অন্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

জার্সির জোরে তিন জেলায়

যথা ইচ্ছা তথা যা

জার্সির একটা আলাদা কেতা আছে। সে তো মাঝে মাঝেই টের পাওয়া যায়। সেই কেতার কারণেই গ্রুপেরও একটা জার্সির দরকার বলে আলোচনা চলছিল কয়েক মাস ধরে। নানা কার্যকারণে তা হয়ে উঠছিল না। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাস্তবায়িত হল অনেকদিনের চেষ্টায়।

গ্রুপের বড় বড় কাজগুলো উদযাপনের জন্য আমরা সফরে বেরোই। যেমন ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর আমাদের গ্রুপের পথ চলা শুরু। ফেসবুকের প্রাইভেট গ্রুপ হিসেবে। আমরা জনাইয়ের মনোহরা খেতে গিয়েছিলাম। বছর দুয়েক পরে একটা ওয়েবসাইট খোলা হল। উদ্বোধনে গেলাম জয়পুরের জঙ্গলে। জার্সির জন্য কোথায় যাওয়া যায়?

উদ্বোধনে নন্দিতা আর সৌমিক।

হাওড়া জেলার একপাশে মেদিনীপুরে আছে। জানতাম। অনেকেই জানেন। রূপনারায়ণ নদ পেরোলেই কোলাঘাট ব্রিজের পরেই। কিন্তু আরেকদিকেও মেদিনীপুর আছে। সেটা ভাটোরার দিক। কোলাঘাট ব্রিজ পার হলে পূর্ব মেদিনীপুর। ভাটোরা পার হলে পশ্চিম। তাছাড়া কাছেই হুগলি। তিন জেলার সংযোগস্থলের হবে আমাদের জার্সির উদ্বোধন। তাছাড়া ভাটোরার দিকেও অনেকদিনের নজর ছিল। হাওড়া জেলার আমরা বেশির ভাগ। কিন্তু এই জেলাতেই একটা দ্বীপের মতো ভূখণ্ড রয়েছে। বারবার শুনেছি, পড়েছি। জায়গাটাও নাকি সুন্দর। সুতরাং সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গেল। বেরনো হবে দোলের পরের দিন। বেশির ভাগেরই ছুটি।

রূপবান রূপনারায়ণ।

বাইক নিয়ে বেরনো হয়েছিল। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ সেরে, বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে পৌঁছনো গেল ভাটোরা। প্রথমে ভাটোরায় বাঁশের জেটি ঘাটে জার্সির উদ্বোধন হল। করলেন আমাদের গ্রুপের নবীনতম সদস্য নন্দিতা দাস ও সৌমিক পাল।

কৈজুড়ি থেকে নৌকার উপরে বাইক-সহ আমরা।

বাইক নদীতে তুলে পার হলাম রূপনারায়ণ। ওপারে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীগঞ্জ। ঘাটাল মহকুমার। থানা, দাসপুর। ভাটোরার মতো ঘাটালও বন্যাপ্রবণ। ফলে বাড়ির গঠনে কিছুটা মিল আছে। এই এলাকায় বাড়িঘরগুলো একটু উঁচুতে হয়। চাঁইপাট পর্যন্ত ঘোরা হল। তার পর কৈজুড়ি। আবার বাইক নৌকায় তোলা। দলের দু’একজন তো নৌকায় বাইক তোলার নাম শুনলেই কেঁপে যাচ্ছিল। হাওড়া, মেদিনীপুর নয় যেন সুন্দরবনে ঘুরতে এসেছি।

সকলে মিলে।

কৈজুড়ির ওপারটা হুগলি জেলা। জায়গার নাম মাড়োখান, পানশিউলি। সেখানে মুণ্ডেশ্বরী আর রূপনারায়ণ মিশেছে। নদীতে গাঙ্গেয় শুশুক ঘাই মেরেই চলেছে। বাঁশের সাঁকো থেকে শুশুক আর তারোই মাছের খেলা দেখতে দেখতে বেলা পড়তে লাগল। তার পর পার হলাম সাঁকো। ওপারে গিয়ে নদীর চড়ায় নেমে জার্সি নিয়ে দীর্ঘ ছবি-পর্ব। খুব আনন্দ হচ্ছিল সকলেরই।

সন্ধে নামছে। জাল গোটানোর পালা মৎস্যজীবীদের।

চিনির আসার কথা ছিল। আসতে পারেনি। জার্সি তৈরি করার জন্য কচি (শুভ বৈদ্য) চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ও চেন্নাই চলে যাওয়ায় সম্ভব হয়নি। জুয়েল আর অরিজিৎ সময় দিতে পারে না বলে ওদের বলা হয়নি। তবুও ভাল লাগছিল। আমরা জানতাম, ওরা আমাদের সঙ্গেই আছে।

আমরা আছি। আমাদের ঘোরাঘুরির সুযোগ করে দাও হে, প্রকৃতি। আর কিছু চাই না।

জার্সির একটা গুরুত্ব আছে। সম্মান আছে। বেশ বুঝতে পেরেছি। কৈজুড়ি থেকে নৌকায় ওঠার আগে ফেরির একজন ‘স্যার স্যার’ বলে কথা বলছিলেন।

(সমাপ্ত)

One thought on “জার্সির জোরে তিন জেলায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *