অন্য সফর ইতিহাস ছুঁয়ে বিশেষ ভ্রমণ

নববর্ষের আলোয় কবি দিনেশ দাসের ভিটের খোঁজে

দীপক দাস

ভাবছি, বেরিয়ে পড়াই ভাল! এত বাড়িতে থেকেছি প্রায় দেড় বছর ধরে…। কখনও ভাবিনি আমাদের মনের দমবন্ধ অবস্থা। যেতে আমরা পারি…যেতে আমাদের হবেই। ক্ষমা করবেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। একটু হাসি, মজা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। প্রতি মঙ্গলবার বাইক নিয়ে  সাঁই সাঁই হওয়া দলটা সাপ্তাহিক আড্ডা পর্যন্ত প্রায় ভুলতে বসেছে। তাদের মনের অবস্থা কেমন হয়? খারাপ। তথৈবচ। সে একেবারে ভালবাসার জনের মুখ থেকে ‘‘তোকে ভালবাসি কিন্তু বন্ধুর মতো’ বাণী টাটকা শোনার পরের মনের অবস্থা। তাই বেরনো সাব্যস্ত হল।

দিনটা ছিল নববর্ষ। এদিন লোকে হাল খাতা করে সারা বছরের ব্যবসাপাতি ঠিক চলার জন্য। আমরা বেরোব ঠিক করলাম, সারা বছরের ঘোরাঘুরি বজায় রাখার জন্য। দূরে যাওয়া হবে না। দেখা হবে আমাদের জেলারই গাঁ। সেই মতো জায়গার নাম চাওয়া হল দলের সদস্যদের কাছে। দীপু প্রস্তাব দিল, ঘোড়াদহ, পুরাশের দিকে যাওয়া হোক। ওইদিকটা খুব বেশি যাওয়া হয়নি। শুনেছি, পুরাশ-কানপুরে কবি দিনেশ দাসের বাড়ি। দীপুর প্রস্তাবে সিলমোহর পড়ল। ওইদিকে গেলে এক সফরে তিন উদ্দেশ্য সফল হবে। নববর্ষে ঘোরাঘুরির হালখাতা খোলা হবে। নতুন নতুন গাঁ দেখা হবে। আর হবে কবিতীর্থ দর্শন।

মজা খালের সৌন্দর্য।

জায়গা ঠিক হতেই এক অভিনব প্রস্তাব এল চিনির কাছ থেকে। চিনি জানাল, ওর গিন্নিও যেতে যায়। বছরখানেকও হয়নি ওদের বিয়ে হয়েছে। এমন প্রস্তাবে আমার সংস্কারবদ্ধ মনে ধাক্কা দিয়েছিল। আবার ভালও লাগল। আমরা আসলে ততটা গাঁইয়া নই।

নির্দিষ্ট দিনে বেরিয়ে পড়া গেল দুপুর দুপুর। ইন্দ্র, দীপু, আমি, চিনি আর চিনির বউ। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বেরনো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও আমাদের ছোটা ডন মানে বাবলা সাড়া শব্দ করেনি। ও তখন কাজ থেকে ফিরে সবে খেতে বসেছিল। দীপু ওকে প্রায় ভাত পাত থেকে তুলে নিয়ে এল। চিনির বউয়ের নাম জানি না। জানার দরকারও পড়ল না। ছোটখাট চেহারা। ওকে পুতুল নাম দেওয়া গেল। আপত্তি করেনি। অবশ্য আমাদের গ্রুপের সঙ্গে কারও মিশতে দেরি হয় না। দলে আমিই মজ বুড়ো। দীপু, বাবলা চিনির বন্ধু। আর ইন্দ্রর বয়সটা ঠিক বোঝা যায় না। ওর শিং গজায়নি সম্ভবত। পুতুলকে চিনি ছাড়া সকলেই তুই বলছে দেখলাম। এটা খুব ভাল। দ্রুত আপন করে নেওয়া যায়।

খালের আরেক দিক।

আমরা যে দিকে ঘুরতে যাচ্ছি সেটা হাওড়া জেলার মধ্যেই পড়ে। হাওড়ার সড়ক পথের রূপবৈচিত্র কিন্তু দারুণ। ল্যাজা, মুড়ো, পেটির মতো। আলাদা গড়ন। আলাদা স্বাদ। অন্তত হাওড়া-আমতা রোডে এমনটাই চোখে পড়েছে। মুড়োর দিক থেকেই ধরুন। হাওড়া শহর। নাগরিক রূপ। বাড়িঘর, অফিস, গাড়িঘোড়া, দোকানপাতি। চর্মজ এবং মানসিক উভয় চোখের দৃষ্টি প্রসারিত করার উপায় নেই। এই রূপ বাঁকড়া পর্যন্ত চলবে। মাঝে মাঝে ফিকে হয় নগর বসত। মাকড়দহের সবুজও কমে আসছে। গ্রাম আবার মিলবে ডোমজুড় ছাড়ানোর পর। কিন্তু এখানেও দ্রুত নগরায়ন ঘটছে। দক্ষিণবাড়িতেও এখন কারখানাগুলো দৃষ্টিপথের ব্যাঘাত ঘটায়। এরকম আধা গ্রাম-শহরের চিত্রকল্প বড়গাছিয়া, পাতিহাল, মুন্সিরহাট পর্যন্ত। মুন্সিরহাট টপকালে তবেই সত্যিকারের গ্রাম পাবেন। এখানে রাস্তা চারদিকে বেঁকে গিয়েছে।

আমরা চাঁদনি চক ছাড়িয়ে ডানদিকের রাস্তা নিলাম। এইদিকে একটা সিনেমা হল ছিল, শ্রীমা। অন্য সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোর মতো শ্রীমারও মৃত্যু ঘটেছে। কোথায় ছিল হলটা আর বুঝতে পারলাম না। ওই জায়গাটা পার হওয়ার পরেই পুরোপুরি বদলে গেল প্রকৃতির রূপ। এখানে কোথাও কোনও নির্মাণ দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত ঘটাবে না। আদিগন্ত মাঠ। চাষ আর চাষ। রাস্তাঘাটও ভাল। আরও ভাল হল, রাস্তার দু’পাশেই প্রচুর গাছপালা। বেশ একটা বনবীথির মতো ব্যাপার।

বিগত বসন্তের চিহ্ন।

বেশ কিছু বাইক ছোটানোর পরে একটা সেতু পড়ল। স্বাভাবিক ভাবেই তার সারা গায়ে ‘আমরা করেছি’র ছাপ। নীল-সাদা। তিনটে বাইক থামল। আমরা গ্রামেই থাকি। আমাদের গ্রামেও চাষবাস হয়। কিন্তু এই জায়গাটার সঙ্গে বেশ তফাৎ। সেতু পার করে ডানদিকে তাকালে একটা সবুজ মখমল চোখে পড়বে। তার বিস্তার বহু দূর পর্যন্ত। মখমলের মাঝে একটা, দু’টো ছোটখাট গাছ। নিজে থেকেই হয়তো বেড়ে উঠেছে। অথবা কোনও চাষি বসিয়েছেন। গ্রীষ্মের বেলায় হয়তো তারই ছাওয়ায় বসে জলখাবার খাওয়া, দুপুরে একটু বিশ্রাম। গাছের পাশে একটা খড়ের গাদা রয়েছে মনে হচ্ছে। তাহলে ওটা খামারও হতে পারে। খালে জল অল্পই। তা দেখাও যায় না। কচুরিপানা আর জলজ গাছে ঢাকা। কচুরিপানায় ফুল ধরেছে। এসবেরও অন্য রকম রূপ। সেতুতে ওঠার মুখে বাঁদিকে ধান চাষ কম বলে রূপটা আবার অন্য রকম। সেতুর গোড়ায় একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। সদ্য ত্যাগ করা বসন্তের পরশ এখনও ধরে রেখেছে কিছুটা ফিকে হয়ে যাওয়া ফুলে।

এমন এক মন ভাল করে দেওয়া পরিবেশে রোমান্টিক এক দৃশ্যের অবতারণা হল। এক মহিলা এক পাল ছাগল নিয়ে আসছিলেন। দেখলাম, ছাগলগুলো যত সেতুর দিকে এগিয়ে আসছে পুতুল ততই চিনির টি শার্টটা খামচে ধরছে। আর সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে মিশে যেতে চাইছে। বোঝা গেল, ও ছাগলকে ভয় পায়। কোনও মেয়ে ছাগলকে ভয় পায়, এই প্রথম দেখলাম। হইহই করে উঠলাম আমরা। ‘আরে চিনি, তোর তো বীরত্ব দেখানো সহজ রে! ছাগলের হাত থেকে বাঁচালেই তুই বীর। বাঘ মারতে হবে না।’’ কিংবা ‘‘আর বীরত্ব দেখিয়েই বা কী হবে ল্যাজ তো কাটা গিয়েছে।’’ ইত্যাদি। পুতুল হাসতে থাকে। দ্বিতীয় রোমান্টিকতায় একটু জোরজবরদস্তি আছে। সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে পুতুল মৃদু স্বরে বলেছিল, ‘‘ফুলগুলো খুব সুন্দর লাগছে।’’ চিনির কোনও বিকার নেই। আবার হইহই। ‘‘আরে, গাধা চিনি, এর মানে কি জানিস? তোকে ফুল পেড়ে দিতে বলছে।’’ চিনি বলে ওঠে, ‘‘অনেক ওপরে ফুল। পাড়ব কী করে!’’ ও বেশ লম্বা। হালকাও। চিনিকে চাগালাম। কিন্তু ফুলে হাত গেল না।

সেই পাঠাগার। এখানেই ছিল ফাঁড়ি।

ছাগল নিয়ে ফিরছিলেন যিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, এই খালের নাম ডাকাতিয়া খাল। বর্ষায় টইটুম্বর হয়ে থাকে। একবার অনেক গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আরেকটা বিষয় বলতে ভুলে গিয়েছি। এই জায়গায় গাছে, খালে পাখি। প্রচুর কলকাকলি। এক ঝাঁক ঘুঘুপাখি দেখলাম। বাবলা বলল, ‘‘অন্যরকম ঘুঘু কিন্তু। ধূসর ঘুঘু।’’ কিন্তু দীপু, ইন্দ্র ক্যামেরা তাক করার আগেই উড়ে পালাল। বাস্তবিকই ঘুঘু। বাইকে উঠে পড়েছি, একটা শিকারি পাখি এসে বসল একটা গাছে। বাজপাখি মনে হল। ইন্দ্র তখন ক্যামেরা ব্যাগে পুরে ফেলেছে। বললে, খ্যাচম্যাচ করবে।

পরে গাড়ি গিয়ে থামল পুরাশে। এবার ‘কাস্তে কবি’ দিনেশ দাসের ভিটে খোঁজার পালা। পুরাশ বাজারে বিস্তর খোঁজ চলল। কিন্তু কেউ বলতে পারলেন না। এক ফলওয়ালা বললেন, ‘‘কবিতা লেখে? ঘোষবাড়ির ছেলে?’’ বুঝলাম তিনি বর্তমান কোনও কবির কথা বলছেন। আরেকজন বললেন, ‘‘লাইব্রেরির কাছে যান।’’ কিন্তু সেখানেও কিছু সন্ধান পাওয়া গেল না। শুধু লাভ হল একটা তথ্য। এই অতুল পাঠাগারের পাশে আগে পেঁড়ো ফাঁড়ি ছিল। কিন্তুর কবির বাড়ি? তথ্যটা আমাকে দিয়েছিল হাসমতদা। আমার সিনিয়র। এখন মাজু স্কুলের বাংলার শিক্ষক। হাসমতদার বাড়ি খোশালপুরে। ওর স্ত্রী মৌমিতা আমার বন্ধু। মৌ আমতার বড় মহরার স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা। হাসমতদাকে ফোন করলাম। আমাদের বেরিয়ে পড়া শুনে প্রথমে একচোট হেসে নিল স্বামী-স্ত্রী। এই গরমের দুপুরে গ্রাম দেখতে বেরিয়েছি বলে। পাত্তা দিলাম না। সংসারে আটকে পড়া প্রাণী। হাসবেই তো। হাসাহাসি থামিয়ে কবির গ্রামের নামটি বলেছিল হাসমতদা, কাষ্টস্যাংড়া গ্রামে।

সংস্কার হওয়া খালটি। স্থানীয় ভাবে বড় খাল নামে পরিচিত।

গ্রামটা দীপু আর ইন্দ্র চেনে বলল। পুরাশ পেরিয়ে একটা বাঁধের রাস্তায় উঠলাম। এখানেও খাল। সংসার হচ্ছে। জল বেড়েছে। জঞ্জাল পরিষ্কার হয়েছে। ফলে পাখিরা আস্তানা করেছে। এক ঝাঁক সরাল দেখলাম খালের জলে। ইন্দ্র দেখাল, কাছেই একটা হাইস্কুল। আরেকটু পরে পুরাশ কলেজ। পুতুল এই কলেজেই পড়েছে। ও চিনিকে ফিসফিস করে কী যেন বলল। চিনি ঢাক পেটালো। পুতুল বলছে, ওদের সময়ে কেন খালের সংস্কার হল না! জায়গাটা ওর ভাল লেগেছে মনে হল। দেখলাম, বাঁধ থেকে লাফ দিয়ে খালের পাশে চলে গেল। পিছন পিছন চিনিও।

তার পর আবার যাত্রা। বাঁধের রাস্তা দিয়ে যেতে বেশ ভাল লাগছিল। পুরো চাষবাসের এলাকা। খালের দু’পাশে বসত। দুই পাড়ের যোগাযোগের জন্য মাঝে মাঝে ছোট ছোট সেতু। একটাই অসুবিধা। খাল সংস্কারের কাজ চলছে বলে রাস্তায় প্রচুর ধুলো। ওপারে মাটি কাটার যন্ত্রটা গুড়গুড় করে গড়িয়ে চলেছে। গতি আমাদের বিপরীতে। এপারের রাস্তার উপরে ট্রাক্টরে করে মাটি ফেলা হচ্ছে। ধুলোয় ইন্দ্রর অসুবিধা হয়। শ্বাসের নয়। পোশাকের। …

এখানেই ছিল কবির বাড়ি।

প্রকৃতি দেখতে দেখতে চলেছি। বেশ কিছুক্ষণ পরে মনে হল, চলাটা যেন অনন্ত। দুই গাইড চেনে বলেছে। তাই নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু এতক্ষণ কি লাগার কথা? এলাকার লোককে জিজ্ঞাসা করা দরকার। রাস্তার পাশে কমবয়সি কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেই বোঝা গেল, দুই গাইডের মাইনে কাটা যায়। আমরা ফেলে এসেছি কাষ্টস্যাংড়ার দিকে মোড় নেওয়া রাস্তা। ওঁরা দেখিয়ে দিলেন। তার পরেও দু’একবার আগু পিছু হল। তার পর সঠিক পথ ধরা। কবির গ্রামে ঢুকেও নাজেহাল। আবার আগুপিছু। আবার জিজ্ঞাসাবাদ। বাড়ির সামনে বসেছিলেন তিন মহিলা। দুই বৃদ্ধ। একজন কম বয়সি। তিনিই হদিশ দিলেন। আরেক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদের পরে মিলল কবির বাড়ি।

দেখা হল অমীর দলুইয়ের সঙ্গে। জানালেন, দিনেশ দাস তাঁর খুড়তুতো জেঠামশাই। তিনি দেখালেন কোথায় ছিল কবিদের ঘর। ওই ঘরের সামনেই এখন অমীরবাবুদের দালানকোঠা। অমীরবাবু একটা বিষয় অকপটে জানালেন, কবির বিষয়ে তাঁর বাবা বিশ্বনাথ দলুই আরও বেশি জানেন। বিশ্বনাথবাবু বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছেন। কাছেই পাকা রাস্তার পাশে একটা জায়গায়। অমীরবাবুই নিয়ে গেলেন। একটা বিষয় খটকা লাগছিল। এঁরা দলুই। কবি দাস। ধাঁধাটা কী? অমীরবাবু জানালেন, কবিরা নাম পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন।

কবির মূর্তি। দুই পাশে অমীর ও বিশ্বনাথবাবু।

বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে দেখা হল। উনি জানালেন, কবির বাড়ি এটাই ছিল। পরে ওঁরা কলকাতার চেতলায় উঠে যান। কবি অনেকবার এই গ্রামে এসেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে কবির স্ত্রীও এসেছেন গ্রামে। অমীরবাবু জানালেন, গ্রামের লাইব্রেরিতে কবির হাতের লেখা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় আমাদের আর সেসব দেখা হয়নি। আমরা মূর্তিটা দেখলাম। ২০১৪ সালে মূর্তিটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। বেশ সাড়ম্বরেই। তার প্রমাণ মেলে মূর্তির ফলকে খোদাই হওয়া নামগুলো দেখে। মূর্তি উন্মোচন করেন কবি সুবোধ সরকার। প্রধান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি রণজিৎ দাস ও কবি কৃষ্ণা বসু। এসেছিলেন বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই সময়ে উলুবেড়িয়া মহকুমার যিনি তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক ছিলেন তাঁর নামও খোদাই করা আছে। কাজের সূত্রে এই মহিলা আধিকারিকের নামের সঙ্গে সম্ভবত পরিচিত। পশ্চিম মেদিনীপুরে কর্মরত আধিকারিক আর ইনি সম্ভবত একই ব্যক্তি।

মূর্তির অবস্থা কিন্তু ভাল নয়। রাজ্যে মূর্তিগুলোর যেমন দশা দেখা যায়, তেমনই। ধূলিধূসরিত। পাদদেশে ডাঁই করে রাখা স্টোনচিপ। মন খারাপ হল। কাষ্ঠস্যাংড়া গ্রামটা আমতার কাছাকাছি। জায়গাটা রামচন্দ্রপুর, আনুলিয়ার কাছে। স্থানীয় ভাবে প্রেম রোড নামে পরিচিত। কবি তাঁর কবিতায় উল্লেখ করেছিলেন পৈতৃক গ্রামের কথা। মূর্তির ফলকে সেই কবিতার উল্লেখ আছে। ‘লেনিন শতবর্ষে কোন চাষী’ শীর্ষক কবিতাটি ছিল এমন, ‘আমি হলাম চাষী পাড়ার চূড়ামণি দলুই\গ্রামের নামটি কাষ্টস্যাংড়া হাওড়া জেলার কোণে’। এই কবিতায় দলুই-দাসের রূপান্তরের একটা আভাস মেলে।

আমাদের ফটোসেশন।

এবার ফেরার পালা। তার আগে একটা ফটোসেশন করা দরকার। অন্তত পুতুলের সম্মানে। দীপু একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছিল। চাষের জমির মাঝে একটা মোটাসোটা আলপথ। মাঠে ফসল ফলে আছে। চাষিরা ঘরে তোলে সময় মতো। তাদের জীবন চলে। একসময়ে হয়তো নিজের ফসলের উপরে নিজেদের অধিকার ছিল না।

এলাকারই এক ভূমিপুত্র তাই হাঁক দিয়েছিলেন, ‘কাস্তেটা শান দিও বন্ধু’।

ছবি— ইন্দ্র ও দীপু।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *