খাদ্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

প্রবাসে খাদ্যের বশে

দীপক দাস

মাংসের বাটিতে উঁকি মারছে রসুনটা। গাঢ় ঝোল, মাংসের টুকরো আর আলুর মাঝে অল্প মাথা জাগিয়ে রাখা রসুনটাকে মনে হচ্ছিল যেন সমুদ্র থেকে মাথা তোলা মৈনাকের চুড়ো। একটু অবাক হয়েছিলাম। মাংসের পিঁয়াজ, রসুন থাকবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ তো আর দেব-দেবীর কাছে উৎসর্গ করা ছাগমেধ নয় যে পিঁয়াজ-রসুন বাদ পড়বে। বলির মাংসে নাকি পিঁয়াজ-রসুন দিতে নেই!

তাহলে মাংসে রসুন দেখে অবাক হচ্ছি কেন? কারণ রসুনটা গোটা বলে। মাংসে সাধারণত রসুন দেওয়া হয় কোয়াগুলো ছাড়িয়ে। খোলা পরিষ্কার করে বেটে নিয়ে। কিন্তু দিলীপদা মাংস রান্নায় পুরো রসুনটা দিয়েছেন। বাজার আমরা যেমন কিনে আনি বালবের মতো রসুন, সেটাই। শুধু উপরের খুলে আসা খোলাগুলো ফেলে নিজের দিকের গুচ্ছমূলগুলো একটু ছেঁটেছেন। দিলীপদাকে বলতে, উনি বললেন, ‘‘ভাল খেতে লাগে। খোলার ভিতর থেকে টিপে টিপে রসুনের কোয়াগুলো বের করুন। তার পর ভাতের সঙ্গে মেখে খান। দারুণ টেস্ট।’’ সত্যি ভাল খেতে। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম নতুন পদ্ধতিতে মাংস রান্নায় এবং স্বাদে।

রান্না হচ্ছে গোটা রসুন দেওয়া মাংস। রাঁধুনি সোমা চক্রবর্তীদত্ত।

ঘটনাটি আমার মালদা প্রবাস জীবনের। তখন ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’এ কাজ করি। আমাদের নাইট ম্যানেজার ছিলেন দিলীপদা। ওঁর রান্নার হাত দারুণ। কতরকম রান্না করতে পারতেন। মালদায় বেশ কিছু রকম নতুন ধরনের পদ খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেগুলোই ছিল মেসের কষ্টের জীবনের অন্যরকম প্রাপ্তি। দিলীপদা আর মেসের মাসি, দু’টো টার্মে আমাদের ফুড মিনিস্টার ছিলেন। দু’জনেরই উদ্ভাবনী প্রতিভা বা ভাল জিনিসের উত্তরাধিকার বহন করে চলার ক্ষমতা অসাধারণ। মানে বলতে চাইছি, যাঁদের কাছেই এঁরা শিখে থাকুন নিজেরা দায়িত্ব পাওয়ার পরে সেটাই বজায় রেখেছেন। মন্ত্রীসান্ত্রীদের মতো আগের জমানার সব কিছু বদলে দিতে যাননি।

বুরুডির ছাউনির হোটেলের সৌন্দর্য ছিল এমনই।

দিলীপদার রসুন প্রীতি ছিল। আমাদের মসুর ডালেও গোটা রসুন দিয়ে রান্না করে খাইয়েছেন। উনি তিন চাররকম ডাল রান্না করতে পারতেন। রসুন ডাল ছাড়াও একদিন তেতো ডাল করেছিলেন। করলা দিয়ে ডাল রান্না। চাকা চাকা করে করলা কেটে পিঁয়াজ ফোড়নের সঙ্গে অল্প ভেজে ডাল করা। সারা জীবনে ডাল অনেক রকম খেয়েছি। এক জেঠিমা অসাধারণ মুসুর ডাল রাঁধতে পারতেন। বন্ধু অনুমিতার মা। রবীন্দ্রভারতীতে পড়ার সময়ে মাঝে মাঝেই ওর বাড়িতে ঘাঁটি গাড়তাম। আর জেঠিমা নানারকম রান্না করে খাওয়াতেন। খুব সহজ পদ্ধতিতে রান্না ডাল। লম্বা করে কুঁচনো পিঁয়াজ, দু’টো শুকনো লঙ্কার ফোড়ন। ডালটা পরিমাণ মতো নুন দিয়ে আগে ভাল করে সিদ্ধ করে নিতেন। জল যতটা লাগবে সেটাও আগেই দিয়ে দিতেন। দেওয়া হত হলুদও। তার পর চাপা দিয়ে রাখা। পিঁয়াজ ফোড়ন ভাজা হয়ে গেলে সিদ্ধ ডাল জল সমেত দিয়ে দেওয়া। অল্প ফুটিয়ে নামিয়ে নেওয়া। দারুণ স্বাদ।

আমি বাঙাল। আমার পিতৃ ও মাতৃ, দুই কুলই বাঙাল। ফলে আমাদের ডালেও বৈচিত্র আছে। মাছের মাথা দেওয়া মুগ ডাল, কিসমিস দেওয়া মটর ডাল, রুটি-লুচি দিয়ে খাওয়ার ছোলার ডাল, সবজি দেওয়া নবরত্ন ডালের কথা বাদই দিলাম। মা রান্না করত ডাঁটা দিয়ে ডাল। সজনে ডাঁটা কমন। বাড়িতে হত দুধ মান। মানকচুর একটা ধরন। তবে পাতা-ডাঁটা মানকচুর মতো স্বাস্থ্যবান নয় লিকলিকে। মানকচুকে যদি ডব্লিউডব্লিউএফের ফাইটার বলা হয় দুধ মান তাহলে ক্রিকেটার ঈশান্ত শর্মা বা ভুবনেশ্বর কুমার। দুধ মানের পাতা ফেলে ডাঁটা দিয়ে ডাল করা যায়। বেশ খেতে। পাতাগুলো বাটা খাওয়া যায়। আগে বাড়ির উঠোনে হত কাটোয়া ডাঁটা। সে-ও ডালে সাঁতার কাটত। এক ধরনের নটেশাক হত। কাটোয়া ডাঁটার মতো শক্তপোক্ত নয়। আবার নটেশাকের মতো খর্বকায় নয়। আরেকটু বড় এবং পেলব। তার নরম ডাঁটাও ডালে দিলে উপাদেয়। কিন্তু করলা দিয়ে ডাল দিলীপদার আগে কেউ খাওয়ায়নি। দিলীপদা করতেন করলা দিয়ে মুসুরডাল বা মুগ ডাল দিয়ে। স্মৃতি ঝালিয়ে নিয়ে উত্তরবঙ্গের সহকর্মী সোমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলাম। সোমা জানাল, ও গোটা রসুন দিয়ে মাংস করে। করলা দিয়ে ডালও করে। তবে সেটা মটর ডাল। আমাদের মেসে মটর ডাল হত না। মুগ বা মুসুর ডালই হত। কারণ এমন ডাল রান্না করা হত যাতে জল বেশি দেওয়া যায়। খেতে অনেকজন। কিন্তু সকলেরই মাইনে কম। ফলে তরিতরকারি বেশি থাকত না। ডাল ছিল সাশ্রয়কারী।

গালুডি ড্যামে ধরা চলছে পাকোচ মাছ।

মালদায় মেসের মাসির রান্নার হাতও ভাল ছিল। সাধারণ খাবার অন্যরকম স্বাদ হত মাসির হাতে। আলু করলা ভাজা করতেন। আমাদের বাড়িতে যেমন ভাজা হয় তেমন নয়। বাড়ির ভাজায় আলু এবং করলা নিজের নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। অনেকটা বিজেপি-শিবসেনা জোটের মতো। জোটেও আছি, সমালোচনাতেও। মাসির আলু-করলায় মিলমিশ বেশ। পাতে রাখলে অল্প তেল গড়িয়ে আসে। তা দিয়ে আধ থালা ভাত দিব্যি ওড়ানো যায়। মাসি পথ্য রান্না করতে পারতেন। একবার ভীষণ সর্দি হয়েছিল। দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। হাঁ করে কোনওমতে শ্বাস ধরে রেখেছিলাম। মাসি দেখেটেখে বলেছিল, ‘‘একটা জিনিস করে দিচ্ছি। ওটা দিয়ে ভাত খাবা।’’ জিনিসটা হল সরষের তেলে রসুন ভাজা। সঙ্গে শুকনো লঙ্কার একটু ঝাল। তেলে-রসুনে সান্দ্র মাখামাখি। গরম ভাতের সঙ্গে খেলে নাকের স্বস্তি। জিভের তৃপ্তি। একটা বাটিতে জমিয়ে রেখেছিলাম সেই রসুন-তেল। দিনতিনেক তা-ই ছিল আমার প্রধান খাদ্য।

মেসের রান্নার কথা হলে এক সহকর্মীর কথা উঠতে বাধ্য। নামটা বলছি না। সঙ্কোচে পড়তে পারে। সে আর আমি একমাত্র দক্ষিণবঙ্গের। আমি হাওড়ার, সে কলকাতার। তখনও মেসে রান্নার ব্যবস্থা হয়নি। আমাদের খাওয়াদাওয়ার খুব সমস্যা। একটা হোটেলে খেতাম। মাঝে মাঝে খেতে গিয়ে দেখতাম, সেদিন দুপুরে রান্না করেনি। হোটেল মানে ঘরের সঙ্গেই খাওয়ার ব্যবস্থা। তো সেই সহকর্মী মেশিন বিভাগের গৌতমের থেকে একটা গ্যাসের স্টোভ জোগাড় করেছিল। তা দিয়ে মাঝে মাঝে রান্না চলত। স্বাদ বদল আরকী। কিন্তু সহকর্মীর একটাই মুশকিল, সে বড়ই রামভক্ত। কাজ সেরে এসে রাতে মেসের বিছানায় বসে ভক্তিরসের প্লাবনে ভাসত। রান্নার সময়েও একই রকম ভক্তিযোগ। একদিন বলল, ‘‘আজ রাম দিয়ে মাংস রাঁধব।’’ তাতে নাকি মাংসের স্বাদ ভাল হয়। বললাম, বেশ। আরেকদিন আলু-বিনের তরকারি রাঁধছিল। পাশে আমিও ছিলাম। আমাকে বলল, ‘‘একটু রাম দিয়ে দিই?’’ এ তো আচ্ছা মুশকিল। এত রামাতিশয্য অযোধ্যা ছাড়া কোথাও মেনে নেবে না। কিন্তু কথাতেই তো আছে, সেই রামও নেই সেই অযোধ্যাও হারিয়েছে। তাই বারণ করলাম। মেনে নিয়েছিল রাঁধুনি সহকর্মী। কিন্তু খাওয়ার সময়ে দেখি, তরকারি মিষ্টি মিষ্টি। সহকর্মীর দিকে তাকালাম। ও বলল, ‘একটুখানি।’’

পাকোচ মাছ আর আমড়ার চাটনির সেই হোটেল।

আমরা থাকতাম পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ি নামে একটা জায়গায়। জায়গাটা একেবারে পুরাতন মালদা পুরসভার শেষপ্রান্তে। তার পরেই পঞ্চায়েত এলাকা শুরু। দোকানপাট তেমন ছিল না। বিশেষ করে খাবারের দোকান। তাই হোটেলে একেকদিন না রাঁধলে বেশ মুশকিলে পড়তাম। তখন খেতে যেতে হত বুলবুলির মোড়ে। ইংরেজ বাজারের ৪২০ মোড় থেকে বাম হাতে এগোলে একটা সেতু পড়ে। সেতু পেরিয়ে একটা চারমাথার মোড়। মোড় থেকে ডানহাতি রাস্তা নিয়ে কিছুটা এগোলে আমাদের মেস। যেদিন রান্না হত না আমরা হেঁটে বুলবুলি মোড়ে চলে আসতাম। ঠিক মোড়ের মাথায় একটা দরমার হোটেল ছিল। শস্তার হোটেল। ওই হোটেলে ছোলা দিয়ে কচুর শাকটা দারুণ করত। বোধহয়, ওটা হোটেলের স্পেশ্যাল ছিল। অনেককেই চাইতে দেখতাম। ফুরিয়ে গেলে খদ্দেরের রাগ হতেও দেখেছি। হোটেলটা কিন্তু খুব একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল না। তাতে কী খাবার তো ভাল। মালদায় থাকতেই প্রথম গুজরাটি খাবার খেয়েছিলাম। ধোকলা। নৌকায় মহানন্দা পেরিয়ে বাকিটা হেঁটে নেতাজি মোড়ের কাছে একটা দোকানে ধোকলা পাওয়া যেত।

এ তো গেল আমার একক স্বাদগ্রহণ। দল বেঁধে ঘোরাঘুরির সময়ে কতরকমের খাওয়া শুরু হল। আমাদের প্রথম সফর ভালকি মাচান। যে রকম আমরা যাই। হোটেল ঠিক না করেই বেরিয়ে পড়া। এক দুপুরে হাজির হয়েছিলাম অরণ্যসুন্দরীতে। আমরা চারজন। বন্ধু মিন্টু, আমি, ইন্দ্র আর আমার মেজ ভাই। সেই রিসর্টে দুপুরে খুব সাধারণ খাওয়া খেয়েছিলাম। ভাত, ডাল, ডিম ভাজা আরেকটি কী যেন ভাজা। আর কিছু ছিল না। তাতে অসুবিধে হয়নি। আর ভাতটা ছিল অসাধারণ স্বাদু। মোটা চালের ভাত। মিষ্টি মিষ্টি খেতে। আমরা শহরে দামি চালে সেই স্বাদ পাই না। পরেও একবার ভালকি মাচান গিয়েছিলাম। তখনও দীপু ঘাসপুস হয়নি। শুভ গার্ডবাবু নয়। এরা ছাড়া ছিল ছোটা ডন বাবলা আর ইন্দ্র। সেবার অরণ্যসুন্দরীতে জায়গা মেলেনি। চলে এসেছিলাম এড়ালে মৎস্য দফতরের অতিথি নিবাসে। খেয়েছিলাম বিশেষ সাইজের কাতলা মাছ। ওদের ৫১টা ভেড়ি। সেই ভেড়িরই মাছ। সে মাছের ছালটাই ওমলেটের মতো পুরু। আর স্বাদ। টাটকা এবং বিশাল আকারের মাছ। কেমন হবে ভেবে নিন।

করলা দেওয়া তেতো মুসুর ডাল। মেসে যেমনটা খেতাম। রান্না করে পাঠিয়েছেন সোমা চক্রবর্তীদত্ত। ইনি মালদায় ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’এ আমার প্রাক্তন সহকর্মী।

মলুটি-দুমকা-শিকারিপাড়া সফরের সময়ে নানা জায়গায় খাবারের নানা অভিজ্ঞতা। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। দুমকায় বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক হোটেল দুপুরে ভাত খেয়েছিলাম। সে একেবারে পঞ্চব্যঞ্জনে আহার। ইন্দ্র রুটি খেয়েছিল। ও তরকারি নিয়েছিল আলাদা। ফলে সপ্ত ব্যঞ্জন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে আমার শুধু মনে পড়ে সেঁকা পাপড়ের কথা। ভাতের হোটেলে শেষ পাতে পাপড় অনেক জায়গাতেই খেয়েছি। কিন্তু সবই ভাজা। মুচমুচে সেঁকা পাপড় বেশ লেগেছিল।

বছর দুই আগে ঘাটশিলা ভ্রমণে আবার ভালকি মাচানের দল। তখন দীপু ঘাসপুস, শুভ গার্ডবাবু। ঘুরেছিলাম। গালুডি, বুরুডি। দু’জায়গার দু’টো বিশেষ জিনিস আমাদের প্রাপ্তি ছিল। প্রথমটা গালুডি ড্যাম থেকে ধরা টাটকা পাকোচ মাছ। দ্বিতীয়টা বুরুডির চারদিক খোলা ছাউনির হোটেলের আমড়ার চাটনি। গালুডি থেকে পাকোচ মাছ কিনে হাজির হয়েছিলাম বুরুডির হোটেলে। দুপুরের খাওয়া সেখানেই সারা হয়েছিল। বাকি খাবার সব ভুলে গিয়েছি। কিন্তু ভুলিনি পাকোচ মাছ ভাজা আর আমড়ার চাটনির স্বাদ। সামনের জঙ্গলের বুনো আমড়া। তাতে দেওয়া হয়েছিল ছোট ছোট আকারের লঙ্কা। বেশ ঝাল। টক-ঝালে তোফা স্বাদ। এই লঙ্কা ঝাড়গ্রাম সফরের সময়েও পেয়েছিলাম। ভাতের বা মুড়ির সঙ্গে কাঁচা খেতেও ভাল লাগে। এখনও মনে পড়ে

সবথেকে জঘন্য খাবার খেয়েছিলাম বোধহয় পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের একটা ভাতের হোটেলে। সেবার ইন্দ্র, আমি আর গার্ডবাবু বেগুনকোদরে ভূত ধরতে বেরিয়েছিলাম। হোটেলে পদ অনেক ছিল। কিন্তু কোনওটাই পদের নয়।

নানা জায়গায় নানারকম মাংস খেয়েছি। সবকিছু চেখে দেখার অভ্যাস বহুদিনের। মাধ্যমিকের পরে বর্ষাকালে প্রচুর সোনা ব্যাঙ খেয়েছি। বৃষ্টি হলে দু’চারজন মিলে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম জলায়। এক বস্তা ব্যাঙ ধরা পড়ত। ব্যাঙের শুধু পা দু’টো খাওয়াই দস্তুর। কিন্তু দলে লোক বেশি বলে পাঁজরও নেওয়া হত। তার পর রান্না। বেশ খেতে। নরম পাখির মতো। কেউ বলে পাকা রুই মাছের মতো। মাঝে মাঝে জুটে যেত কুঁচে মাছ। সাপের মতো দেখতে। পাড়ার রাজু কাকা ছাড়িয়ে দিত। ঝাল ঝাল করে রান্না। বেশ ভাল। ছোটবেলায় ডাকপাখি (ডাহুক), বক, কচ্ছপ খেয়েছি। কিন্তু শপথ নিয়ে বলছি, যেদিন থেকে জ্ঞান বেড়েছে ওসবের ধারা কাছে যাইনি।

জয়পুরের জঙ্গলের হোটেলে তিতির আর এমুর জন্য অপেক্ষা। থামের পাশে জুয়েল। তার পর কচি, ইন্দ্র আর দীপু। অরিজিৎও এই সফরে ছিল। ছবিটা ওই তুলেছে।

তবে বৈধ মাংস যা মেলে তা চেখে দেখতে আপত্তি করিনি। আমাদের দলের মুরগি প্রীতি সাংঘাতিক। দেশি মুরগি হলে তো কথাই নেই। বুরুডিতে বিশাল সাইজের একটা দেশি মুরগি কিনে কী বিপত্তি। প্রচুর মাংস। খেতে ভাল। কিন্তু তাকে দাঁতের বাগে আনতে সময় লাগে। তার ছালটাই মোটামুটি রাবড়ির দু’টো পাপড়ির সমান। হ্যাঁ, মুরগির ছাঁট আমরা খাই। দলের ফিস্টিতে বেশ আনন্দ করেই খাই। জয়পুরে গিয়ে জানতে পারলাম সেখানকার এক রিসর্টে নানা ধরনের মাংস পাওয়া যায়। তিতির, টার্কি, এমু। দলে বেশ ভারী ছিলাম জয়পুরে। গার্ডবাবু আর ছোটা ডন ছাড়া সবাই হাজির। সিদ্ধান্ত হল, তিতির আর এমুর মাংস খাওয়া হবে। টার্কি তো কলকাতাতে পাওয়া যায়। আনিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু এমু মিলবে না। কিন্তু বড্ড দাম। তখন আমাদের হাতে অত পয়সা ছিল না। তাই দু’টো মাংস এক প্লেট করে নেওয়া হল। ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। রিসর্টে খাইনি কিন্তু আমরা। খেয়েছিলাম পাশের এক হোটেলে। ওখান থেকে মাংস কিনে আনা হয়েছিল।

এমুর মাংসে তেমন জুত হল না। এমু পাখি হলে কী হবে এর মাংস যে কোনও রেড মিট হিসেবে চালানো যাবে। বেশ শক্ত শক্ত। তবে তিতির ভারী মিষ্টি। নরম। সেই ছোটবেলায় খাওয়া ব্যাঙের মাংসের মতো মনে হচ্ছিল। ছোট ছোট ছ’টুকরো। ছোট মানে অতি ছোট। সেটাই ভাগাভাগি করে খেয়েছিলাম। এমুর দুখখুটা ভুলিয়ে দিয়েছিল তিতির।

কভারের ছবি- দুমকার হোটেলের পাপড় ভাজা। ছবি তুলেছেন শুভ বৈদ্য (কচি)

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *