ইতিহাস ছুঁয়ে বিশেষ ভ্রমণ

নবাবদের স্মৃতির কলকাতার মুর্শিদাবাদ হাউসে একদিন

ফারুক আব্দুল্লাহ

বছর কয়েক আগের কথা। নবাবি ইতিহাসের নানান অজানা দিক খুঁজে পেতে মুর্শিদাবাদ শহরের আনাচেকানাচে ঘুরছি। ঘুরতে ঘুরতেই একদিন হঠাৎ আলাপ হল মুর্শিদাবাদের নিজামত পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য বাকের আলী মির্জার সঙ্গে। সেদিন আমাদের বিভিন্ন আলোচনার মাঝে হঠাৎ করেই উঠে আসে নবাবদের কলকাতার মুর্শিদাবাদ হাউসের কথা। ৮৫ পার্ক স্ট্রিটে অবস্থিত। শুধু বাকের আলী মির্জা একা নন, পরবর্তী সময়ে নিজামত পরিবারের আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যেমন বর্তমান মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর সৈয়দ মুহম্মদ আব্বাস আলী মির্জা থেকে শুরু করে আমীর মির্জা, রেজা আলী মির্জা, ডঃ রেজা আলী খানদের মতো প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি মুর্শিদাবাদ হাউস সম্পর্কে। তাঁদের প্রত্যেকেরই বহু স্মৃতি এই বাড়িতে। নিজামত পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের এই প্রাসাদের ইতিহাসও শুনেছি।

তখন ঊনবিংশ শতকের ছয়ের দশক। বাংলার মসনদে নবাব মনসুর আলি খান ফেরাদুন জা। তখন নবাবদের সুবাদারির অধিকার বজায় ছিল। কিন্তু দেওয়ানির দায়িত্ব ছিল ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। কোম্পানিই যেহেতু নবাবের প্রাপ্য বেতন-সহ সমগ্র নিজামত পরিবারের সদস্যদের ভাতা প্রদান করত, তাই সকলের অর্থভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করত কোম্পানির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরেই। কারণ কোম্পানি নানান বাহানায় বেতন ও ভাতা কমিয়ে দিতে পারত। তেমনটা তারা করতও।

ঢোকার মুখে।

কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ছিল কলকাতায়। তাই নবাব-সহ নিজামত পরিবারের সদস্যদের নানান কাজে প্রায় কলকাতা যেতে হতো। কিন্ত এক সময় কলকাতায় তাঁদের থাকার জায়গার অভাব দেখা দিতে থাকে। যদিও নবাবদের কয়েকটি প্রাসাদ তখনও কলকাতায় ছিল। কিন্তু সেগুলির অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। ফলে নবাব জননী রাইস উন নিসা বেগম প্রথম উপলব্ধি করেন যে, কলকাতায় নিজামত পরিবারের সদস্যদের থাকার জন্য একটি ভাল প্রাসাদের খুব প্রয়োজন। তিনি কলকাতায় প্রাসাদ তৈরির পরিকল্পনা করতে থাকেন। এর মধ্যেই বেগমের কাছে খবর আসে, কলকাতার ৮৫ পার্ক স্ট্রিটে এক ইংরেজ সাহেবের খুব ভাল একটি প্রাসাদ-সম বিরাট বাড়ি বিক্রি আছে। এই খবর পেয়েই বেগম লোক পাঠান সেই প্রাসাদ পরিদর্শনে। সব কিছু পছন্দ মতো হাওয়ায় শেষপর্যন্ত বেগম সেই প্রাসাদ কিনে নেন। তখন থেকেই এই প্রাসাদ মুর্শিদাবাদ নিজামত পরিবারের সদস্যদের কলকাতার আবাসস্থল হয়ে ওঠে।

প্রাসাদের গরিমার অবশেষ।

সব কিছু বেশ ভালই ছিল। কিন্তু বিংশ শতকের প্রায় তিনের দশকের শেষের দিকে কোনও এক আর্থিক বিড়ম্বনায় জড়িয়ে নবাব ওয়াসিফ আলী মির্জা মুর্শিদাবাদ ছেড়ে কলকাতার মুর্শিদাবাদ হাউসে গিয়ে ওঠেন। এবং ক্ষমতার বলে প্রাসাদটি তিনি এক প্রকার দখল করে নেন। প্রাসাদের কিছু সংস্কার করে নিজের বসবাসের উপযোগী করে তোলেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র নবাব ওয়ারিশ আলী মির্জাও এই বাড়িতেই বসবাস করেছেন। বর্তমানে মুর্শিদাবাদের নবাবদের বংশধর ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন এই বাড়িতে বসবাস করছেন।

খণ্ডহরের মতো।

মুর্শিদাবাদ হাউসের নাম শোনার পর থেকেই এই  প্রাসাদ দেখার ইচ্ছেটা বেশ প্রবল হচ্ছিল। আমি যেদিন বাকের আলী মির্জা সাহেবের কাছে এই প্রাসাদের কথা প্রথম শুনেছিলাম, সেদিন বাড়ি এসে আগে গুগল সার্চ করেছিলাম। কিন্ত ২০১৬ সালে এই প্রাসাদের তেমন কোনও তথ্য আমি খুঁজে পাইনি। এমনকি ‘মুর্শিদাবাদ হাউস, কলকাতা’ লিখে গুগল ম্যাপে সার্চ করেও সেদিন ব্যর্থ হতে হয়েছিল। একপ্রকার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এভাবেই কয়েক বছর পার করে একদিন কোনও এক কারণে হঠাৎ করেই মুর্শিদাবাদ হাউসের প্রতি পুনরায় টান অনুভব করতে থাকি। কিন্তু এবারেও লোকেশন খুঁজে পাচ্ছি না কিছুতেই। এর মধ্যে দীপদাকে (রেডিও জকি) মুর্শিদাবাদ হাউস নিয়ে আমার আগ্রহের কথা জানাই। দীপদা হাউস নিয়ে ইতিপূর্বে একটা ম্যাগাজিনে লিখেছে। সে লেখা পড়ে আমি আরও উৎসাহিত হয়েছি। একদিন দীপদার কাছেই সেখানে যাওয়ার উপায় জানতে চেয়ে ফোন করলাম। দাদা আমাকে ফোনে মুর্শিদাবাদ হাউসের লোকেশন এবং সেখানে যাওয়ার সমস্ত উপায় বলে দিল। শুধু তাই নয় আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মুর্শিদাবাদ হাউসের লোকেশন লিংকও পাঠিয়ে দিল।

খুররম স্যারের সঙ্গে।

কিন্তু সেবার কলকাতায় বেশ কিছু দিন থাকলেও আমার মুর্শিদাবাদ হাউসে যাওয়া হল না কিছু ব্যক্তিগত কারণে। এভাবেই পার হয়ে গেল ২০১৯ সাল। এর মধ্যেই আমার পরিচয় হয়েছে কলকাতার এক উর্দুভাষী প্রকাশক ও শিক্ষক খুররম আজমীর সঙ্গে। তিনিও ভীষণ ইতিহাস পাগল মানুষ। ওঁর মতো উদার মানুষ এই যুগে সত্যিই বিরল। এর মধ্যেই ২০২০ পরতেই ১লা ফেব্রুয়ারি হাজির হলাম কলকাতায়। পরের দিন অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদ হাউস যাওয়ার একটা পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কোনও একটা প্রয়োজনে সেদিন খুররম স্যারকে ফোন করি। ফোনে উনি মুর্শিদাবাদ হাউস যাওয়ার কথা শুনে জানালেন তিনিও আমার সঙ্গে আগামী কাল যেতে চান সেখানে। কারণ তিনিও মুর্শিদাবাদের নবাবি ইতিহাসের প্রতি ভীষণ ভাবে আগ্রহী।

নবাবিয়ানার চিহ্ন।

খুররম স্যার আমার সঙ্গে যেতে চাইছেন জেনে আমারও খুব ভাল লাগল। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে বহু ক্ষেত্রসমীক্ষা করার অভিজ্ঞতা থাকলেও কলকাতার বুকে এই প্রথম। একজন কলকাতার বাসিন্দা থাকলে মন্দ হবে কেন? ঠিক হল, পরের দিন দুপুরবেলায় আমরা গন্তব্যে যাব। খুররম স্যারের সকালে স্কুল থাকে। পরের দিন দুপুরে যাওয়ার কথা থাকলেও আমি হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ি প্রায় সকাল ১০টা নাগাদ। আমার আরও কিছু কাজ ছিল। সেগুলি সেরে নিতেই দুপুর হয়ে গেল। স্যারকে ফোন করলাম। স্যার জানালেন তিনি বেরিয়ে পড়েছেন। আমার অবস্থান জানতে চাইলে, আমি জানালাম পার্ক সার্কাসে আছি। উনি আমাকে বললেন আমি যেন পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্ট ক্রসিংয়ে দাঁড়াই। উনি কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে যাবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখি খুররম স্যার এসে হাজির হলেন। মুখে স্মিত হাসি, গাড়ি থামিয়ে একটি হেলমেট বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি সেটি মাথায় চাপিয়ে স্কুটারে চেপে বসলাম। মহানগরীর ভিড় রাস্তা পেরিয়ে আমরা এগোতে থাকলাম মুর্শিদাবাদের নবাবদের শেষ আস্তানার দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর এসে উপস্থিত হলাম আমার বহু কাঙ্ক্ষিত সেই মুর্শিদাবাদ হাউসের সামনে।

এখন এমন।

আগেই প্রাসাদ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম মুর্শিদাবাদে বসেই। সেই তথ্যর সঙ্গে সব কিছুই মিলে যাচ্ছিল। প্রাসাদে প্রবেশের ও প্রস্থানের দু’টি বিরাট লোহার গেট ছিল। আজও আছে সেগুলো। কিন্তু তার সেই জৌলুশ আর নেই। আজ নবাব তাঁর মোটর গাড়ি চড়ে এই লোহার গেট অতিক্রম করেন না। এক সময় এই গেটে যে কঠোর প্রহরীরা থাকত যাদের অমান্য করে কেউ প্রাসাদ চত্বরে প্রবেশ করতে পারত না। আজ সবই অতীত। সেই সময়ে মুর্শিদাবাদ হাউসের সামনে দিয়ে কোনও গাড়ি গেলে হর্ন বাজাতে পারত না। নিষিদ্ধ ছিল।

চেহারায় প্রাসাদের ছাপ এখনও বর্তমান।

আমরা সেই মরচে ধরা লোহার গেট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমেই আমাদের চোখে পড়ল বিরাট আকারের জরাজীর্ণ মুর্শিদাবাদ হাউস দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদের সামনে রয়েছে একটি বিরাট খোলা চত্বর। এখন তা গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে পরিণত হলেও এটি এক সময় নবাবদের উদ্যান ছিল। নবাব ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখানে বিকেল বেলায় সময় কাটাতেন। এবার ভেতরে প্রবেশের পালা। দেখলাম প্রাসাদের নীচের তলার বিভিন্ন অংশে বহু সাধারণ পরিবার কোনওক্রমে তাঁদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করছেন। তাঁদেরই একজনকে ডেকে আফশানা মির্জার কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি আমাদের দেখিয়ে দিলেন ওপরে যাওয়ার রাস্তা।

প্রাসাদের আরেকটি দিক।

আমরা কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখা মিলল দোতলায় ওঠার নকশা করা কাঠের সিঁড়ি। কিন্ত চারিদিক স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার হয়ে আছে। কেমন যেন একটা গা ছমছমে ভাব। আমরা সেই অন্ধকার হাতড়ে সিঁড়িতে ওঠা শুরু করলাম। এর মধ্যেই দেখি খুররম স্যার তার মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়েছেন। এদিকে আমরা যতই ওপরের দিকে উঠছি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। প্রাসাদটি পুরনো ও জরাজীর্ণ হলেও দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রাসাদের অতীত গরিমার কথা। প্রাসাদের সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় বারবার প্রাসাদটিকে বড্ড চেনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু এর কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল, মুর্শিদাবাদ হাউসের দোতলা অনেকটাই যেন আমাদের মুর্শিদাবাদের ওয়াসিফ মঞ্জিলের মতো। হয়ত নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা সংস্কার করে এই প্রাসাদের রূপ ওয়াসিফ মঞ্জিলের মতো করেছিলেন।

বিশাল ব্যালকনি।

ওপরে ওঠার পর দেখলাম সামনে বড় ড্রয়িং রুম। তার চারিপাশে বেশ কয়েকটি ঘর। মনে হল ঠিক যেন ওয়াসিফ মঞ্জিল। কিন্ত একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করলাম, বড় ড্রয়িং রুমের মধ্যে বর্তমানে কাঠের বোর্ড দিয়ে আলাদা ঘর তৈরি করে নবাবদের বংশধর ও তাঁদের কিছু আত্মীয় স্বজন বসবাস করছেন। ওপরে তো উঠে কাউকেই দেখতে না পেয়ে আমরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কারও কোনও খোঁজ নেই। অবশেষে আমরা ডাকাডাকি শুরু করলাম। ডাক শুনে ড্রয়িং রুমে তৈরি ঘর থেকে এক ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন। আমরা আমাদের পরিচয় দিয়ে আফশানা মির্জার কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি আমাদের জানালেন আফশানা মির্জা কয়েকদিন আগেই তার মেয়ের বাড়ি মুম্বইয়ে গিয়েছেন। ফলে ওঁর সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হল না আমাদের। আফশানা মির্জা হলেন নবাব ওয়াসিফ আলী মির্জার পুত্রবধূ।

নাসিম কুলী ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন প্রাসাদ।

এদিকে আমরা সেই ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দেখি একজন বয়স্ক ভদ্রলোক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এসে হাজির হলেন আমাদের সামনে। তিনিও আমাদের আসার কারণ জানতে চাইলেন। জেনে বেশ খুশি হলেন। আমরাও জানতে চাইলাম ওঁর সম্পর্কে। জানালেন তিনি আফশানা মির্জার ভাই। তাঁর নাম নাসিম কুলী। নাসিমবাবু মুর্শিদাবাদের নাজাফি বংশীয় নবাবদের বংশধর না হলেও বর্তমানে তিনি নাজাফি বংশীয়দের আত্মীয়। নাসিমবাবুর কাছে তাঁর বংশ পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানালেন যে, তাঁরা নাকি বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খানের বংশধর। নাসিমবাবু পেশায় একজন হোটেল ম্যানেজার। দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি ফেরেন একটু বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আমাদের দেখে তিনি সেসব কিছু ভুলে আমাদের নিয়ে পড়লেন। আমাদের তিনি প্রথমেই সমগ্র দোতলা ঘুরিয়ে দেখালেন। তার পর তার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। জানালেন, এই ঘরটিতেই মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর ওয়াসিফ আলী মির্জা থাকতেন। এখন তিনি থাকেন তাঁর পরিবার নিয়ে।

লক্ষণীয় থামগুলো।

নাসিমবাবু আমাদের এই প্রাসাদ নিয়ে নানান গল্প শোনালেন। তিনি বললেন মুর্শিদাবাদ ছেড়ে কলকাতায় বসবাস করলেও নবাবের খাওয়ার জন্য জল আসত মুর্শিদাবাদ থেকে। নবাবের চুল দাড়ি কাটার নাপিতও আসত মুর্শিদাবাদ থেকেই। তিনি আরও জানালেন যে, এই প্রাসাদে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-সহ তৎকালীন সময়ের বহু গুণীজন এসেছেন। এর পর তিনি আমাদের নীচে নিয়ে গেলেন। নিচে নিয়ে গিয়ে আমাদের দেখালেন নবাবের অফিস ঘর। তার গাড়ি রাখার গ্যারাজ, নবাবের বাবুর্চি খানা, কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মিত বাড়ি ঘর সব কিছুই। তিনি এক এক করে দেখাচ্ছিলেন এবং আমাদের সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলছিলেন। এভাবেই কথা বলতে বলতে আমরা প্রাসাদের সামনের দিকে এসে পড়লাম। এবার উনি প্রাসাদের ছাদের মাথায় আঙুল নির্দেশ করে বললেন ওইখানে মুর্শিদাবাদের নবাবদের নবাবি নিশানযুক্ত পতাকা লাগানো থাকত। তিনি বেশ গর্ব করে বললেন, আজ রাজভবনের যে মর্যাদা, এক সময় এই মুর্শিদাবাদ হাউসের মর্যাদাও তেমনিই ছিল। অথচ আজ সব শেষ। অতীতের এসব নানান কথা বলতে বলতে দেখি নাসিমবাবুর চোখের কোণায় জল। বুঝলাম তিনি খুব আবেগী মানুষ।

আজ শত বিভক্ত।

কথায়-কথায় কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে আমরা বুঝতেই পারিনি। ঘড়িতে দেখি সাড়ে ৪টে বাজে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও মুর্শিদাবাদ হাউসে থাকার আর উপায় নেই। কারণ আমাকে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরতে হবে। নাসিমবাবুর কাছে বিদায় নিয়ে স্যারের স্কুটারে চড়ে বসলাম। আমাদের স্কুটার যখন মুর্শিদাবাদ হাউসের লোহার জং ধরা দরজা পার করে রাস্তায় উঠল দেখি, নাসিমবাবু তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।

ছবি- লেখক

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *