অন্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

ইতিউতি হাওড়ার জীবজগৎ— সপ্তম পর্ব

যথা ইচ্ছা তথা যা

করোনা অতিমারি দ্বিতীয় বছরে পড়েছে। আবার লকডাউন। আবার একটু প্রকৃতির দিকে তাকানো। পাখি দেখাই বেশি। তবে কিছু কীটপতঙ্গও লক্ষ্য করা হচ্ছে। অভিজ্ঞরা যদি কিছু কীটপতঙ্গ চিনিয়ে দিতে পারেন তাহলে জানাটাও হয়ে যাবে।

১। সবজে পোকা
ঝকমকে রঙের।

সপ্তাহখানেক আগের কথা। একটা পোকা হঠাৎই নজর কাড়ল। উজ্জ্বল সবুজ গায়ের রং। সবুজ ডানা দু’টো বর্মের মতো। ঘরের টিউবলাইটে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ছবি তোলা গেল। কিন্তু নাম জানা গেল না।

লেখা প্রকাশের পরে সাহায্য করলেন প্রজাপতি বিশারদ সৌরভ দুয়ারী স্যার। তিনি বরাবর উৎসাহ দেন। এবারও দিলেন। জানালেন, সবুজ পোকাটি হল একধরনের scarab beetle (স্কারাব বিটল)। এরা flower chafer (ফ্লাওয়ার চাফার) সাব ফ্যামিলির অন্তর্গত। কারণ এরা ফুল, পাতা সব কেটে নষ্ট করে দেয়। পোকাটির বিজ্ঞানসম্মত নাম Heterorrhina sp।

২। ব্লু থ্রোটেট ব্লু ফ্লাইক্যাচার
বড় সুন্দর।

বাগানে তিনটি পাখি দেখে ভীষণ ভাল লেগেছিল। একটা তাইগা ফ্লাইক্যাচার। অন্যটা কমলাদামা। আর Black redstart। বাংলায় কালো লালগির্দি বলে। এই বছরেই আরেকটা পাখি বাগানে দেখতে পেলাম। অনেকটা শ্যামার মতো। কিন্তু অমিল অনেকই। আবার ঝাড়গ্রামের পাখি প্রেমিক বিশ্বরূপদার শরণ নিতে হল। তিনি জানালেন, এটি ব্লু থ্রোটেট ব্লু ফ্লাইক্যাচার। আগে কখনও দেখেনি। এখন দেখে মন ভরে গেল।

৩। চড়াই
ঘুলঘুলিটা ভেঙেছিল বলেই হয়তো বাসা করতে পেরেছে চড়াই দম্পতি।

অনেক কমে এসেছে পাখিগুলো। প্রায় দেখাই যায় না। পাকা বাড়িতে ঘুলঘুলির ছাঁদ পরিবর্তন হওয়ায় নাকি পাখিরা তাদের বাসস্থান হারিয়েছে। লকডাউনের পরে কিছুদিন অফিস যাতায়াত শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে বড়গাছিয়ে রেলস্টেশনে বেশ কয়েকটি চড়াই দেখতে পেয়েছিলাম। মোবাইলে ছবি তোলা হল।

৪। মাকড়সা (অজানা)
কী নাম এর?

পাতিহালেই মিলেছিল। একদিন হঠাৎই চোখে পড়ে বাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে বাটি চাপা দিয়ে দিই। তার পর ছবি তুলে ‘যথা ইচ্ছা তথা যা’র ছবি ভান্ডারে গচ্ছিত করে দিই। এমন রংচঙে মাকড়সা দেখিনি কখনও। ট্যারান্টুলার মতো রোমশ। কিন্তু পা, পেট, মুখ পুরো আলাদা। শনাক্ত করাতে পারিনি কাউকে দিয়ে। (দীপশেখর দাসের অভিজ্ঞতা)।

সৌরভ দুয়ারী স্যারের সাহায্যে পরিচয় উদ্ধার করা গিয়েছে। মাকড়সাটি হল Olios cf lamarcki। এই মাকড়সাটি Sparassidae (স্পারাসিডি) ফ্যামিলির অন্তর্গত। এদের গোত্রের যাদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তারা সাধারণত বাথরুম বা দেওয়ালে চলাফেরা করা বেশ বড় ধরনের মাকড়সা। অনেক সময় ডিমের থলি নিয়েও থাকে। আর ট্যারানটুলারা Theraphosidae (থেরাফোসিডি) ফ্যামিলির অন্তর্গত।

৫। দোয়েল
দোয়েলের কাছে।

বাংলার অন্যতম পাখি। ভোরবেলা দারুণ শিস দেয়। ছোটবেলায় শুনতাম। এখনও দেয়। মা বলে। আমার আর ভোরবেলা ওঠা হয় না। কিন্তু বেলায় দেখা হয়। বাগানে জল খায়। গাছে গাছে ওড়াওড়ি করে। ভারী ভাল পাখি।

৬। আরেক পোকা
চেহারায় বেশ গুরুগম্ভীর ভাব রয়েছে।

নাম জানি না এরও। লম্বা শুঁড়। লম্বাটে চেহারার দাঁড়া। কেউ নাম জানিয়ে সাহায্য করলে ভাল হয়। আমাদের আবেদনে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সৌরভ দুয়ারী স্যার। তিনি জানালেন, ‘পোকাটি একধরনের true bug। এর গোত্র বা ফ্যামিলি হল Alydidae (অ্যালিডিডি)। এই ফ্যামিলির পোকাদের প্রায় একই ধরনের দেখতে হয় বলে ওপর থেকে তোলা খুব ভাল ছবি ছাড়া প্রজাতি কেন গণ চেনাও যায় না’।

৭। কুবো পাখি
মুখটা লুকিয়ে ফেলেছিল।

আগেও একটা ছবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেটা ছিল অনেক দূর থেকে। আর সূর্যের দিকে পড়ন্ত বিকেলে তোলা। ফলে সেটা হয়েছিল ছায়াছবি। অনেক কষ্টে লুকিয়েচুরিয়ে সরষে খেতের আড়ালে একটা ছবি তোলা গিয়েছে। কিন্তু মুখটা বাদ। এই পাখির চোখগুলো যে অন্যরকম। লাল।

৮। বেলুন ব্যাঙ (?)
কেমন যেন দেখতে।

গত সপ্তাহের প্রবল বৃষ্টির পরে ছাতা মাথায় মাঠে যাওয়া হয়েছিল। অনেকদিন পরে। অল্প ভেজা আর অন্ধকারে প্রকৃতি দেখা। তখনই চোখে পড়ল ব্যাঙটা। সোনা ব্যাঙটা লাফিয়ে পালাল। বেলুন ব্যাঙটার ছবিই তোলা হল।

৯। আবার বাবুই
এসেছিল বাড়ির অতিথি হয়ে।

একদিন বাগানে এসেছিল। খানচারেক। ঘুরছিল। জল খাচ্ছিল। ছবি তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হল বিশ্বরূপ মণ্ডলদাকে। তিনি চিনিয়ে দিলেন। আগে একখানা বাবুইয়ের ছবি দীপশেখর তুলেছিল।

১০। খঞ্জনা
খঞ্জনা।

দলের সদস্য দীপশেখর আগে মোবাইলে তুলেছিল একটি খঞ্জনার ছবি। বিদ্যুতের তারে বসেছিল। মোবাইলে সে ছবি খুব ভাল আসেনি। ইন্দ্রজিৎবাবু তাঁর ক্যামেরাটি ধার দেওয়ায় কাজের কিছু সুবিধা হয়েছে। একদিন দুপুরবেলা দু’টো খঞ্জনা ধরা গিয়েছে তাতে।

১১। ওয়েস্টার্ন ইয়েলো ওয়াগটেল
মিশে আছে গাছালির ভিতর।

বন্দি সময়ে ঘরের বাইরেও পা ফেলতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু দু’একদিন বেরিয়ে পড়তেও হয়। বাড়ির পাশে মাঠে। ক’দিন থেকেই লক্ষ্য করছিলাম, দুপুরের পরে মাঠে কিছু পাখি আসছে। যথারীতি অচেনা। একদিন অনেক চেষ্টায় একটা ছবি তুলতে পেরেছিলাম। তার পর বিশ্বরূপদার কাছে প্রেরণ। তিনি নামটি জানালেন, ওয়েস্টার্ন ইয়েলো ওয়াগটেল। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম পাখিটি বিদেশি। মানে পরিযায়ী। আনন্দ দেখে কে!

(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *