ইতিহাস ছুঁয়ে বিশেষ ভ্রমণ

ছান্দারে ছন্নছাড়ারা

দীপক দাস

পোকাটা নড়ে উঠেছিল বাসের গায়ে লেখা দেখে।

দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দুপুর। এক পেট খেয়ে ঘর খোঁজার তালে ছিলাম আমরা। দেখি, একটা বাসে লেখা, বেলিয়াতোড়। সপ্তমীর সকাল থেকে বাঁকুড়ার অনেকটা অংশ চষে ফেলেছি। ছাতনা, কবি চণ্ডীদাসের বাসুলী মন্দির, শুশুনিয়া পাহাড়, যমধারার জঙ্গল, বিহারীনাথ, মুকুটমণিপুর হয়ে বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে। এবার হোটেল খুঁজে মালপত্র রেখে বিশ্রাম। রাতে বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে ঘুরে সকালে ট্রেন ধরব।

বড়ু চণ্ডীদাসের বাসুলী মন্দির। ছাতনা।

বাঁকুড়াই আমাদের গ্রুপের প্রথম দূরভ্রমণ। এবং আমাদের গুবলেটেশ্বর ইন্দ্রর হাতে নির্যাতিত হওয়ার শুরুও। দিনক্ষণ গুলিয়ে, ভুল দিনে টিকিট কেটে, তারপর সেগুলো বাতিল করে যাত্রার শুরুতেই বেশ কিছু টাকা গচ্ছা দিতে বাধ্য করেছেন। তারপর ফেরার টিকিটগুলোও রাতের ট্রেনের না করে করেছেন পরের দিন সকালে। ফলে পাঁচজনের রাতের হোটেল ভাড়াটাও ওর ভুলের মাসুল হিসাবে দিতে হবে।

পাঁচজন মানে ইন্দ্র, বাবলা, কৃষ্ণ, আমি আর আমার মেজ সহোদর। দীপু আর শুভর আসার কথা ছিল। কিন্তু মানসিক এবং পরিস্থিতির চাপে শেষ মুহূর্তে তারা ক্ষান্ত দিয়েছে। সহঅভিযাত্রীদের কাছে প্রস্তাব দিলাম, ‘যাবি নাকি বেলিয়াতোড়?’ দু’একজন বেলিয়াতোড় কী এবং কেন জাতীয় মুখ করে তাকিয়েছিল। বললাম, ‘যামিনী রায়ের বাড়ি।’ যামিনী রায়কে ওরা চেনে। জানে, পটলচেরা চোখের দুর্গা-গণেশ আঁকেন শিল্পীটি। আঁকায় কালীঘাটের পটের ছোঁয়া।

শুশুনিয়া মোড়ে চণ্ডীদাসের মূর্তি।

আমি জানি, আমাদের গ্রাম পাতিহালের সঙ্গে যামিনী রায়ের স্মৃতি জড়িত। উনি অনেকবার এসেছেন আমাদের গ্রামে। কবি বিষ্ণু দের ঘনিষ্ঠ শিল্পীবন্ধু আমাদের গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়কে তাঁর আঁকা একটি ছবি উপহার দিয়েছিলেন। সেই ছবিতে অবশ্য পরিচিত যামিনী রায়কে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অন্য শৈলীর। বিষ্ণু দে তাঁর কবিতা সংগ্রহে যামিনী রায়ের সঙ্গে পাতিহালে আসার বিস্তৃত স্মৃতিচারণ করেছেন। অনেক মজার স্মৃতি।

শিল্পী আমাদের গ্রামে গিয়েছেন আর আমরা এতদূর এসে তাঁর গ্রামে যাব না? আসা-যাওয়ায় বন্ধন বাড়ে। সামাজিকতার নিয়মই তো তাই। সুতরাং হোটেলে লটবহর রেখে এসে উঠে পড়লাম বেলিয়াতোড়গামী বাসে। বাঁকুড়া থেকে খুব বেশি দূরে নয়। পড়ন্ত বিকেলে নামলাম বেলিয়াতোড়ে। গ্রামাঞ্চলের বাজার এলাকা যেমন হয় এলাকাটি সেরকম। রাস্তাঘাট ভাল। এখান থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া যায় বলে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বেশি। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে করে এগোচ্ছিলাম শিল্পীর বাড়ির দিকে। নির্দেশিত পথে পাঁচজনে গিয়ে পৌঁছলাম এক প্রাসাদ-গলির ভিতর। যে গলির আগেপিছে পুরনো দিনের বিশাল বিশাল মহল। এক জায়গায় পুজো হচ্ছে। বনেদি পুজো। কিন্তু শিল্পীর বাড়ি কোনটা? এক বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জানালেন, আমরা ওঁর বাড়ি ছাড়িয়ে চলে এসেছি। পশ্চাদাপসরণ করতে হবে।

যমধারার জঙ্গলে।

রিট্রিট শুরু হল। সেইসময় এক প্রৌঢ় আমাদের সহায় হলেন। পিছু হাঁটতে হাঁটতে আলাপচারিতা চলল। কোথায় বাড়ি, কেন এসেছি, আঁকাটাকি নাকি? ইত্যাদি প্রশ্নের পরে তিনি মোক্ষম কথাটি বললেন, ‘কিন্তু ওই বাড়িতে তো কেউ থাকে না। যামিনী রায়ের ছেলে তো কলকাতায় থাকেন। গেটে তালা দেওয়া।’ তাহলে কী হবে? বিপদে ফেলে ভদ্রলোক নিজেই আবার সমাধানের পথ বাতলে দিলেন। জানালেন, শিল্পীর বাড়ির চাবি পাশের একটি পরিবারকে নাকি দেওয়া থাকে। শিল্পীর বাড়িতে ঢোকার ব্যবস্থাটি একটু অন্যরকম। ঢোকার পথটি শুরু হচ্ছে রাস্তার কাছ থেকে। কিন্তু সেই পথের দু’পাশে পাঁচিল তোলা। ফলে একটা গলিমতো পথ তৈরি হয়েছে। সেই পথ পেরিয়ে কারখানার মতো বড় একটি গেট। সেটা খুললে তবেই যামিনী রায়ের বাড়ি দর্শন করা যাবে। কিন্তু সেই পর্যন্ত পৌঁছনোই মুশকিল। কারণ পথের পাশে, পাঁচিলের গলি শুরুর মুখেই গ্রিলের গেট। সেই গেটে তালা দেওয়া। সাহায্যকারী ভদ্রলোক তখন চাবিধারী পরিবারের একজনকে খুঁজে এনেছেন। তাঁর নাম ভোলা। জল নিয়ে ফিরছিলেন। বালতি রেখে জানালেন, তাঁর কাছে চাবি নেই। আর ভিতরে ঢুকলে নাকি শিল্পীর ছেলে রাগ করেন।

কী মুশকিল! তরী শেষে চাবিতে আটকাবে নাকি? ভোলাবাবুই বুদ্ধি বাতলালেন, ‘গ্রিল টপকে ঢুকে যান।’ গ্রিলের গেটটার দিকে একবার তাকালাম। গেটের মাথায় নানা আকারের শূল মাথা উঁচু করে আছে। কোনওরকম ভাবে পদস্খলন হলেই ব্যাস। শূলবিদ্ধ। জায়গা মতো গাঁথলে সর্বনাশ! তাছাড়া যুগটাও বিলহনের ‘চৌরপঞ্চশিকা’র নয়। আমি শূলবিদ্ধ হলাম। আমার চারদিকে ভিড় জমে গেল। আর সেই ভিড় থেকে স্থানীয় কোনও ধনীকন্যা বলে উঠলেন, ‘ওই শূলপক্ক যুবাই আমার প্রাণেশ্বর।’ শূলপক্ক নয়, ওটা শূলবিদ্ধ হবে। তবে ওইরকম সূচালো লোহার জিনিসটা বিঁধলে রেস্তোরাঁয় শিকে গাঁথা মুরগির মতোই পক্ক হয়ে উঠব তাতে সন্দেহ নেই।

সেই শূল টপকানো।

শূলবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় আমার নিখিলেশদার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আমার অনেক গুরুর এক গুরু উনি। নিখিলেশদা একটা গল্প বলেছিলেন। একজনকে শূলে চড়ানোর প্রস্তুতির গল্প। অপরাধীকে শূলে চড়ানোর আয়োজন চলছে। রক্ষীরা বাঁশ ছুলে তীক্ষ্ণ করছে, তাতে চর্বি মাখিয়ে তেলতেলে করছে আর লোকজন ভিড় করে সেসব দেখছে। শাস্তির দিনে আরও ভিড়। শূলে চড়ানো বিষয়টি যতই নিষ্ঠুর হোক না কেন মানুষ তাতে নাকি একধরনের আমোদই পায়। যামিনী রায়ের বাড়ির গ্রিলে আমি শূলে চড়লে লোকেও হয়তো ওইরকমই আনন্দ পাবে। ভিড় থেকে অতি কৌতূহলী কেউ হয়তো এগিয়ে এসে উঁকি দিয়ে দেখে বলে বসল, ‘হুঁ, বহত দূর তক ঘুস গয়া।’

অনেক টানাপড়েন পেরিয়ে গ্রিল পার হলাম। প্রথমে বাবলা, তারপর আমি। তারপর কৃষ্ণ আর ইন্দ্র। পদস্খলন হয়নি। আমার মেজ সহোদর ঝুঁকি নেয়নি। কারখানার গেটের মতো গেটটা ঠেলে ঢুকলাম ভিতরে। ছিমছাম একতলা একটা বাড়ি। তার চারপাশে খোলা চত্বর। চৌহদ্দিতে একটা বিশাল কদমগাছ। তার ফুল পড়ে চত্বরটা ভরে গিয়েছে। পচা ফুল একরকমের মাদকতা ছড়াচ্ছে। বাড়ির পিছন দিকে, পাশে কয়েকটা ফুলের গাছ। সামনের অংশটায় আগাছা পরিষ্কার করা হলেও অযত্নের ছাপ মোছা যায়নি। ঘুরেফিরে বেরিয়ে এলাম। একটু মন খারাপই হয়ে গেল। স্মৃতি ধরে রাখতে বাঙালি চিরকালই একটু পিছিয়ে।

বেলিয়াতোড় অভিযানে মন ভরল না। স্মৃতির পোকাটা কুটুস কুটুস কামড়াচ্ছে। আর সেই কামড়ে ছান্দার নামে একটা গ্রাম ভেসে উঠছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, ছবির গ্রাম ছান্দার। সেখানে খেজুর গাছেও থাকে শিল্পীর হাতের ছোঁয়া। একজন সেখানে শিল্পচর্চার কেন্দ্র গড়েছেন। সেটা এখান থেকে কতদূরে? জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, বেশি দূর নয়। ট্রেকারে করে একটুখানি।

যামিনী রায়ের বাড়ি।

ট্রেকারের গুটিকয় আসন ফাঁকা ছিল। পাঁচজনে দখল করলাম। বোঝাই না হলে ট্রেকার ছাড়বে না। যত সময় এগোচ্ছিল ট্রেকারে ভিড় ততই বাড়ছিল। আমরা তো সিঁটিয়ে বসে আছি। গোলগাল ইন্দ্র আর কৃষ্ণের অবস্থা খারাপ। চারিদিকের প্রবল চাপে প্লাস্টিকের পেপারে চেপে ঢোকানো রসগোল্লার মতো চুপসে গিয়েছে দু’জনে। ভিতরে যদি কোনও চামচিকেও যাত্রী হতে চায়, বসার যায়গা পাবে না। তবুও লোক উঠছে। যাত্রীরা আসছে আর পাদানিতে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ছাদেও লোক। চালক মাঝে মাঝে এসে দেখে যাচ্ছেন। মনে হল, বাইরে থেকে ট্রেকারের একটুখানিও যদি চোখে পড়ে তিনি ট্রেকার ছাড়বেন না। যাত্রী দিয়ে ট্রেকার চাপা দেবেন তবেই নড়বেন। ভাড়াটাও বেশি, মাথাপিছু ২০ টাকা।

এদিকে আমাদের তো প্রবল সংশয়। গ্রামটা এদিকেই তো? অনেক দূর নয় তো? ফিরে এসে আবার বাঁকুড়া ফেরার বাস মিলবে তো? নিজেদের মধ্যে এইসব নিয়ে আলোচনা করছি হঠাৎ একজন আমাদের আলোচনার মধ্যে ঢুকে পড়লেন, ‘ছান্দার যাবেন তো? এই তো একটুখানি।’ কতটা? হেঁটে গেলে ১০ মিনিট লাগবে। গ্রামের ছেলে হয়ে ১০ মিনিট হাঁটতে পারব না? ইন্দ্র বলল, ‘ওইটুকু হাঁটার জন্য ২০ টাকা করে খরচ! ওই পয়সায় আমরা খেতে খেতে হেঁটে নেব।’ মিছিল করে পাঁচজন নেমে এলাম। তারপর শুরু হল হাঁটা। বাজার এলাকাটা শেষে একটা মিষ্টির দোকান। তার কিছুটা দূর থেকেই মাঠ শুরু হচ্ছে। অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয়নি। দোকানের দিকে এগিয়ে গেল আমাদের দলের টেস্টার, ইন্দ্র। নির্দেশ দিল, একটা শিঙাড়া। ভাল লাগলে তারপর অন্যদের জন্য অর্ডার। বাবলা সরল মনে বলল, ‘আমরাও টেস্ট করব।’ শুনে গোসা হল ইন্দ্রের। শিঙাড়া মিষ্টি খেয়ে আবার হাঁটা। ডামাডোলের মধ্যে ভুলেই গিয়েছিলাম, বেলিয়াতোড়ের প্রসিদ্ধ মিষ্টি ম্যাচার কথা।

অভিব্যক্তির প্রবেশপথ।

হাঁটতে হাঁটতে মালুম হল, যেটাকে মাঠ ভাবছিলাম সেটা আসলে প্রান্তর। আর সেই প্রান্তর পেরোতে গেলে গলা থেকে আপনিই ‘কত দূর আর কত দূর বল মা’ বেরিয়ে আসবে। এদিকে সন্ধে নেমে আসবে। আমরা তো কিছু দেখতে পাব না। ছবিও তোলা যাবে না। স্মৃতিও থাকবে না। একটা বাইক থামিয়ে অনুরোধ করা হল। সেই সুদূর হাওড়া থেকে তাঁদের গ্রামে আসছি শুনে ইন্দ্রকে নিয়ে যেতে রাজি হলেন তিনি। ওর ক্যামেরা আছে তো। বাকিরা হাঁটছি।… নাদুসনুদুস কৃষ্ণ একটু পিছিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ পরে দেখি, ও সাইকেলে একটা বাচ্চাকে চাপিয়ে এগিয়ে গেল। তারপরের কাহিনীটা পঞ্চতন্ত্র থেকে আহরিত। সেই একটা ভালুক আর দুই বন্ধুর গল্পটা। কিছুক্ষণ পরে আমিও একটা বাচ্চা, একটা সাইকেল…টা টা। হাঁটছিল দলের বাকি দু’জন। একজন আমার ভাই আর একজন আমার টিউশন কালের প্রথম যুগের ছাত্র।

যে লক্ষ্যে আমরা যাত্রা করেছি সেটা আসলে একটি শিল্প-সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র। নাম ‘অভিব্যক্তি’। প্রতিষ্ঠাতা উৎপল চক্রবর্তী। স্থানীয় আদিবাসী চিত্রকলা, সংস্কৃতির সংরক্ষণ, প্রসারের কাজ করে ‘অভিব্যক্তি’। সে এক আকরকেন্দ্র। আঁকা ছবি, হাতের কাজ, সাজানো সংগ্রহ। ইন্দ্র ছবি তুলছিল আর বলছিল, ‘খনি খনি’। দেখলাম, নামী শিল্পী-কবিদের যাতায়াত আছে এখানে। শিল্পকর্মে, প্রতিষ্ঠানটির কাজের স্বীকৃতিতে লেখা বাক্যে তারই ছবি।

স্থানীয় শিল্পীর কাজ।

কত নাম বলব! যতই নাম লিখি, ঠিক দু’চারজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী-সাহিত্যিক বাদ পড়ে যাবেন। তাতে তাঁদের অসম্মান করা হবে। দেখা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রাণপুরুষ উৎপল চক্রবর্তীর সঙ্গে। অনেক কথা। স্থানীয় বিএড কলেজের শিক্ষকতা করতে কলকাতা থেকে ছান্দারে এসেছিলেন উৎপলবাবু। আর ফিরে যাননি। এখানকার মানুষকেই আপন করে নিয়েছেন। তিনি এলাকায় সম্মানীয় ‘ছোটদা’। আদিবাসীদের মধ্যে শিল্পীসত্তা খোঁজেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন। লালন করেন। আমার শিল্পবোধ প্রখর নয়। লিখে বোঝাতে পারব না ওঁর কাজের বহর। কিন্তু সেদিন ভাললাগায় ভরে উঠেছিল মনটা। ভাই আর বাবলারও। হাঁটার কষ্ট ভুলেছিল ওরা।

অভিব্যক্তির প্রাণপুরুষ উৎপল চক্রবর্তী।

আরও একটা বিষয়ে খুশি হয়েছিলাম, উৎপলবাবু আমাদের পাতিহালের নাম জানেন। এই অঞ্চলের অনেক কিছুই তাঁর পরিচিত। কথা হল, উৎপলবাবুকে একবার আমাদের গ্রামে নিয়ে আসব। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। যা হয় আরকী। একবার ছেড়ে এলে স্মৃতি ছাড়া সকলেই পিছনে পড়ে থাকে।

ফেরার সময়ে উৎপলবাবু এক সহযোগীকে দিয়ে ছান্দার স্টেশনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে আরেক গল্প। মশাগ্রাম-বাঁকুড়া লাইনের ছিমছাম একটা স্টেশন। উঁচু ঢিবিতে টিকিট কাউন্টার। নীচে প্ল্যাটফর্ম। সেখানে টিমটিম করে হলুদ বালবের আলো জ্বলছে। সেই আলোয় স্টেশনের অন্ধকার দূর হয়নি। টিকিট কাটব। কিন্তু কাউন্টার খোলেনি। হাতে একটু সময় আছে। ওরা চপের খোঁজে গেল। কিন্তু কিছু চানামশলা নিয়ে ফিরে এল। বলল, ট্রেন আসছে বলে নাকি চপ দিতে চাইলেন না দোকানি। ওদের দাবি, চপের দোকানি ট্রেন এলে গেটম্যান হয়ে যান। বাকি সময়টা তেলেভাজা বিক্রি করেন। আমার বিশ্বাস হয়নি। ওরা মজা করছিল বোধহয়।

বাঁকুড়া স্টেশনে বুলেট ট্রেন।

ততক্ষণে বুকিং ক্লার্ক এসে গিয়েছেন। ঝুল পড়া ঘরের সামনে দাঁড়ালাম। ভদ্রলোক কোনও কারণে বেজায় খুশি। গুনগুন করে ‘ঝলক দিখলাজা’ গাইছেন আর ধপাধপ করে টিকিটে স্ট্যাম্প মারছেন। সাত সন্ধেয় কোথা থেকে কী ঝলক দেখে এসেছেন কে জানে!…

ট্রেন দেখে মন ভরে গেল। বুলেট ট্রেনের মতো দেখতে। বাঁকুড়া চলে এলাম।

এত স্মৃতি। মঙ্গলবারের আড্ডায় এখনও মাঝে মাঝে ছান্দারের কথা ওঠে। কিন্তু উঠলেই আমি তাড়াতাড়ি অন্য কথা পাড়ি। বাবলা বা আমার ভাই যদি জিজ্ঞাসা করে বসে, বড়দা সেই ভালুক আর দুই বন্ধুর গল্পটা কী ছিল যেন…

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *