খাদ্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

ত্রিপুরার লাবণ্যময়ী মিষ্টান্ন লাবণ

দীপক দাস

মিষ্টিরও ভাই বোন থাকে! হিন্দি সিনেমার মতো তারা হারিয়েও যায়। কুম্ভমেলায় বা ছেলে মেয়েদের জন্য জল আনতে নেমে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায়? একদিন হঠাৎই তাদের খুঁজে পাওয়া যায়। কোনও চিহ্ন ধরে। এই যেমন মায়ের শেখানো গান ছেলে মেয়েদের গাইতে শুনে। বা হাতের কোনও উল্কি দেখে। কারকাণ্ডার বোনকে খুঁজে পেলাম প্রায় সেরকম ভাবেই।

মিষ্টান্ন ভাণ্ডার তাহলে খুলেই বসি। কয়েক মাস আগের কথা। সবেমাত্র কারকাণ্ডা অভিযান (মিষ্টান্নের নাম কারকাণ্ডা) শেষ হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, ফোনে মিষ্টান্নটির ঠিকুজি, কুলজির বিচার চলছে। স্বাদ, গন্ধ, খেতে গেলে কতটা জল লাগে ইত্যাদি। কিছু কারকাণ্ডা বয়ামে ভরে টেবিলে রাখা ছিল। সাবধানে খেতে হয় বলে আমরাও কারকাণ্ডার প্রতি সাবধানী আচরণ করছি। ফলে শেষ হতে চাইছে না। অভিযানের সময়ে আমার ভ্রাতৃবধূ বাড়ি ছিল না। ফিরে এসে বয়ামে রাখা কারকাণ্ডা দেখে খুশিতে বলে উঠেছিল, ‘‘এটা তো লাবণ।’’ শুনেই আমিও উৎফুল্ল। মিষ্টির এমন সুন্দর নামে। সেই সঙ্গে আরেকটা মিষ্টির সন্ধানের ইঙ্গিতে।

অনীতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘কী করে বুঝলি?’’ ও জানাল, চোখে আর চেখে দেখে। ঠিক এরকম করে বলেনি। বলেছিল, ‘‘আমি খেয়েছি।’’ লাবণও নাকি কারকাণ্ডার মতো সাবধানে খেতে হয়। গলায় আটকে যাওয়ার ভয়। সেই হিন্দি সিনেমার হারিয়ে যাওয়া ভাই বোনের মিলনের সূত্র। কারকাণ্ডা আর লাবণের সূত্র হল গলায় আটকে যাওয়া। এর পরে শুরু হল জেরা পর্ব। কোথা থেকে লাবণের কথা জানলি? কী করে খেলি? বিস্তর জিজ্ঞাসাবাদে ভ্রাতৃবধূ লাবণের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। অথবা বিরক্ত হয়ে তাড়াতাড়ি খোঁজ এনে মুক্তি পেতে চাইছিল। ওর বাপের বাড়ি বর্ধমান জেলার মাগনপুরে। পূর্বস্থলী ব্লকে পড়ে। অনীতার এক সম্পর্কিত দিদি ওকে লাবণ তৈরি করে খাইয়েছিল। কিন্তু ওর বাপের বাড়ি আর আমার মামার বাড়ি একই গ্রামে। আমরা তো কোনওদিন লাবণের নাম শুনিনি!

লাবণ। এটি বর্ধমান সংস্করণ। ভায়া ত্রিপুরা। কণিকা দেবনাথের তৈরি।

আরেক প্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ। জানা গেল অনীতার ওই দিদির নাম কণিকা দেবনাথ। তিনি ত্রিপুরার মেয়ে। লাবণ তৈরি শিখেছিলেন তাঁর মায়ের কাছ থেকে। ত্রিপুরার মেয়েরা সাধারণ ভাবে এটা তৈরি করতে জানেন। কারণ চৈত্র সংক্রান্তিতে লাবণ খাওয়া রীতি আচারের মধ্যে পড়ে। কী ভাবে তৈরি করা হয় লাবণ? কণিকাদিকে ফোন করে লাবণের পাক প্রণালী রেকর্ড করে ভ্রাতৃবধূ আমাকে পাঠাল। লাবণ তৈরি করতে হলে প্রথমে খই গরম করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। জিরে, ধনে, মৌড়ির মতো কিছু মশলা ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হয়। খইয়ের গুঁড়োর মধ্যে মশলার গুঁড়ো অল্প করে মিশিয়ে দিতে হবে। যাতে লাবণ সুগন্ধি হয়। এবার ঝোলা গুড় খই-মশলার মিশ্রণের মধ্যে দিয়ে মাখাতে হবে। মাখতে মাখতে মিশ্রণ আঠা আঠা হয়ে যাবে। এর পর মিশ্রণ একটু করে নিয়ে গোল গোল করে পাকালেই তৈরি লাবণ। কণিকাদি জানিয়েছেন, হাতে না পাকিয়ে কেউ কেউ লাবণ ছাঁচেও বানান।

লাবণ নামের মিষ্টান্নটি কি কারকাণ্ডার বোন? খোঁজ তখনও আমার শেষ হয়নি। লাবণ ত্রিপুরায় বড় হয়েছে শুনে রাজীবদার কথা মনে পড়ল। লেখক-সম্পাদক রাজীবকুমার সাহা। ‘একপর্ণিকা’ নামে সুন্দর শিশুতোষ একটি ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ইনবক্স করলেই সাহায্য মেলে। তাঁকে জানালাম লাবণের কথা। তিনি লিখলেন, ‘লাবণ হয় তো। এই তো চৈত্র সংক্রান্তিতে খেলাম।’’ তিনিও লাবণের পাক প্রণালী লিখে পাঠালেন। খইয়ের ছাতুতে (অর্থাৎ খই গুঁড়ো) পরিমাণ মতো ঘি, চিনি, একটু এলাচদানা গুঁড়ো ফেলে আচ্ছা করে ময়ান দিতে হয়। অনেকে গুল মরিচও (গোলমরিচ) দেন। মাখাটা একদম ঝুরঝুরে হয়ে এলে কিছুটা নিয়ে একেবারে ছোট ছোট বাটি বা কৌটোয় চেপে চেপে ভরতে হয়। তার পর বাটিটা উলটে দিয়ে খুলে নিতে হয়। বাটিতে মিশ্রণ দেওয়ার আগে প্রতিবার সামান্য ঘি বুলিয়ে নিতে হয়। বহু আগে সম্ভবত মাটির কোনও পাত্র ব্যবহার করা হত বলে রাজীবদার অনুমান।

কিন্তু কণিকাদির পাক প্রণালীর সঙ্গে রাজীবদার পদ্ধতির কিছু অমিল ধরা পড়ছে যে! দু’জনের পাঠানো ছবিতেও মিল নেই। আবার ইনবক্স। রাজীবদা জানালেন, কণিকাদির পাক প্রণালী কিছুটা সরল। লাবণে আনুষঙ্গিক কোনও মশলা লাগে না। তাতে ঘিয়ের গন্ধ ও স্বাদ নষ্ট হয়। তবে চাইলে সামান্য এলাচ গুঁড়ো দেওয়া যেতে পারে। আর এই মিষ্টি ছাঁচে, হাতে, সব ভাবেই হয়।

কণিকাদি তাঁর শিল্পকর্ম দেখাচ্ছেন।

কারকাণ্ডার বোন বলে কি মনে হচ্ছে লাবণকে? খই গুঁড়ো করায় মিল রয়েছে। আর কী কী মিল রয়েছে দেখতে কারকাণ্ডার পাক প্রণালী একটু দেখা যাক। হুগলি জেলার খানাকুলে মেলে কারকাণ্ডা। তৈরি করেন তরুণ মান্না। তিনি জানিয়েছেন, এক কিলোগ্রাম কারকাণ্ডা তৈরি করতে খই লাগে ৩৫০ গ্রাম। চিনি ৬০০ গ্রাম, ঘি ১০০ গ্রাম। ভাল ছোট এলাচ ২০টি, দারুচিনি পাঁচ গ্রাম, গোল মরিচ ২০ গ্রাম। গোলমরিচ বেশি হলে ঝাল হয়ে যাবে। প্রথমে খই জাঁতায় গুঁড়ো করে নিতে হয়। তার পর চিনি গালিয়ে রস করে সন্দেশ করতে হয়। মশলাগুলো হামানদিস্তা দিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তার পর চিনির লেচির সঙ্গে মেশাতে হবে ঘি-মশলা। পুরোটা মাখিয়ে খইয়ের সঙ্গে দিতে হবে। এবার দু’হাতের তালুতে যতটা ধরে ততটা মাখা নিয়ে গোল করে পাকাতে হবে।

উপকরণে কিছুটা মিল রয়েছে লাবণের সঙ্গে। খই গুঁড়ো, ঘি, চিনি। তবে মশলার আধিক্য যথেষ্ট। রাজীবদা জানিয়েছেন, বেশি মশলায় ঘিয়ের স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হয়। এদিকে কারকাণ্ডা কারিগর তরুণবাবু আবার জানিয়েছেন, মশলাই কারকাণ্ডার প্রাণ। আমি কিন্তু আরেকটা মিষ্টির সঙ্গে লাবণের মিল পাচ্ছি। সেটা খইচুর। আগে হাওড়া জেলার মাজু, হুগলির খানাকুল ও ধনিয়াখালিতে মিলত এই মিষ্টান্ন। আমি মাজুর খইচুরের শেষ ভাল কারিগর শৈল রানার থেকে বছর চোদ্দ আগে একটা পাক প্রণালী সংগ্রহ করেছিলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, খই গুঁড়ো করে নিয়ে তার সঙ্গে চিনি, গাওয়া ঘি, ছোট এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি মেশাতে হয়। খইচুর পাকানোর সময়ে হাতে গাওয়া ঘি মেখে নিয়ে বড় এলাচ দিয়ে গোল্লা পাকাতেন ভাল দোকানের কারিগরেরা। লাবণের ক্ষেত্রেও তো পাত্রে ঘি মাখিয়ে নিতে হয়! আবার খানাকুলের খইচুরে নাকি ৫০ রকম মশলা লাগত। এক দোকানদার জানিয়েছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষের শোনা কথা। এই মশলার আধিক্যের সঙ্গে আবার কারকাণ্ডার মিল। লাবণ আবার কারকাণ্ডার মতো সাবধানে খেতে হয়।

সম্পর্কের এই জট ছাড়ানো বেশ মুশকিল। তবে আমার ধারণা, লাবণ-কারকাণ্ডা-খইচুর একই পরিবারের সন্তান। শুধু তাদের ভাগ্যটা ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’র মতো। ভিন পরিবার পালিত। তাই ভিন বৈশিষ্ট্যধারী।

লাবণ। ত্রিপুরা সংস্করণ। রাজীবকুমার সাহার পাঠানো ছবি।

লাবণের আরেক আত্মীয়ও রয়েছে। মিষ্টির অনেক ভাগ করা যায়। পাক প্রণালী অনুযায়ী এবং ব্যবহার অনুযায়ী। আমরা ব্যবহার অনুযায়ী ধরব। এই পরিবারের দু’টি শাখা। এক, আটপৌরে মিষ্টি। যা রোজ রুটির সঙ্গে খাই। অতিথি এলে দিই। দুই, পালা পার্বণের মিষ্টি। যেমন, বাঙালির নাড়ু। বিজয়া দশমীতে করতে হয়। বা জন্মাষ্টমীর তাল ফুলুড়ি। লাবণ দ্বিতীয় ভাগে পড়ে। রাজীবদা জানাচ্ছেন, লাবণ মূলত পূর্ববঙ্গের নাড়ুগোত্রীয় ঘরোয়া মিষ্টান্ন। এটা চৈত্র সংক্রান্তিতে তৈরি করা হয় ঘরে ঘরে। সঙ্গে থাকে খইয়ের ছাতুর নাড়ু, গোল গোল মার্বেলগুলির চেয়ে একটু বড়ো।

একটা তুলনা করতে পারলাম না। স্বাদের তুলনা। এ মিষ্টি চোখে দেখা। চেখে দেখার সুযোগ হয়নি করোনা অতিমারি জন্য। বিষয়টা অনলাইন পরীক্ষার মতো হল। করোনার প্রকোপ কমলে বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেব। মানে প্লেটের সামনে বসে চোখে এবং চেখে দেখব।

ছবি— কণিকা দেবনাথ ও রাজীবকুমার সাহা

(সমাপ্ত)

7 thoughts on “ত্রিপুরার লাবণ্যময়ী মিষ্টান্ন লাবণ

  1. বারে, এটা তো আমার মায়ের বানানো লাওন বা লওন (আমার মায়ের বাড়ি ছিল চট্টগ্রামে) চৈত্র সংক্রান্তির কয়েক দিন আগে বাড়িতে ধুম লাগত। নামানো হত ধামা কুলো, হামানদিস্তা আর পরিষ্কার করে রাখা বিটানিয়া কোম্পানির বিস্কুটের খালি টিনগুলো। কয়েক কিলো খই আর গুড় আসতো। কয়লার উনুনে খই টেলে নিয়ে হামানদিস্তায় গুড়ো করতে বসতো মা মাসি দিদি বোনঝিরা। দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে পানের বাটা নিয়ে বসত লওন বানানোর আসর। হামানদিস্তার ঠং ঠং আওয়াজ, মিঠে গুড়ের সুবাস, আহাশ সুভানাল্লা, যেন জগজিত সিংয়ের উমদা কৌই গজল- বাতাস খবর নিয়ে আসছে দুয়ারে পয়লা বৈশাখ, মানে ডাবল মজা – চৈত্র সংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখ পিছুপিছু। গুড় পাক হলে খইগুড়ো মেখে মেখে একটা শুকনো মণ্ড বানিয়ে হাত সমান কাঠের চৌকৌ টুকরোয় নানান ছাপে ফেলে তৈরি হত খইগুড়োর লওন। কোনোটা ফুল, কোনোটা পাখি ইত্যাদি ইত্যাদি । কর্পূর আর এলাচের গন্ধ, আর মনে আছে শুকনো কুল গুড়ো করেও মিশিয়ে দিত মা। একটু লালচে রং হত লওনের আর টক মিষ্টি স্বাদ । বেশ কয়েক দিন ধরে খাওয়া হত, আর কুটুমবাড়িও পাঠিয়ে দেওয়া হত। ও বলতে ভুলেছি, আর একটা জিনিস মা বানাতো, নাম ছিল আটকড়াই। চালভাজা, কুমড়ো বিচি, ভুট্টো দানা, ছোলা মটর বাদাম ইত্যাদি ইত্যাদি বালিতে টেলে নিয়ে কৌটৌবন্দি করে রাখাতেন। সংক্রান্তির দিন সকালে স্নান করে বাড়ির গেটে ছাতু উড়িয়ে এসে বাটিভর্তি পেতাম লওন ও আটকড়াই। … কি সোন্দর দিন কাটাইতাম। পরের দিন পয়লা বৈশাখ …

    1. হ্যাঁ দাদা। মিষ্টান্নটির সঠিক উৎস নিয়ে আরও খোঁজখবরের দরকার আছে। এর প্রচলন দুই বঙ্গেই হয়তো ছিল। শুধু পূর্বববঙ্গেও হতে পারে। কারণ এটা পালা পার্বণের মিষ্টি। আর বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে পূর্ববঙ্গীয়দের কাছ থেকেই। ত্রিপুরায় পূর্ববঙ্গ থেকে যেতে পারে। অথবা তখন দেশকালের বেড়া না থাকায় একই সঙ্গে ত্রিপুরাতেও প্রচলিত থাকতে পারে।

  2. ‘খৈচুর’ মিষ্টান্নের উল্লেখ আমরা দেখি ঊনবিংশ শতকের শেষে বাংলা সাহিত্যেও। ১৮৮৩ সালে কলকাতার প্রজ্ঞাভারতী থেকে প্রকাশিত গঙ্গাধর শর্মা ওরফে জটাধারীর রোজনামচা এমনই একটি বই। লিখেছিলেন চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। বইটিতে ‘খৈচুর’ যে ভাবে উল্লেখিত হয়েছে তাতেই সম্যক বোঝা যায় বাংলার গ্রামীণ জীবনে সেই মিষ্টান্নের জনপ্রিয়তা কেমন ছিল। থানায় বসে কিভাবে কাঁচা পয়সা রোজগার হত আর তা দিয়ে কেমন খৈচুর কেনা যেত তার সরস বর্ণনার ছবি মেলে সেই লেখায়। প্রাসঙ্গিক অংশটি সকলের পড়ার জন্যে এখানে তুলে দিচ্ছি —
    “আমাদের গ্রামে দীঘির নিকট পুরান থানাঘর ছিল… রবিবারে চৌকিদার হাজিরির সময় শিষ্ট বালকের মতো যাইতাম। হাজিরী লিখিতে প্রতি চৌকিদার মুন্সিজির তামাক ক্রয় জন্য এক একটি পয়সা দিত ও মুন্সিজি রোজনামচা পুস্তকে দিন দিনের ঘটনা লিখিতেন। আমি তাহাই দেখিতাম। লেখা সাঙ্গ হইলে দুই একটি মিষ্ট কথা কহিতেন, হয় ত কোন দিন দুই চারিটি পয়সা দিয়া নিকটস্থ দোকান হইতে মিষ্টান্ন খৈচুর আনাইয়া দিতেন ও দারোগা সাহেব কহিতেন, “বাবা থানায় যা দেখ তাহা বাহিরে কাহাকেও কহিতে নাই, যদি কেহ বলে শ্যামচাঁদের প্রহার লাভ হয়।” আমি থানার ঘটনা ভয়ে কাহাকেও বলিতাম না, দারোগা সাহেব আমার উপর আরও সন্তুষ্ট থাকিতেন। আমিও ভাবতাম রোজনামচা লেখা ভাল কর্ম, তাহাতে কাঁচা পয়সা আমদানি হয় ও অনেক খৈচুর খাওয়া যাইতে পারে।
    কেহ রোজনামচা লিখে খৈচুর, কেহ প্রতিদিন অজামাংস আহরণে সক্ষম হন।”

    1. দাদা, অসাধারণ সংযোজন। সমৃদ্ধ হলাম। খইচুর বাংলার অতি প্রাচীন মিষ্টান্ন। ছানা পূর্ববর্তী। ফলে বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমরা তিন জায়গায় খইচুর বিখ্যাত বলে সন্ধান পেয়েছি। এক, হাওড়ার মাজু। বিলুপ্তির পথে। দুই, হুগলির খানাকুল। রাজা রামমোহন রায়ের বাড়ি ছাড়িয়ে। ওখানে কারকাণ্ডার খোঁজে গিয়ে খইচুর পেয়েছিলাম। এখনও একজন পুরনো কারিগর আছেন। যিনি অর্ডার দিলে খইচুর তৈরি করে দেবেন বলেছেন। তিন, হুগলির ধনিয়াখালি। ধনিয়াখালির রেশম বস্ত্র সুশি আর খইচুর ভীষণ বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এখন আর কোনও দোকানে হয় না। খোঁজ করতে গিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
      পুনশ্চ: ধনিয়াখালির খইচুরের কথা গজেন্দ্রকুমার মিত্রের লেখায় পাওয়া যায়। দাদা, আপনি যে লেখাটা উল্লেখ করেছেন সেটা কোন অঞ্চলের?

      1. মনে হয় হুগলির শ্রীনগর ও নদীয়ার শান্তিপুরের মধ্যবর্তী কোন গ্রাম। নাম পাচ্ছি আলমপুরের। আবার বাগনাপাড়ার নামও রয়েছে — “ও ঘোড়া তোর নাকে দড়া / নিয়ে যাব বাগনাপাড়া।” ব্রিটিশ সাহেব, নীলকুঠি, ধন্বন্তরি চিকিৎসক লাউসেন দত্তের উল্লেখও রয়েছে।

  3. নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে ভদ্র সমাজে যে ছাপ্পান্নরও বেশি রকম মিষ্টান্ন সহযোগে উত্তম ফলারের ব্যবস্থা ছিল সেই তালিকাতেও ছিল খৈচুর।

    1. এতেই বোঝা যাচ্ছে খইচুরের প্রাচীনত্ব। তখন মোয়া জাতীয় বিভিন্ন মিষ্টি বাঙালির জিভের সরসতা বজায় রেখেছিল। ছানা তৈরি না জানার ফলে ক্ষীর, খই, গুড়, চিনির মিষ্টিই ছিল প্রধান।

Leave a Reply to Dipankar Dasgupta Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *