ইতিহাস ছুঁয়ে বিশেষ ভ্রমণ

আলুর দম-কাঁকড়ার মেলা

সায়ন দাস

শীতের দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ সারার পর কার না বলুন তো একটু রোদ্দুর পোয়াতে ভালো লাগে। আর রোদ্দুর পোয়ানো এবং মেলা দেখা যদি একই সঙ্গে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। আর মেলা বলতে যে সে মেলা নয় আলুর দমের মেলা। যা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই নিজের চোখে পরখ করে দেখতে ১৬ জানুয়ারি দুপুরে বেরিয়ে পড়েছিলাম। জায়গাটা হাওড়া জেলার রাজাপুর এলাকার সিংটিতে। উদয়নারায়ণপুর থানা এলাকায় পড়ে। মেলাটি হাওড়া জেলার প্রাচীন মেলাগুলোর অন্যতম।

মেলায় বিক্রি হচ্ছে কাঁকড়া।

আমার আত্মীয় বাড়ি থেকে প্রায় অনেকটাই পথ। বলতে কী সাইকেলে প্রায় শুধু যেতে দেড় ঘণ্টা লেগেছিল। নদী ঘেঁষা উঁচু বাঁধ দিয়ে সাইকেল নিয়ে যেতে থাকলাম মেলার উদ্দেশ্য। যার সঙ্গে গিয়েছিলাম সে মেলা প্রাঙ্গণের অনেকটাই আগে গ্যারাজে সাইকেলগুলো রেখে দিতে বললেন।এর পরের রাস্তাটা আমাদের পুরোটাই পায়ে হেঁটে যেতে হবে। ওঁর কথা মতো সাইকেলগুলো আমরা সকলে রেখে হাঁটতে শুরু করলাম মেলা প্রাঙ্গণের দিকে। আমাদের মতো অনেকেই অন্যান্য মাঠের আল ধরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে হেঁটে চলেছে মেলার উদ্দেশ্য। মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছনোর বেশ অনেকটা পথ আগেই মেলা কমিটির ঘোষণা শুনে বুঝতে পারলাম কী পরিমাণ জনসমাগম হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। প্রতি মিনিটে মিনিটে কমিটি থেকে ঘোষণা করছে অমুক লোক ওই জায়গা থেকে এসেছেন আপনার লোক আমাদের মেলা কমিটির সামনে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। ঘোষণা শুনে নিজেদের মধ্যে খুব হাসাহাসি করছিলাম যে এত লোক একসঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কী করে।

গৃহস্থালীর জিনিসপত্র কেনাকাটা

কিন্তু, মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে না ঢুকতেই আমাদের ভুল ভাঙল। বিশ্বাস করুন মেলার মধ্যে আমি যেই পরিমাণ মানুষের ভিড় ভেবেছিলাম কিংবা আমার কথা শুনে বা পড়ে আপনি যত পরিমাণ মানুষের ভিড় হতে পারে বলে ভাবছেন তার থেকে অনেক বেশি ভিড় ছিল এই মেলায়। সারা বছর ধরে এলাকার গ্রামবাসী সহ দূর-দূরান্তের বহু মানুষ অপেক্ষায় থাকেন এই মেলার জন্য। মেলার মধ্যে কী নেই! সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে এই মেলায়। যেমন হাঁড়ি, কোদাল, কুড়ুল, ঝুড়ি, মাছ ধরার জাল সহ একাধিক সামগ্রী। এমনকি ফল, আনাজ, মাছ ও কাঁকড়া বিক্রি হতে দেখলাম মেলায়। এই মেলা আসলে পীর পুকুরের মেলা নামে পরিচিত। তবে এর প্রাচীন নাম ভাই খাঁ পীরের মেলা। মেলার অন্যতম আকর্ষণ আলুর দম। মেলার প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে বিক্রি হয়ে থাকে দম। কেজি দরে। নানা ধরনের আলুর দম। কেউ বাড়ি থেকে তৈরি করে নিয়ে এসেছেন তো কেউ মাঠের মধ্যেই তৈরি করে বিক্রি করছেন নতুন আলুর দম। শীতকাল তো। নতুন আলু উঠে গিয়েছিল তখন।

কেজি দরে আলুর দম।

মেলা প্রাঙ্গণে আলুর দমের জন্য ভিড়। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে একসঙ্গে আলুর দম চেখে দেখার আনন্দই আলাদা। আমরাও সেই টান উপেক্ষা করতে পারলাম না। আমরাও দেখে শুনে মাঠের মধ্যে পেতে রাখা চটের মধ্যে বসে কেজি দুয়েক আলুর দম কিনে শুকনো দেশি চালের ঘরে ভাজা মুড়ি দিয়ে খেতে শুরু করলাম। দেশি চালের ঘরে ভাজা মুড়ি একটু শক্ত আর মোটা হয়। কিন্তু, খেতে অসাধারণ।

মেলাতে মুড়ি আলুর দমের ভোজ।

মুড়ি খেয়ে সমস্ত মেলা প্রাঙ্গণ ভাল করে ঘোরাঘুরি চলল। সন্ধে হব হব এমন সময় রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বলতে কী মেলা মানে যে সত্যিই মিলন উৎসব তা আপনি এই মেলায় গেলে আরও কিছুটা ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, সঙ্গীর হাত অবশ্যই ধরে থাকবেন।

(সমাপ্ত)

One thought on “আলুর দম-কাঁকড়ার মেলা

Leave a Reply to Shreeparna Saha Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *