ইতিহাস ছুঁয়ে বিশেষ ভ্রমণ

পাখি সব করে রব, মদনমোহনের বাড়ি যাইল

দীপক দাস

কোনও অভয়ারণ্য ব্রাহ্ম হতে পারে! বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের বিশাল প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ভাবছিলাম। বুধবারে বন্ধ থাকে! প্রথমে দ্বাররক্ষী জানালেন। তারপর দেখলাম, গেটে লটকানো ফ্লেক্সে। বুধবারে ব্রাহ্মধর্মাবলম্বীদের উপাসনার দিন। আর কী কারণ থাকতে পারে অভয়ারণ্য বন্ধের? খুঁজে পেলাম না। খুঁজতে ইচ্ছেও করছিল না। এতদূর এসে দরজায় ঠোক্কর খেতে হবে! পুরো পরিস্থিতিটা চিনির মতে, উদ্দেশ্য পতন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অভয়ারণ্য দেখার। কিন্তু চারজনেই বুরবক। চিনি বরাবরই উদ্ভাবনী শক্তির বিচারে একটু এগিয়ে। ছাত্রাবস্থা থেকেই প্রতিভার পরিচয় দিয়ে এসেছে। সেসব শব্দ আমাদের মহলে কিংবদন্তীর মতো।

অনেকদিন থেমে থাকার পরে আমরা আবার সফরে বেরিয়েছি। এবার মূলত খাদ্য সফর। আগের দিন পূর্ব মেদিনীপুরের হাউরের মুগের জিলিপি হয়েছে। এবার নদিয়ার স্বাদ সন্ধানে। এদিক পানে যখন এসেছি তখন বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে একবার ঢুঁ মারা হবে। এমনই ছিল এই সফরের অধিনায়ক দীপুবাবুর প্রস্তাব। দলে এখন ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে প্রচুর ঝামেলা। অন্তত দু’টো লবি। ফলে এখন সফরভিত্তিক ক্যাপ্টেন হয়। মুগের জিলিপি আমার জানা ছিল। আমি ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মতোই ‘কম্পজ্বরে কাঁপিস কেন লম্ফ দিয়ে চল রে সবাই’ বলে জিলিপি খাইয়ে এনেছি। এটা দীপুবাবুর এলাকা। ওর যৌবনের উপবন। ইয়ে মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের চারণভূমি। তাই বার্ধক্যের বারাণসীতে পৌঁছনো আমি ওর হাতে ক্ষমতা সঁপেছি। তারপরই নিজেকে কেমন যেন সর্বহারাদের মতো লাগছে। কিশোরকুমার সেই কবে গেয়েছিলেন, ‘আজ রাজা কাল সে ফকির’! আজ স্পষ্ট বুঝতে পারছি, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কেন এত দ্বন্দ্ব। কেন এত লড়াই! প্রাণহানি।

সেই প্রবেশপথ। বুরবক আমরা তিন। ছবি চিনির।

না ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে দলে কোনও অন্তর্ঘাত করিনি। ক্যাপ্টেনের প্রস্তাব মতোই বেথুয়াডহরি স্টেশনে নামা। টোটো করে অভয়ারণ্যের সামনে। এবার কী তাহলে ফিরতে হবে? বুধবার কেন বন্ধ? এদিন কি পশুপাখিদের বিশ্রামের দিন? ওরা কি এদিন জিমে যায়? এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরছিল আমাদের মাথায়। কিন্তু সেসব তো আর রক্ষীদের জিজ্ঞাসা করা যায় না। কী করব? কৃষ্ণনগর ফিরে যাব? জিজ্ঞাসা করলাম সাথীদের। গার্ডবাবু শুভ, আর দীপুর মত তাই। আর তখনই চোখে পড়ল আবক্ষ মূর্তিটা। অভয়ারণ্যের দরজার এক পাশে এক চিলতে টিনের চালার নীচে বসানো। নামফলক কালের এবং অযত্নের প্রভাবে অস্পষ্ট। তবে নামটা বোঝা যাচ্ছে। মদনমোহন তর্কালঙ্কার। নামটা পড়ার পরে ফলকের প্রথমে অস্পষ্ট লেখা কথাগুলোও স্পষ্ট হয়ে গেল। ছোটবেলা থেকে মনে দোলা দেওয়া সেই পঙক্তিগুলো, ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে কুসুমকলি সকলই ফুটিল’। এখানে যখন মূর্তি বসেছে তখন বাড়িও নিশ্চয় আশপাশেই হবে।

আবার একপ্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ। অভয়ারণ্যের এক রক্ষীই সাহায্য করলেন। জানালেন, কবির বাড়ি বিল্বগ্রামে। তবে এখান থেকে কিছুটা দূরে। টোটো নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ তো নাকের বদলে নরুন নয়, গোটা একটা নাক মিলল। অভয়ারণ্য না-ই দেখা হোক, তীর্থদর্শন তো হবে! বাংলা সমাজজীবন এবং ভাষার এক অক্ষয় রত্নের জন্মভিটে দর্শন তো তীর্থদর্শনই। চারজনেরই মনস্থির। এবার টোটোর সন্ধান। আমাদের আর করতে হল না। একটা টোটোই হাজির হল আমাদের সামনে। সেই টোটোটা। যেটায় আমরা এসেছি। টোটোচালক হঠাৎ আমাদের কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলেন। বললেন, উনি জানতেন না বুধবার অভয়ারণ্য বন্ধ থাকে। জানলে স্টেশনেই বলে দিতেন। কম বয়সি ছেলে। ২৬-২৭ হবে। বেশবাস ভাল। জিনস পরেছে। চেহারায় লেখাপড়ার ছাপ আছে। কথাতেও। বোঝাই যায়, সেসব গুণ দূরে সরিয়ে রেখে পেট চালাতে টোটোই সম্বল তাঁর। ভেবেছেন, আমরা হয়তো ভাবছি, বন্ধ জেনেও ভাড়া পেতে আমাদের নিয়ে এসেছে। ৪০ টাকার লোভ ছাড়তে পারেনি। বাজারে যা টোটো নেমেছে তাতে সম্মানজনক জীবন চালাতে উপার্জন করাটা বেশ কষ্টকর। আমরা এরকম ভাবলে দোষও দেওয়া যায় না। বললাম, ‘এটা কোনও ব্যাপার নয়। আমাদের বিল্বগ্রাম নিয়ে চলুন।’

পথে যেতে।

ঝকঝকে রাস্তা— শাসকপক্ষের উন্নয়ন দর্শানোর একমাত্র প্রতীক, রাস্তার পাশে বসা হাট, লোকজনের ভিড় পেরিয়ে টোটো বাঁক নিল। মূল থেকে গ্রামের দিকে ঢুকে যাওয়া একটা রাস্তায়। টোটো বিল্বগ্রামে পৌঁছতে পৌঁছতে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জীবনে একটু ঝাঁকিদর্শন হোক। মদনমোহনের ‘শিশুশিক্ষা’ বইটি বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশের আগেই প্রকাশিত হয়। এই বইয়েরই বিখ্যাত কবিতা ‘প্রভাত বর্ণন’। যার পঙক্তি, ‘পাখি সব করে রব…’। এই বই পড়েননি এমন লোকজন পাওয়া দুষ্কর। তথ্য বলছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষালাভের শুরু ‘শিশুশিক্ষা’ দিয়ে। পরে তিনি ‘বর্ণপরিচয়’এ প্রবেশ করেন। বিদ্যাসাগরের বন্ধু মদনমোহনও মুক্তমনা ছিলেন। সমাজ সংস্কার, নারী শিক্ষার বিস্তার এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনে তিনি বিদ্যাসাগরের সহযাত্রী। অধ্যাপনা থেকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, সব ভূমিকাতেই সফল। ‘পাখি সব’ বেশি বিখ্যাত হলেও মদনমোহনের লেখা, ‘আমার পণ’ কবিতাটিও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। যে কবিতার শুরু, ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি।’ আরেকটি কবিতা, ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’। লোকে সেই পঙক্তি ব্যঙ্গাত্মক সংস্করণ সকলে জানেন, ‘লেখা পড়া করে যে অনাহারে মরে সে’। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমারও ব্যঙ্গ করতে ইচ্ছে করছে। আমরা চারজন লেখা পড়া করেছি। তাই গাড়ি চেপে এখানে এসেছি। চালকদাদা নিয়মিত টোটো গাড়ি চড়ছেন। ক্ষমা করবেন মদনমোহন।…

স্মৃতিস্তম্ভের পরিচয় ফলক।

তখন অনেকটা চলে এসেছি। অভয়ারণ্যের লেজ দেখা যাচ্ছে। প্রচুর গাছপালায় ভরা এলাকা। আমবাগান, বাঁশঝাড়, নারকেল গাছে ঘেরা পুকুর। সেসব দেখতে দেখতে বিল্বগ্রাম এসে গেলাম। গ্রামে ঢোকার মুখে পঞ্চায়েত থেকে করে দেওয়া বিশাল এক তোরণ। এতটা দরকার ছিল না। আরেকটু কম খরচে অসুবিধা ছিল না। ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে এসে পৌঁছলাম মদনমোহনের জন্মভিটেয়।

ভিটের অস্তিত্ব কিছু নেই। ভিটের উপরে একটা স্মৃতিস্তম্ভ করে দেওয়া হয়েছে। স্তম্ভের ফলকে অল্প কথায় মদনমোহনের পরিচয় ধরা। জায়গাটা খুব সুন্দর। প্রচুর গাছপালা। পাশেই আমবাগান। একটা বুলবুলি পাখি ফলে ঠোক্কর মারছিল। মনে পড়ে যাচ্ছিল ছন্দ শেখার সময়ে কবিতার পঙক্তি ক’টা, ‘আহা ঠুকরিয়ে মধু কুলকুলি/পালিয়ে গিয়েছে বুলবুলি’। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটছে না। ফলটা আম নয়, নোনা। ছোট্ট বুলবুলিকে তাড়িয়ে একটা কাক এসে বসল নোনা ফলের স্বাদ নিতে। দীপু ছবি তুলল, চিনি সেলফি। আর ভজা ভিজে বেড়ালের মতো মুখ করে পোজ দিয়ে গেল সারাক্ষণ। গার্ডবাবুর ডাকনাম ভজা।

বিল্বগ্রাম।

একটা গ্রামে প্রাত:স্মরণীয় ব্যক্তির স্মৃতিস্তম্ভ যখন আছে তখন নিশ্চয় উদ্যোগী লোকজনও আছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। সামনেই একটা বাড়ি। কথা বললাম। সন্ধান মিলল। যেতে উদ্যোগী আমরা, তখনই টোটোচালক চলে যেতে চাইলেন। এতক্ষণ দাঁড়াতে পারবেন না। তা ছাড়া গতকাল ঝড় হয়েছে। এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে বহু টোটো বসে গিয়েছে। যাঁদের টোটোয় চার্জ আছে আজ তাঁদের পোয়াবারো। ছেড়ে দেওয়া হল টোটোচালককে।…

যে ভদ্রলোক মদনমোহন স্মৃতিরক্ষা কমিটির সঙ্গে যুক্ত তিনি বাড়ি নেই। ব্যাঙ্কে গিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন। বাড়ির লোকের এমন আশ্বাসে আমরা এলাকা ঘুরতে বেরোলাম। গ্রাম বাংলা বলতে যা বোঝায় এলাকাটা তা-ই। ‘নিস্তব্ধ নিঝুম দিক, শান্তি ভরে অনিমিখ’। এই এলাকার কোনও মানুষ ‘প্রভাত বর্ণন’ লিখবেন আর সেটা কালজয়ী হবে, খুব স্বাভাবিক। মনে হচ্ছিল, এখনও এখানে কেউ চেষ্টা করলেই সকালে শুনতে পাবেন, ‘পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির’। সকালে এলে হয়তো আমরাও দেখতে পেতাম, ‘রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে/শিশুগণ মন দেয় নিজ নিজ পাঠে’। এমন নিঝুম পল্লিতেই তো অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হতে পারে। দেখলাম সেই দৃশ্য। একটা অশত্থ গাছ। মহীরুহ সেটি। তার ডালে একটা হনুমান পরিবার। কাচ্চা-বাচ্চা ধাড়ি-সহ পুরো দলটাই ঘুমোচ্ছে।

দেখে এত আনন্দ হল! এদের বাচ্চাদের স্কুল নেই। মাধ্যমিকের পরে সায়েন্স না আর্টস তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ (চাকরির সুবিধের বিচার) নেই, জয়েন্টের ঝামেলা নেই। বড়দের অফিস কাছারি, মজদুরি নেই। ডিএ নিয়ে চিন্তা নেই। ঘুম পেয়েছে। সোজা ঘুমিয়ে নিচ্ছে। খিদে পেলে খেয়ে নেবে। তারপর আবার বিশ্রাম। উফ! মানুষও তো একটা প্রাণী। জীবনে এত জটিলতা বাড়াতে তাদের কে মাথার দিব্যি দিয়েছিল শুনি?

আমাদের ছবি তোলা, কথাবার্তায় হনুমান পরিবারের ঘুম ভেঙে গেল। বিরক্ত হল বোধহয় দলপতি। ডালের উপর দিয়ে খানিকটা এগিয়ে এসে আমাদের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছিল। মনে হল, আমার দিকেই তাকিয়ে। আমিই তো ‘ছবি তোল ছবি তোল’ করে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তাছাড়া মুখভর্তি দাড়ি আমার। দেখতে অনেকটা ওদের মতোই মুখপোড়া। ভেবেছে, হয়তো ওদের দলেরই কোনও সদস্য না ঘুমিয়ে চরে বেড়াচ্ছে। এত বড় সাহস কার? সেটাই বোধহয় বোঝার চেষ্টা করছিল দলপতি। দেবে হয়তো কানচাপাটি। তেড়ে এলে আমি সোজা বলে দিতাম, আমার দোষ নেই। পালের গোদা দীপু। কিন্তু দলপতি বোধহয় বিশ্বাস করত না। দীপু তো দাড়ি রাখে না!

লাইব্রেরিতে মদনমোহনের প্রতিকৃতি।

আরও কিছুক্ষণ ঘুরে, আমবাগানে ফটোসেশন করে এসে পৌঁছলাম সেই কর্তাব্যক্তির বাড়ির কাছে। একটা স্মরণিকার খোঁজ করছিলাম। যা থেকে মদনমোহনের সম্পর্কে কিছু তথ্য মিলতে পারে। উনি একটি লাইব্রেরিতে নিয়ে গেলেন। দেখে সেটা লাইব্রেরি বলে মনে হচ্ছিল না। একটা ছবি দেখে জানা গেল, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন মদনমোহনের দ্বিশতবার্ষিকী জন্মোৎসবে। উনি তন্নতন্ন করে খুঁজলেন আলমারি, তাক। প্রতিটি এনভেলপ উল্টে উল্টে দেখলেন। কিন্তু স্মরণিকা মিলল না। তবে বেশ কয়েকটি জায়গার সন্ধান দিলেন। আজ সময় হবে না। পরে দেখা যাবে।…

ফেরার সময়ে ভাগ্যক্রমে ভদ্রলোকের বাড়ির সামনেই একটা টোটো পেয়ে গেলাম। ভদ্রলোক খুব কথা বলতে ভালবাসেন। ফলে জমে গেল ফেরাটা। মদনমোহনের জন্মদিবসে এই এলাকায় বিশাল মেলা বসে। উনি আমন্ত্রণ জানালেন সেই মেলায় আসার জন্য। আর শোনালেন নাকাশিপাড়া নামের উৎস। বিল্বগ্রাম নাকাশিপাড়ার থানা এলাকায়। নামের উৎস চমকপ্রদ। কোনও একসময়ে এই জনপদের জমিদার এলাকাটিকে কাশী করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রচলিত মত, গ্রামে ১০৮ ঘর ব্রাহ্মণ বসালেই এলাকাটি কাশী সমতুল হবে। এমন বিশ্বাস ছিল। তাই কাশী থেকে ব্রাহ্মণ পরিবার আনা হত। কিন্তু ১০৮তম ব্রাহ্মণ পরিবারটি আর কিছুতেই টেকে না। ব্রাহ্মণের মৃত্যু হয় নানা কারণে। সেই কারণেই এলাকার নাম হয় নাকাশিপাড়া। মানে কাশী হয়ে উঠতে না পারা জনপদ, না-কাশীপাড়া। পরে একসময়ে হয়ে যায় নাকাশিপাড়া। নামের মধ্যে একটা ব্যর্থতার ইতিহাস লুকিয়ে আছে, জানা ছিল না।

বাংলার বাড়ি।

টোটোয় চারিদিকে দেখতে দেখতে আসছিলাম। চিনি ছবি তুলছে। শুভ নানা প্রসঙ্গ তুলছে। আর চিনির ফটোগ্রাফির নেশাকে উৎসাহ দিচ্ছে। চিনি তো যা পারছে তাই তুলছে। তবে বেশির ভাগই ফলস হচ্ছে। ফুলের খেতের ছবি তুলতে গেল। উঠল খেজুর গাছের ছবি। দীপুও গল্প করছিল। চারপাশ দেখতে দেখতে আমিও গল্প করছিলাম। এই এলাকাটার চরিত্রগত পার্থক্য আছে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলো থেকে। বাড়িঘরের ছাঁদ আলাদা। মানুষজনের কথার টান আলাদা। চাষবাসের বৈচিত্রেও কিছু আলাদা। বৈচিত্রটা ভীষণ ভাবে টের পাওয়া গেল বেথুয়াডহরি স্টেশনের কাছে। সাইকেল, টোটো, বাইক, প্যান্ট শার্ট পরা লোকজনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক বৃদ্ধ চাষি। ধুতিটা হাঁটুর ওপরে তোলা। মাথায় একটা টোকা। মুর্শিদাবাদে একেই বলে মাথালি। চিন, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্সেও মিলবে এই ধরনের টুপি। সেসবের আলাদা আলাদা নাম। চাষিরা রোদ, জল থেকে বাঁচতে ব্যবহার করেন।

টোকা মাথায় চাষি।

বৈচিত্রে ভরা বাংলা। এমন বাংলার কাছে তো বারবারই ফিরে আসা যায়। তীর্থদর্শনের আগে। তীর্থদর্শনের পরে।

কভারের ছবি- মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মভিটে এবং স্মারক।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *