। তাঁদের মধ্যে একজনকে পছন্দ হল। পঞ্চাশোর্ধ ক্রেতাটি নাম বললেন অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায়। একসময়ে বাগনানেরই বাসিন্দা ছিলেন। এখন রাজধানী নিবাসী। পিতৃভূমিতে এলে বামাচরণের মিষ্টি কলকাতায় নিয়ে যান। তাঁর কাছ থেকে কিছুটা ইতিহাসও মিলল। জানালেন, বামাচরণ যখন দোকান করেন তখন এলাকায় বেশ কিছু মিষ্টির দোকান ছিল। ইন্ডিয়া সুইটস, শ্রী গৌরাঙ্গ, সুইটস ইন্ডিয়া, বিশালাক্ষী মিষ্টান্ন ভান্ডার। সব দোকানই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গৌরাঙ্গ আবার চালু হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসা জমাতে পারেনি। বিশালাক্ষী শুধু নতুন করে চালু হয়েছে। এতগুলো দোকান বন্ধ হয়ে গেল কিন্তু বামাচরণ টিকে গেল কী ভাবে? অর্কপ্রভবাবু কোনও কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বাইকে উঠতে উঠতে একটা কথাই বললেন, ‘‘এঁদের ক্লাসই আলাদা।’’ এর থেকে বড় প্রশংসা আর কী হতে পারে!

বামাচরণের নাম জেলা ছাড়িয়েছে অনেকদিন। কিন্তু কী ভাবে? মানসবাবু জানালেন, এখানকার বহু লোক ভিন রাজ্যে কাজ করেন। জেলার বাইরেও কাজে যান। তাঁরা বাড়ি এলে ফেরার সময়ে মিষ্টি নিয়ে যান। ইতিহাস জানা হয়েছে। এবার স্বাদগ্রহণের ব্যবস্থা। দু’জনেই বাড়ির জন্য ছানার গজা আর ল্যাংচা নিলাম। কিন্তু মানসবাবু চেখে দেখতে বললেন। অনেকগুলো মিষ্টিই দিয়েছিলেন। মাত্র দু’টো রেখে সব ফেরত দেওয়া হল। একটা ছানার গজা, একটা ল্যাংচা। দু’জনে ভাগ করে খেলাম। লেখার জন্য বাড়িতে বসে স্বাদের অনুভব বাড়াতে হয়েছিল।

দোকানের কর্মীদের সঙ্গে মালিক মানসবাবু।

বিশেষত্ব কী বামাচরণের ছানার গজার? রং পুরোপুরি সাদা। গজার উপরে একটা চিনির আস্তরণ থাকে। মুখে দিলে সেই আস্তরণ গলে যায়। ছানার স্তরের সঙ্গে জিভের সংযোগ ঘটে। ছানার স্বাদে জারিত হয় জিভ। অন্য যে সব জায়গায় ছানার গজা খেয়েছি সেগুলোর রং সাদা নয়। ছানার স্বাদ আলাদা করে বোঝা যায় না। আমার সঙ্গে একমত দীপুও। ওর বয়ান, ‘‘বামাচরণের ছানার গজা মিষ্টি কিন্তু তীব্র নয়। ছানার ঘনত্ব অন্য দোকানের তুলনায় অনেক বেশি। গজার মধ্যের অংশটা জিভে বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করা যায়। বাইরের আবরণে চিনির প্রলেপ থাকলেও অন্য ছানার গজার মতো তীব্র মিষ্টির কিরকিরে অনুভূতিটা একেবারেই হয় না।’’ আমার মায়েরও পছন্দ হয়েছিল বামাচরণের ছানার গজা।

আর বামাচরণের ল্যাংচা নিয়ে দীপুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘বেশ অন্যরকম খেতে। অন্য দোকানের ল্যাংচায় ভিতরের অংশের পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না। ছানার পরিমাণ কম থাকায় জিভ শুধু রসের আস্বাদ পায়। বামাচরণের ল্যাংচা বোধহয় এখানেই অনন্য। ল্যাংচার ভিতরটা বেশ শাঁসালো। বাইরের আবরণী চুঁয়ে রস অল্প মিষ্টত্বের ছোঁয়া দেয়। শাঁসটা মুখের মধ্যে গিয়েই মিলিয়ে যায় না। বেশ কিছুক্ষণ তার অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়।’’ আমার আলাদা কিছু মত নেই। ল্যাংচার ছাল পুরু নয়। অন্য দোকানের আলাদা এখানেই।

ছানার গজা। বামাচরণ।

স্বাদগ্রহণের পরে গিয়েছিলাম দোকানের কারখানায়। সেখানে দেখা হল মানসবাবুদের বড়দা হারাধন চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসার হাল নিয়ে চিন্তিত। আলাপ হয়ে গিয়েছিল দোকানের কর্মীদের সঙ্গেও। তাঁরাও কিছু তথ্য দিলেন, তাঁদের ছানার গজা ৭ টাকা করে। কেজিতে নিলে ২০০ টাকা। ল্যাংচা একটা ৬ টাকা। ফিরে আসার আগে মানসবাবু একটা কথা বলেছিলেন, তাঁদের ইচ্ছে, দোকানের ভোল বদল করবেন। মানে আধুনিক কেতার শোকেস ইত্যাদি। শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তাঁরই বা কী করার আছে! প্রবাদেই তো বলেছে, ‘পহেলি দর্শনধারী, ফির গুণ বিচারি’। এ-ও তো জনমত।

বাগনানের আরও কিছু দোকানে ঘোরার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আমরা তো ভাল মিষ্টি খুঁজি না। বিশেষ মিষ্টি খুঁজি। দোকান যে মিষ্টির নামে পরিচিত হয়। অন্য দোকানগুলোর মিষ্টিও নিশ্চয় ভাল। জনমত তা-ই বলছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যপূরণ করছে না। রানিহাটির মোড়ের দোকানটি সম্পর্কেও একই মত। ঝাঁ চকচকে বড় দোকান। নানা রকমের মিষ্টি। ভিড় দেখলেই জনপ্রিয়তা বোঝা যায়। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বিশেষ কোনও মিষ্টি? এক কর্মী বললেন, ‘‘আমাদের সব মিষ্টিই ভাল।’’ ওই যে…।

ছবি— দীপশেখর দাস

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *