পাহাড়িয়া বাঁশি বিশেষ ভ্রমণ

গালুডির পাকোচ মাছ আর বুরুডির আমড়ার চাটনি

দীপক দাস

শরীরটা কেমন যেন মাছ মাছ করে উঠল! গালুডি ড্যামের সেতুতে অটো থেকে লাফিয়ে নামলাম। এতদিন ধরে যাঁরা ‘যথা ইচ্ছা…’র সঙ্গে আছেন তাঁরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, আমরা আবার ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছি। শুধু এবারের আমরা কারা তার একটু পরিচয় দিয়ে দেওয়া জরুরি। সময় এবং সুযোগ মতো আমাদের ‘আমরা’ বাড়ে-কমে কিনা।

গালুডি ড্যাম।

তো এবারের আমরা, হাম পাঁচ। সর্বশ্রী ইন্দ্রজিৎ সাউ। যিনি আমাদের অবসরপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী এবং দলের মন্ত্রিত্ব হারানো ফুড মিনিস্টার। দ্বিতীয় জন, সৌগত পাল ওরফে শুভ ওরফে গার্ডবাবু। এবং দলের শিক্ষানবিশ আলোকচিত্রী। তৃতীয় ব্যক্তি ঘাসপুস কে ডক্টর দীপশেখর দাস ওরফে দীপুভাই। বর্তমানে চিফ ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। চতুর্থ এবং পঞ্চম ব্যক্তি ছোটা ডন উরফ বাবলা উরফ বিভাস বাগ এবং আমি। ১৫ অগস্ট ঘুরতে এসেছি ঘাটশিলা। সেসব মিটিয়ে পরদিন গালুডিতে। সিদ্ধেশ্বর পাহাড় থেকে অসাধারণ চারপাশ দেখে এবার জলসীমায়।

মায়াজালে আটকেছে কয়েকটা মাছ।

গালুডি ড্যামের সেতুতে উঠেই দেখি, লোক থইথই। কিছু জন সেতুর সীমানার রেলিংয়ের কাছে নীচের দিকে তাকিয়ে। কেউ কেউ উবু হয়ে বসে। আর কিছু লোক অবাক চোখে সব কিছু দেখছে। আসলে জোর কদমে মাছ ধরা চলছে। আমাদের দলেই রয়েছে বিখ্যাত বঁড়শেল। ছোটা ডন, বাবলা। ওকে লোকে ছিপ ফেলার জন্য ডেকে নিয়ে যায়। আর দীপুও মাঝে মাঝে ঝোঁক দেখায়। মাছ ধরা দেখায় আমাদেরও আগ্রহ প্রবল। সুতরাং অটো থেকে ঝাঁপ।

নদীর বুকে খাপলা জালে ফেলা চলছে।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বুঝে গেলাম এখানে তিন ধরনের কায়দায় মাছ ধরা চলছে। একদল লম্বাটে জাল সেতুর ওপর থেকে ছুড়ে দিচ্ছে সুবর্ণরেখার বুকে। জালের সামনে ভারী কিছু বাঁধা। এবং জলে জাল ভাসিয়ে রাখার জন্য তাতে প্লাস্টিকের বেশ কয়েকটি বোতল বাঁধা। সুবর্ণরেখাকে এখানে বাঁধ দিয়ে বাঁধা হয়েছে। জলাধারের একাধিক গেট খোলা। প্রবল তোড়ে জল নামছে। আর সেই স্রোতের বাধা কাটিয়ে উল্টোদিকে যেতে চাওয়া মাছেরা আটকে যাচ্ছে জালে। মাছ শিকারিরা তো বটেই আশপাশের বহু লোক ঝুঁকে পড়ে মাছ ধরা দেখছেন।

উল্টোদিকেও মাছ ধরা চলছে। তবে পদ্ধতি আলাদা। জাল ছুড়ে যেদিকে মাছ ধরা চলছে সেদিকের স্রোত পেরিয়ে কিছু মাছ এদিকে চলে আসছে। সেগুলোকে ধরার জন্য জলাধারের খোলা গেটে চৌকনো জাল পাতা হয়েছে। মাছেরা গেটে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে উঠলেই গিয়ে পড়ছে চৌকনো জালে। কায়দাটা অনেকটাই মায়াজালের মতো। আরেক দল একেবারে নদীর মাঝে নেমে গিয়েছেন। তাঁদের আবার দু’টো ভাগ। একদল অল্প জলে দাঁড়িয়ে খাপলা জাল ফেলছেন। সার সার দাঁড়িয়ে থাকা ধীবরদের জাল ফেলা অসাধারণ লাগছিল। আরেক দল বড় বড় টিউব ভাসিয়ে জাল ফেলছেন।

আমাদের মনোহারী পাকোচ।

সেতুর ওপরে জটলা ঘিরে মাছ আর মাছ। নদীর মাছ। ঝকঝক করছে গা। দেখেই লোভ লাগে। ততক্ষণে আমাদের আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। নদীতে একটুও দূষণ নেই। টাটকা মাছ। খেতে নিশ্চয় ভালই হবে। তাছাড়া একটা মাছ আমাদের মন হরণ করে নিয়েছে। স্থানীয় নাম পাকোচ। অনেকটা বাটার মতোই দেখতে। কিন্তু শরীরের গঠন বাটার থেকে কিছুটা আলাদা। বাটার শরীর সরল। পাকোচের নৌকার মতো। আর ওপরের ঠোঁটের থেকে নীচের ঠোঁট ছোট।

নতুন খাবারের দিকে আমাদের বরাবরের ঝোঁক। স্থানীয় খাবার চাখবই। ফলে পুরো দলটারই শরীর-মন মাছ মাছ করতে শুরু করল। কিন্তু কিনলেই তো হল না। খাব কী করে? বরফে প্যাকিং করে দিলে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসা যাবে। কিন্তু তাতে তো টাটকা স্বাদটা পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া প্যাকিং করে বিক্রির ব্যবস্থাও নেই। তবে মাছ প্যাকিং হচ্ছে। বড় বড় থার্মোকলের বাক্সে মাছ প্যাকিং করা হচ্ছে। তার পর বাইকে চাপিয়ে কিছু লোক সেসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। খোঁজ নেওয়া গেল। আশেপাশে তেমন ভাল বাজার নেই। ওই সব মাছ চলে যাবে ওড়িশায়। গালুডি ঝাড়খণ্ডে। এখান থেকে ঘণ্টা দুয়েক পরেই একটা বাজার আছে। সেখান থেকে চালান যাবে। মাছ ধরা, চালান করা এসবই এখানকার কিছু লোকের জীবিকা। সুবর্ণরেখা বাঁচিয়ে রেখেছে অনেকজনকে।

আমার আন্দিজ।

কিন্তু মাছ খাওয়া? অটোর চালক বাপিদাকে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, বুরুডি ড্যামে নিয়ে গেলে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বুরুডি গতকালই ঘুরে নিয়েছি। অসাধারণ জায়গা। ড্যামে পৌঁছনোর আগের রাস্তার দু’পাশে প্রকৃতি নিজেকে ঢেলে সাজিয়ে রেখেছে। ড্যামের কাছে খড়ের চালের খোলামেলা কিছু হোটেল আছে। তাদেরই একটায় খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বাপিদা। সেখানে আজ মাছের সদগতি হয়ে যাবে।

কিন্তু আজ তো আবার আমাদের ট্রেন ধরা আছে। ঘাটশিলা থেকে ধরতে হবে। কখন বুরুডি যাওয়া হবে আর কখন মাছ কেটেকুটে ভাজা হবে! তার পর সেই মাছ খেয়ে ঘাটশিলায় ফেরা। ট্রেন না পেলে? বাতিল হয়ে গেল মাছ খাওয়ার প্রস্তাব। কিন্তু ইন্দ্র খাবেই। ঘ্যানঘ্যান করতে শুরু করল। আমাদেরও যে ইচ্ছে ছিল না তা নয়। সময়টাই বাধা। ইন্দ্র নিজেই বলল, এই তো মাত্র আড়াইটে বাজে। কতক্ষণ লাগবে। ইন্দ্রর কতক্ষণ লাগবে কথাটা নিয়ে আমরা ভাবিত নই। কারণ ও এসব বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান শূন্য। কিন্তু আড়াইটেতে সমস্যা। ঝুঁকি হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত নিতে না নিতে ঝেঁপে বৃষ্টি নামল। এবারের সফরে বৃষ্টি আমাদের পিছু ছাড়েনি। একটাই ছাতা। তার তলায় চারজন আঁটা জাদুকরের টুপিতে হাতি ঢোকানোর মতো ব্যাপার। তার ওপর ঝাপটা। দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। ছাতা গেল উল্টে।

পথের পাশে।

ভিজতে ভিজতে অটোয় গিয়ে সেঁধালাম। বাপিদা জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা মাছ খাব কিনা। বললাম ছেড়ে দিন, আড়াইটে বাজে। উনি অবাক হলেন। মোবাইল দেখে বললেন, আড়াইটে! সাড়ে বারোটা বাজে। তখন তো সকলে মিলে ইন্দ্রকে এই মারে কী সেই মারে। কিন্তু ওর তাতে কিছু গেল এল না। নানা সময়ে আমাদের বিপাকে ফেলে যেমন হাসে তেমনি হাসতে থাকল। তার পর ফিচেল হাসিটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখে বলল, ‘ওষুধ খাচ্ছি তো। মাথার ঠিক নেই।’ ও জ্বর নিয়ে ঘুরতে এসেছে। সময় নিয়ে বিতণ্ডার সময়ে অনেকের মনে হতে লাগল, তাই তো। কখন ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে ফেললাম বুঝতেই পারছিলাম না। কিন্তু আমরা তো আর ওষুধ খাইনি। কীসের প্রভাব? মাথায় অক্সিজেন যাচ্ছিল না বোধহয়।

বৃষ্টি থামল। এবং আমাদের মাছের লোভ আবার চাগাড় দিয়ে উঠল। বাপিদা বুরুডির হোটেলে ফোন করে দিলেন। আমরা জবজবে ভিজে পোশাকে মাছ কিনতে গেলাম। পর্যটক দেখে স্থানীয়রা যা করেন আরকী। ১০০ টাকা কেজি হাঁকলেন। দরাদরি করে ৮০ হল। বেশির ভাগই পাকোচ নিলাম। ইন্দ্রর চাপাচাপিতে কিছু বাটাও নেওয়া হল। বাটা তো খাই বাড়িতেও। ইন্দ্রর মত, এটা নদীর বাটা।…

বুরুডির কাছে।

ভাগ্যিস মাছ কিনেছিলাম। না হলে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে বঞ্চিত হতে হত। গালুডির দৃশ্য তো অসাধারণ। বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি যেন আরও সবুজ হয়ে উঠেছিল। ড্যামের একদিকে শান্ত জলরাশি। দূরে পাহাড়। আরেকদিকে প্রবল বেগে বওয়া সুবর্ণরেখায় ঝুঁকে আছে মেঘের দল। এদিকেও দূরে পাহাড়। সেই পাহাড়ের মাথা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। আমার আন্দিজ পর্বতের কথা মনে হচ্ছিল। লেখার সময় ছবি বাছতে গিয়ে সে কথা বলতে দেখি, দীপু ফিক ফিক করে হাসছে। মানে তুলনাটা পছন্দ হয়নি। যেন ও আন্দিজ পর্বতে ঘুরে এসেছে। আর আমার মতো বাঙালের আহ্লাদ দেখে তুচ্ছতাচ্ছিল করছে।

গালুডি ছাড়িয়ে কিছুটা যাওয়ার পরে আবার সেই আন্দিজ। অনেক দূরের পাহাড়ের কোল দিয়ে একটা মাল ট্রেন চলেছে। ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে। পাহাড়ের একদিকে মেঘের ছায়া। কিছুটা ধোঁয়ার মতো মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। একদিকে আলো। এমন রাস্তা দিয়ে রোজ ট্রেনে করে যাওয়া গার্ড আর চালক কী সৌভাগ্যবান। কিন্তু গার্ডের কামরার বাইরের ছাউনিতে কাউকে দেখা গেল না। এই রূপের সামনে কেউ নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখতে পারে? আপনা থেকেই নিজেকে সমর্পন করার কথা। আমাদের গার্ডবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম, ট্রেনে তুই দেখিস প্রকৃতির রূপ? ও হ্যাঁ বলল। তাহলে গার্ডবাবু দেখছে না কেন? বোধহয় ব্যস্ত আছে। আমাদের গার্ডবাবুর উত্তর।

বুরুডির উপরে।

যেতে যেতে আবার বৃষ্টি নামল। আবার এক দফা ভেজা। তার পর বুরুডি পৌঁছনো। মাছ হোটেল মালিকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা ঘুরতে চলে গেলাম। বুরুডির হ্রদের জলে মেঘের খেলা। পাহাড়ের ওপরে মেঘের ছায়া। আমরা তখন হ্রদের পাথর বাঁধানো পাড়ে শুয়ে পড়েছি। বাতাস বইছে। অল্প অল্প ঢেউ পাথরে এসে ধাক্কা মারছে। কিছু লোক মাছ ধরছে। কিছু জন দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেলফি মগ্ন দু’চার যুগল। আমি ভাবছিলাম এমন জায়গায় বাড়ি করলে কেমন হয়? দীপু বলল, ‘বাবলা একটা রবিবার ছিপ ফেলতে আসব, বুঝলি। সকালে জনশতাব্দীতে চেপে পড়ব। এখানে ১০টার মধ্যে পৌঁছে যাব। চারটে পর্যন্ত ছিপ ফেলে বিকেলের জনশতাব্দীতে আবার ফিরে যাওয়া যাবে।’ যার যা চিন্তা। গার্ডবাবু মুখ খোলেনি। খুললে হয়তো বলত, ঘাটশিলায় মালগাড়িটা শান্টিং করে এখানে এসে কিছু ছবি তুলতাম। হেব্বি প্রোফাইল পিকচার হত।

আড্ডা মারতে মারতেই খাবারের ডাক এল। ভাত, ডাল, সবজি আর থালা ভরা মাছ ভাজা। দারুণ স্বাদ। খেতে খেতেই দীপু একটা রেসেপি আবিষ্কার করে ফেলল। বলল, ‘চাটনিটা দিয়ে মাছ ভাজা খাও। দারুণ।’ চাটনিটা দারুণ, এটা খেয়েই বুঝেছি। হোটেলটা চালান এক বাঙালি পরিবার। স্বামী-স্ত্রী মিলে। দম্পতির এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে ছোট। ছেলেটা বারো তেরো বছরের। দেখলাম স্কুল শেষে হোটেলেই এসে বসেছে। বাড়িতে তো কেউ নেই। দম্পতির রান্নার হাতটি বেশ। গতকাল জম্পেশ করে দেশি মুরগি রান্না করেছিলেন। আজও রান্না ভাল করেছেন। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে আমড়ার চাটনি।

বুরুডি।

আমি আর চালকদাদা উঠে পড়েছিলাম। বাকিরা তখনও খাচ্ছে। আমি চাটনির রেসিপি জানতে চাইলাম। বললেন। আমড়া, কাঁচা লঙ্কা, আর চাটনির যা ফোড়ন। তাতেই এত স্বাদ! আমড়ার চাটনি তো আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই হয়। তাহলে? উত্তর মিলল। এই আমড়া এখানকার জঙ্গলের। আর এখানে এক ধরনের ছোট লঙ্কা পাওয়া যায়। খুব ঝাল, কিন্তু আলাদা স্বাদের। দারুণ খেতে। আমরা তো গতকাল কিছু লঙ্কা নিয়ে গিয়েছিলাম এখান থেকে। রাতে রুটি মাংস দিয়ে খাব বলে। দারুণ লেগেছিল। বুঝলাম, রেসিপি জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই। এই দু’টো উপকরণ আর দম্পতির হাতের গুণের মিশেল না ঘটলে চাটনি উতরোবে না। আর চাটনি কীসে পরিবেশন করা হয়েছিল? কাঁচা শালপাতায়। উফ! লেখার কি বোর্ড ভিজে গেল জিভের জলে।

চাটনির প্রশংসা শোনাচ্ছিলাম হোটেল দম্পতিকে। সেই সময়ে কানে এল ইন্দ্রর গলা, ‘আর কেউ চাটনি নেবে?’ এ কথার মানে আমাদের চির চেনা। ও আরেকটু চাটনি খাবে। কিন্তু নিজে বলতে লজ্জা পাচ্ছে। বললাম, ‘তুই নিবি?’ ও মাথা নাড়ল লাজুক মুখে। সঙ্গে সঙ্গে দীপু, বাবলা চেঁচিয়ে উঠল, যে খাবে সে বলবে। বেচারা আর কী করে! আলতো গলায় বলল, ‘আরেকটু চাটনি দিন তো।’

শালপাতায় আবার চাটনি এল। ইন্দ্র নেওয়ার পরে দেখি, দীপু, বাবলা, শুভও নিল। তারপর আবার পাকোচের গায়ে চাটনির প্রলেপ। তবুও মাছ শেষ করা যায়নি। পেট ভরা পাকোচ!

ছবি— দীপশেখর দাস, সৌগত পাল এবং ইন্দ্রজিৎ সাউ

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *