অন্য সফর

একটি ভূতুড়ে স্টেশন আর তিন শঙ্করের কাহিনি

দীপক দাস

বাঙালি ছেলেদেরও মুখ ফোটে না। বুকটা খর নিদাঘে নির্জলা জমির মতো ফুটিফাটা হলেও। এতদিন জানতাম, বুক আর মুখের এই বৈপরীত্যে মেয়েদেরই একচেটিয়া। কিন্তু এবারের অভিযানে বোধ হল, সেটির লিঙ্গান্তর ঘটেছে।

এবার পুজোয় বেগুনকোদর অভিযান করা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। পুরুলিয়ার এক ‘কুখ্যাত’ স্টেশন। সেখানে নাকি ভূত দেখা যায়। ভূত নয়, পেত্নী। সাদা শাড়ি পরা পেত্নীটি রেললাইনে, স্টেশনে ঘুরে ঘুরে নেচে বেড়ায়। বেশ পুরনো আত্মা। অন্তত বিবিসি, ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গল্পকথার শুরু ১৯৬৭ সালে। সেইসময়ে বেগুনকোদর স্টেশনের এক কর্মী পেত্নীটিকে প্রথম দেখেন। তিনি গ্রামবাসীদের বলেন সেই পেত্নীদর্শনের কথা। কয়েকদিন পরে আচমকাই মারা যান রেলকর্মীটি। গুজব ছড়াতে থাকে, তাঁকে খুন করেছে পেত্নীটি। পেত্নীটির জন্ম কাহিনীও দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনগুলোয়। খুবই সাদামাটা সে কাহিনী। স্থানীয় কোনও মহিলা নাকি রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়েছিল। তারপর সে পেত্নী হয়ে স্টেশনেই রয়ে যায় আর রাত হলে সাদা শাড়ি পরে নিয়ে রেলকর্মী-স্থানীয়দের ভয় দেখায়।

আরেকটি বাংলা সংবাদ ওয়েবসাইটের খবর আরও সাংঘাতিক। সে একেবারে খুনখারাবি ব্যাপার। ওই স্টেশনে নাকি বহুদিন আগে গভীর রাতে খুন হয়েছিলেন স্টেশনমাস্টার এবং তাঁর স্ত্রী। স্টেশনের এক পাতকুয়ার মধ্যে উদ্ধার হয়েছিল তাঁদের দেহ। তারপর থেকেই নাকি অশরীরীর উৎপাত শুরু। লক্ষণীয়, ওয়েবসাইটটি অশরীরী উৎপাতের কথা লিখেছে। অশরীরীদের নয়। অথচ বহুবচনে লেখাই উচিত ছিল। কারণ খুন হয়েছিলেন দু’জন। তাহলে কি স্টেশনমাস্টার ভাল ভূত হয়ে গিয়েছিলেন? তাই মুক্তি পেয়ে এলাকা ছেড়েছিলেন? আর তাঁর স্ত্রী এলাকার কোনও বাড়ি থেকে সাদা শাড়ি জোগাড় করে লোকজনদের ভয় দেখাতে স্টেশনে রয়ে গিয়েছিলেন? মানে সাদা শাড়ি এইভাবে না জোগাড় করে তো উপায় নেই! খুন হওয়ার সময়ে ওই মহিলা নিশ্চয় সাদা শাড়ি পরে ছিলেন না।

ভাবছি, কোনও এক মঙ্গলবার ঘুরতে না বেরিয়ে প্ল্যানচেট করব। জোড়া প্ল্যানচেট। আহ্বান করা হবে থিয়োসফিকাল সোসাইটির মাদাম ব্লাভাটস্কি আর সিগমুন্ড ফ্রয়েড সাহেবকে। ভূতেরা কেন সাদা শাড়ি, সাদা চাদর পছন্দ করে? আর কোনও জায়গায় অশরীরীর উপদ্রব হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেন সেগুলি পেত্নী পরিচালিত হয়? এই বিষয়ে ওঁরা ছাড়া আর কে অধিকারী হতে পারেন!

আমরা বেরোই সাধারণত পুজোর চারদিনের যে কোনও দু’দিন। অফিসে ছুটিটা ঠিক কবে হবে, তখনও নিশ্চিত হইনি। তবে সবাইকে বলেই রেখেছিলাম, পরপর দু’দিন ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করব। তোরা বেগুনকোদর যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নে। ভূতটুতের কথা শুনে আমার ছোট সহোদর ঘোষণা করল, সে যাবেই। ওকে না নিয়ে গেলে আমাকে যেতে দেবে না। কারণ, আমরা মুখে ফটফট করলেও আদতে নাকি ভিতু। তাই ও আমাদের রক্ষাকর্তা হবে। মানে রবি ঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’-এর ভ্রাতৃ সংস্করণ আরকী! আরেক সদস্য এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত বলে গেল, ‘বড়দা, তাহলে এবার বেগুনকোদর…’। অন্যজন হিমাচলে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিল। ওকে বাদই রেখেছিলাম। কিন্তু দিনতিনেক আগে ফিরে এসে জানাল, সে-ও যাবে। আরও জানাল, তার কাছে পাঁচজনের মাথা গোঁজার মতো একটা তাঁবুও আছে। শুনে তো আমরা যারপরনাই আহ্লাদিত। কোনওদিন আগে থেকে ঘর বুকিং করে কোথাও যাইনি। সঙ্গে তাঁবু থাকলে অরণ্যসুন্দরীদের (ভালকিতে আমাদের ঘর দেয়নি) থোড়াই কেয়ার। তাছাড়া স্টেশনে রাত কাটাব। যদি রেলের এলাকায় থাকতে না দেয় তাহলে মাঠে তাঁবু খাটিয়ে থাকব। খুশির চোটে অফিসে বড় মুখ করে দু’চারজনকে বলেও ফেলেছিলাম, ‘এবার তাঁবু নিয়ে বেরোচ্ছি, বাওয়া।’

কিন্তু তাঁবু গাড়া কি অতই সোজা! দু’দিন আগে সহোদর জানান দিল, পড়াশোনা আছে। যেতে পারবে না। আমি যেন নিজেই নিজের দায়িত্ব নিই। কিন্তু বাকি দু’জন বুক ফাটিয়েও মুখ খুলল না। একজন আমাকে একদিন আগে বলে গেল, যাবে। কিন্তু ইন্দ্রকে গিয়ে বলল, ‘যদি যায় ভোরবেলা বাসস্ট্যান্ডে হাজির হয়ে যাবে।’ ও-ই আবার শুভকে বলল, প্রজেক্টের কাজ আছে। পুজোর ক’দিন লেখালেখি করতে হবে। পরে ফেসবুকে দেখে জানতে পারব, ইনি ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের সঙ্গে সারারাত কলকাতা চষে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ল্যাপটপে প্রজেক্টের জরুরি কাজ দ্রুত শেষ করেছেন। শোনা কথা, তৃতীয়জন নাকি বলেছিল, তার বাড়িতে অসুবিধা আছে। কিন্তু দ্বিতীয়জন যদি যায় তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই যাচ্ছে। অজুহাতগুলো বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু সরাসরি সত্যিটা বললে কোনও অসুবিধা ছিল না। আমাদের দলের ঘোষিত নিয়ম, অনিচ্ছুক ঘোড়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হবে না। তাতে বিপদের সম্ভাবনা। তাতেও…

তো এইরকম ‘কইতে কথা বাধে’ সদস্য, হালকা গোষ্ঠীবাজি (ও গেলে আমি যাব, উক্তি স্মরণীয়) পিছনে ফেলে আমরা ভোর পাঁচটায় হাজির সাঁতরাগাছি স্টেশনের এক নং প্ল্যাটফর্মে। আমি-ইন্দ্র আর শুভ। শুরু হয়ে গেল আমাদের ভ্রমণ-ভাঁড়ামি। সেদিন ছিল সপ্তমী। রূপসী বাংলা ধরতে স্টেশনে বহু লোকের আগমন। আর যথারীতি আমরা রিজার্ভেশন করিনি। ফলে বসার জায়গা খোঁজার চেষ্টা শুরু করতে হল। কিন্তু অত সকালে অভিজ্ঞ কাকে পাওয়া যায়? সিঁড়ির সামনে একজন কাগজ বিক্রি করছেন। দু’টো কাগজ কিনলাম। আর ইচ্ছেমতো ইনফো নিলাম। জানা গেল, একটা এসি এবং দু’টো রিজার্ভেশন ছাড়া ট্রেনে বাকি কামরা আম আদমির। কিন্তু আম আদমি ভিড় করে কোনদিকে? দেখলাম, সামনের দিকে ভিড়। গেলাম পিছন দিকে। দেখি, আমাদের পিছু নিয়েছে একটা পরিবার। সঙ্গে প্রচুর লটবহর। ক্যাওস পাবলিক। ওদের এড়াতে এগিয়ে এলাম। দেখি, ওরাও এল। মুশকিল!

আমরা এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর তিনজনে শার্লক হোমস হওয়ার চেষ্টা করলাম। এত যাত্রীর মধ্যে থেকে খুঁজে নিতে হবে অভিজ্ঞ কাউকে। যিনি নিয়মিত রূপসী বাংলায় যাতায়াত করেন। অনেক চোখ চালাচালির পরে একজনকে মনে ধরল। তাঁর পিছু নিলাম। তিনি যেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন আমরাও সেখানে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি সেখানেও ভিড়। বসার জায়গা পাব তো? শেষে সেই ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করেই বসলাম, ‘দাদা, এখানটায় ফাঁকা থাকে?’ দাদা বললেন, ‘ঠিক জানি না। আমি এই প্রথম যাচ্ছি।’ লাও ঠ্যালা। তাই তো ভাবি, ওয়াটসনেরা কি চেষ্টা করলেই শার্লক হোমস হতে পারে!

তারপর দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িয়েই আছি। ট্রেন আর প্ল্যাটফর্মে লাগে না। হঠাৎ একটা ইঞ্জিনের সিটি শুনলাম। একটা ইঞ্জিন ডাউন থেকে আপের দিকে যাচ্ছে। ধীর গতিতে। মানে যেদিক থেকে ট্রেন ঢুকবে সেদিকে চলেছে। কী খেয়াল হল, হাতের দিকনির্দেশে আর হালকা ঠোঁট নাড়িয়ে চালককে জিজ্ঞাসা করে বসলাম, ‘আনতে যাচ্ছেন?’ চালক ভদ্রলোক থতমত খেয়ে গেলেন। মনে হয়, এই জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়া উচিত কি উচিত নয়, সেটা কি তাঁর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, এসব ভাবতে গিয়ে দোটানায় পড়ে গিয়েছেন। তারপর উত্তর দেওয়াই মনস্থির করলেন। মাথাটা দু’দিকে আলতো হেলিয়ে জানিয়ে দিলেন, আনতে যাচ্ছেন না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ঢুকল। আমরা জানলার ধারে বসার জায়গা পেলাম। তবে ট্রেনে খুব বেশি হইহই করিনি। তিনজনেই ক্লান্ত ছিলাম। শুভ সদ্য চাকরি পেয়েছে। ধানবাদে ওর ট্রেনিং চলছে। ওইদিন রাতেই বাড়ি ফিরেছে। আমিও অফিস করে গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছি। আর ঘুমোইনি। ফলে ঝালমুড়ি খেয়ে, যারা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের মুণ্ডুপাত করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

খড়্গপুরের আগে পেটে ঝালমুড়ির জ্বালানি শেষ। ফলে সকলেরই ঘুম ভেঙে গেল। ইন্দ্র তো খিদের চোটে চোখে শিঙাড়া দেখছিল। খড়্গপুরের ইডলি-বড়াকে ওর শিঙাড়া-কচুরি মনে হচ্ছিল। কেনার জন্য নেমেই পড়েছিল। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষান্ত হল। সবাই ভ্রমণ রেশন বিস্কুট দিয়ে পিত্তি রক্ষা করলাম। পেটে জ্বালানি দেওয়া মাত্র দিমাক কি বাত্তি অন। একটা সমস্যার কথা মনে হল। ভূত শিকারে যাচ্ছি তিন শঙ্কর। কিন্তু বুনিপ তো একটা! মানে পেত্নী-বুনিপ। কে বধ করবে? কৃতিত্বের ভাগ নিয়ে মারামারি শুরু হতে পারে। তার থেকে আগেভাগেই নিজেদের ভূমিকা ভাগ করে নিই।

আমি প্রস্তাব দিলাম, ‘দেখ, হাতের কাছে যখন তিন শঙ্কর রয়েছে তখন আর মারামারি করে লাভ নেই। আমি বিভূতিভূষণের শঙ্কর, শুভ তুই দেবুর শঙ্কর আর ইন্দ্র তুই ফেবুর শঙ্কর।’ ওরা বাকি দুই শঙ্করের অস্তিত্ব নিয়ে একটু সংশয়ে পড়ে গেল। শুভ বলল, ‘কাঁচরাপাড়ার দেবুর শোনপাপড়ি হয়। শঙ্করও হয় নাকি?’ ব্যাখ্যা দিলাম, ‘দেবু মানে মহানায়ক দেব। কাছের মানুষ তো। তাই আদর করে দেবু বললুম।’ ইন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে বিরাট বুদ্ধি প্রয়োগ করে বলে উঠল, ‘ফেবুর মানে ফেসবুকের শঙ্কর।’ আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। কিন্তু শুভ আমাকে চেপে ধরল, ‘নিজে বেশ ভাল শঙ্করটা নিয়ে নিলে?’

  • কী বলছিস কী! লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে দেখ না, ‘চাঁদের পাহাড়’ কার লেখা? সবাই বলবে, দেবের। তাছাড়া তিনি মহানায়ক। আর তোর সঙ্গে ভীষণ মিল।
  • কী মিল? শুভ তেড়ে আসে।
  • আরে, চাট খেলে তোর যেমন কথা আটকে যায়…আমি থেমে যাই। আর শুভ ওর স্বভাব মতো মুখ ভার করে, কাঁধ ঝুলিয়ে বসে থাকে।

শুভ থামতে চেপে ধরে ইন্দ্র, ‘ফেবুর শঙ্করকে তুমি কোথায় পেলে?’

  • কেন ফেসবুকে! সবসময় ফেসবুকে পড়ে থাকিস আর এটা দেখিসনি! ‘চাঁদের পাহাড়’-এর সিক্যোয়েল তৈরির খবরে নেটিজেনরা সাংঘাতিক একটা চিত্রনাট্য লিখেছিল। সেই ছবির থিম সং ছিল, ‘বাপরে বাপ কী ঢ্যামনা সাপ…ইত্যাদি। ফেবুর শঙ্কর আফ্রিকা নয় আমাজনে অভিযান করবে। তার সঙ্গে অ্যানাকোন্ডার লড়াইয়ের একটা দৃশ্য আছে। সে ভয়ঙ্কর লড়াই। অ্যানাকোন্ডা বধের পরে আমাজোনাসেরা শঙ্করকে ঘিরে সাপের দেহটা নিয়ে ওই গানটা গাইবে…‘বাপরে বাপ…’। চিত্রনাট্য প্রকাশের পরেরদিন আরেকটি মেমে ফেবুতে ছড়িয়েছিল, একটা অ্যানাকোন্ডাকে তিনজন মিলে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে ক্যাপশন, দেবের সঙ্গে লড়তে হবে শুনে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা অ্যানাকোন্ডাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনে পড়ে?
  • হ্যাঁ, হ্যাঁ। লড়াই জেতার পরে আদিবাসীদের রাজা শঙ্করের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবে…
  • একদম। ওই জন্যই তো। তুই অর্ধেক রাজত্ব, রাজকন্যে সবই তো পাবি।

    ট্রেনের জানলা থেকে।

ইন্দ্র ক্ষেপে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল। তখনই বন্ধু জয়ন্তর ফোন এল। বলল, ‘মেয়ে তোর সঙ্গে কথা বলার জন্য পাগল করে দিচ্ছে।’ ওপার থেকে ভেসে কচি গলা, ‘মাকু, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গ্যাছে?’ মাকু মানে মামা আর কাকুর মিশেলে তৈরি হাঁসজারু শব্দ। ওর মা-বাবা দু’জনেই আমার সহপাঠী। তাই মায়ের তরফে আমি মামা আর বাবার তরফে কাকা। দুই মিলিয়ে মাকু। বছর পাঁচেকের মেয়েটির সঙ্গে আমার খুব ভাব। ট্রেনে দেখা হলে কোল ঘেঁষে বসে কত কথাই যে বলে! বাচ্চাদের সঙ্গে অবশ্য আমার ভাবসাব একটু বেশিই। ‘অচলায়তন’-এর পঞ্চকের মতো আমারও মেধা-বুদ্ধি ওদের সঙ্গেই যা একটু মেলে। আমি বললাম, ‘কেন মা, কী করেছি?’ মাকু মানে রাই বলল, ‘তুমি ভূত দেখতে যাচ্ছ কেন?’ আমি বললাম, ‘ওদের কেমন দেখতে দেখব বলে।’ তারপর একথা সেকথা। ফোন ছাড়ার আগে বলল, ‘একদিন কিন্তু আসবে আমাদের বাড়ি।’ যাব বলতেই ওর প্রশ্ন, ‘একা আসবে না ভূতেদের নিয়ে আসবে?’ হেসে ফেললাম।…

পুরুলিয়া স্টেশনটা আমাকে তেমন টানল না। কোথাও যেন কী একটা কম কম বলে মনে হচ্ছিল। প্রত্যেক স্টেশনের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। কারও চরিত্রে, কারও নামে। এই পথেই একটা স্টেশন পড়েছিল। বাগালিয়া। স্টেশনের নামটা দেখে শুভর কী হাসি। খালি বলে, ‘বাগালিয়া, কী বাগালিয়া?’ আমি বললাম, ‘যা দিনকাল পড়েছে! বঙ্গের রাজধানী এখানেই করা উচিত।’ তবে পুরুলিয়া স্টেশনের অন্য একটা বৈশিষ্ট্য টের পেয়েছিলাম। সেটা অন্য প্রসঙ্গে বলব। এখন বেগুনকোদর যাওয়া যাক।

টোটোয় চেপে বাসস্ট্যান্ডে চলে গেলাম। একটা দোকানে বাসের খোঁজ করা গেল। দোকানদার জানালেন, কিছুক্ষণ আগেই একটা ছেড়েছে। পরেরটা দুপুর ২টো ২৫শে। তাহলে খেয়ে নেওয়া যাক এই ফাঁকে। দোকানদারের থেকে একটু ভাল হোটেলের খোঁজ নিলাম। কিন্ত সেখানে খেয়ে তৃপ্তি হল না। কোনওটাই তেমন পদের নয়। খাওয়া নয় খাদ বোজানো করে চলে এলাম স্ট্যান্ডে। তখনই ইন্দ্রর চোখে পড়ল একটা বাসের সামনে বেগুনকোদর লেখা। জিজ্ঞাসা করে এলাম। বাসচালক জানালেন, একটু ঘুরে যায় বাসটা। মিনিট পনেরো বেশি সময় লাগবে। আমরা জানতে চাইলাম, বেগুনকোদর রেলস্টেশনে যাব। শুনে তিনি বললেন, ‘তাহলে বামনিয়া নামতে হবে।’ যাব বেগুনকোদর। কিন্তু নামতে হবে বামনিয়ায়! ব্যাপারটা পছন্দ না হওয়ায় আবার সেই দোকানদারের কাছে ফিরে এলাম। বেগুনকোদর স্টেশনে যাব শুনে উনিও একটু থমকালেন। তারপর বাসের এক স্টার্টারকে দেখিয়ে তাঁকে জিগ্যেস করতে বললেন। জিগ্যেস করলাম। উনি আকাশ থেকে পড়লেন, ‘বেগুনকোদরে রেললাইনই নাই তো স্টেশন আসবে কোথা থেকে!’

সে কী কথা! দিনেদুপুরে গোটা স্টেশন গায়েব। রেললাইন সমেত!

হচ্ছেটা কী! বেগুনকোদর স্টেশন যেতে চাইলে কেউ বামনিয়া নামতে বলছেন। কেউ বলছেন, ‘স্টেশনটাই নেই। যাবে কী করে?’

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই আছে এই নেই-এর রহস্যের ধড়-মুণ্ডু খুঁজতে মাথা চুলকোচ্ছি। তখনই মনে পড়ল স্মার্টফোনের কথা। কিন্তু আমার ফোনের চার্জ শেষ। নেট বইতে পারবে না দু’সেকেন্ডও। ইন্দ্র আর শুভ সদ্য স্মার্ট হয়েছে। ওদের বললাম, ‘গুগলজ্যাঠাকে জিগ্যেস করে শিগগির স্টেশনের ছবিটা দেখা।’ ‘ভারত ডিজিটাল মাতা কি জয়’ বলে ইন্দ্র নেট খুলে ফেলল। বেগুনকোদর লিখে সার্চ দিতেই…জয় ধীরুভাই…আম্বানি ভাতিজা জিও। মোবাইলটা সেই ভদ্রলোকের চোখের সামনে ধরল ইন্দ্র। এই দেখুন, স্টেশন। এই টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং হল। তবুও লোকটা টাকে হাত ঘষতে লাগল। বিশ্বাস হচ্ছে না এখনও। সেইসময়েই মনে পড়ল, মেজো সহোদরের এক সহকর্মীর বেগুনকোদরে বাড়ি। তাঁকে ফোন করা হল। তিনি রাস্তা বাতলালেন। তাঁর সঙ্গে যখন কথা বলছি, স্টার্টার ভদ্রলোক ফোনটা নিয়ে আদ্যোপান্ত জেনে নিলেন। তারপর উনিই বললেন, ‘স্টেশনে চলে যান। ‘এই সময়ে একটা ট্রেন আছে।’

পুরুলিয়া স্টেশনের বাইরে ছোট ট্রেনের ইঞ্জিন।

আবার টোটোয়। পুরুলিয়া স্টেশনে ফিরতে ফিরতে নিজেরা গল্প করছিলাম। আমাদের কথা শুনে টোটোচালক বললেন, ‘বেগুনকোদর স্টেশন আছে। সেখানে ভূত আছে। আমি গিয়েছি।’ উল্লাসে ফেটে পড়লাম আমরা, এই তো আছে, আছে। রাতে থেকেছেন? ভূত দেখেছেন? টোটোচালক জানালেন, রাতে থাকেননি। তবে শুনেছেন, ভূত আছে। তারপর জিগ্যেস করলেন, ‘দাদা শ্যুটিং হবে নাকি? আমি শ্যুটিং পার্টির গাড়ি চালিয়েছি।’ আমাদের শ্যুটিং পার্টি মনে করছেন! তা-ও তো শুভর ভয়ে ইন্দ্র ক্যামেরার স্ট্যান্ডটা আনেনি। সুযোগ পেলেই শুভ প্যাঁচ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাটবল্টু খুলে নিয়ে স্ট্যান্ডটা খোঁড়া করে দেয়। ভালকি মাচানে করেছিল। কিন্তু আমরা যে আম পাবলিক সেটা টোটোচালককে জানতে দিলে চলবে না। গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললাম, ‘আগে গিয়ে দেখে আসি।’ টোটোচালকের কাছে তাতেও আমাদের গুরুত্ব কমলো না। বললেন, ‘এসেছেন যখন তখন ডাকবাংলোর দুর্গাপুজোটা দেখে যান।’ যেন আমাদের শ্যুটিংয়ের স্পট দেখাচ্ছেন। আমরা বললাম, যাওয়ার সময়েই দেখে নিয়েছি দাদা।’

স্টেশনে ঢুকেই শুভ হাসতে শুরু করল। হাসি কেন? ও বলল, ‘টোটোয় করে তাহলে স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ডে খেতে গিয়েছিলাম।’

যথা সময়ে ট্রেন ধরলাম। খড়্গপুর-হাতিয়া প্যাসেঞ্জার। ফাঁকা ট্রেন। কিন্তু বেগুনকোদর নিয়ে সংশয় কাটেনি। আরও জনাচারেককে জিগ্যেস করে নিশ্চিত হলাম, ট্রেনটি বেগুনকোদর যাবে। কোটশিলার পরেই আমাদের গন্তব্য। তারপর ট্রেন চলতে শুরু করল। ছবির মতো সুন্দর স্টেশনগুলো। ট্রেনের জানলা দিয়ে মখমলের মতো ঘাসে মোড়া একটা জায়গা দেখিয়ে শুভ বলল, ‘এখানে মাদুর বিছিয়ে টানা ঘুম।’ বলেই ঘুমিয়ে পড়ল। মুখ মানুষের মনের আয়না বোধহয় এজন্যই বলে। ওর যদি এখন খিদে পেত তাহলে বোধহয় বলত, ‘এখানে পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, কালোর চপ মাখা এক থালা মুড়ি নিয়ে বসে…’।

ইন্দ্রও তখন ঘুমোচ্ছে। আমিও একটু ঝিমিয়ে নিলাম। ট্রেনটার একটাই মুশকিল। প্যাসেঞ্জার ট্রেন তো। স্টেশনগুলোতে দীর্ঘসময় দাঁড়াচ্ছে। আমরা ঘুমনোর আগে দেখলাম ট্রেন গৌরীনাথ ধামে থামল। ঘুমের ঘোর কাটতে দেখি, তখনও ট্রেনটা ধামেই থম মেরে দাঁড়িয়ে।…

কোটশিলা।

কোটশিলা পার হতেই আমরা ব্যাগট্যাগ হাতের কাছে নিয়ে তৈরি। ধীরে ধীরে ট্রেন ঢুকল বেগুনকোদরে। কোনও প্ল্যাটফর্ম নেই। সিঁড়ি বেয়ে নামা। আমাদের সঙ্গে বেশ কিছু যাত্রী নামলেন। নেমেই ফেবু শঙ্কর ইন্দ্র ফটো-শঙ্কর হয়ে গেল। খচখচ করে ছবি তুলছে। আর আমরা দুই নট-শঙ্কর (দু’জনেই নাকি ভীষণ নাটুকে) স্টেশনের চারপাশটা দেখতে লাগলাম। অসাধারণ পরিবেশ। একদিকে বিশাল সবুজ প্রান্তর। তার সীমানায় পাহাড় পাঁচিল তুলেছে। বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে। কালো মেঘ জমাট বেঁধে আছে সেদিকে। কুয়াশার মতো ফিনফিনে চাদরও দেখা যাচ্ছে দূরে। উল্টোদিকের দিগন্তেও পেনসিল ড্রয়িংয়ের মতো পাহাড়। কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। পাথুরে ঘাসজমির স্টেশন থেকে অচেনা একটা গন্ধ বেরোচ্ছে। পরিবেশের সেই মুগ্ধ করা রূপ-বর্ণনার জোর আমার কম্পিউটারের কী-বোর্ডের নেই। বিভূতিভূষণ বা বুদ্ধদেব গুহ এলে সেটা করতে পারতেন। ওঁদের সোনা-চাঁদির কলম।

নামা-ওঠা করা যাত্রীরা অবাক চোখে তিন শঙ্করের কীর্তি দেখছিল। ঠিক তখনই খেয়াল হল বিষয়টা। স্টেশনের টিকিট কাউন্টার-সহ ওয়েটিং হলের বিল্ডিংটা কোথায় গেল? যেটা দেখিয়ে বাসস্ট্যান্ডের ভদ্রলোককে চমকে দিয়েছিলাম। ওটা ফটোশপ নাকি? একই দিনে এত অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড তো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখায় ঘটে! ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে গতি তুলে ভূতুড়ে স্টেশনে তিনজনকে নামিয়ে চলে গেল ট্রেনটা। আর তখনই বেরিয়ে পড়ল ওয়েটিং হলটা। ইয়ে মানে, এতক্ষণ ট্রেনের আড়ালে ছিল। সারাদিন এত গায়েবের গল্প শুনেছি যে একটুখানি না দেখায় বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম।

বেগুনকোদরের প্রকৃতি।

স্টেশনটাকে কোনওভাবেই ভূতুড়ে বলে মনে হল না। ভূতের গল্প বা সিনেমায় মোটামুটি এইরকম স্টেশন দেখা যায়— দিনের বেলাতেও নির্জন। কথাবার্তা নেই প্ল্যাটফর্মের ঝুপসি গাছটা থেকে দ্রীঘাংচুর মতো একটা কাক অদ্ভুত স্বরে ক্ক- করে ডেকে উঠল। কুকুরে তাড়া করেনি, মানুষে ঢিল মারেনি তবুও স্টেশন বিল্ডিং থেকে একটা কালো বিড়াল হনুমানের মতো হুপ করে সামনে লাফিয়ে পড়ল। তারপর ফ্যাঁচ করে বিচ্ছিরিরকম হেঁচে পাঁইপাঁই করে ছুট লাগাল। হঠাৎ হাওয়ায় প্ল্যাটফর্মের পাতা সরসর করে সরে গেল। বলিউডি ভূতের সিনেমায় সবচেয়ে সরেস দৃশ্য তো গ্রীষ্ম হোক বা শীত কালো চাদরে আপাদমস্তক ঢাকা একজনের বেরিয়ে পড়া। এ স্টেশনটা মোটেই তার মতো নয়।

স্টেশন চত্বরে বেশ লোকজন। এলাকার বেশ কয়েকজন মেয়ে-গৃহবধূ প্ল্যাটফর্মের সিমেন্টের বেঞ্চে বসে বৈকালিক আড্ডা জুড়েছেন। আসলে তাঁরা গরু চরাচ্ছেন। তার ফাঁকে ট্রেন-যাত্রী-আড্ডা। এক বয়স্ক হাতে লাঠি নিয়ে উল্টোদিকের বেঞ্চে বসে। তার পাশে লুঙ্গি পরা এক যুবক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছেন। দু’জন রেললাইন পেরিয়ে স্টেশনের দিকেই আসছেন। স্টেশন বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে একজন মাথা নিচু করে বসে আছেন। আর ওয়েটিং হলে দুই চানাচুর বিক্রেতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ-লঙ্কা কুঁচোচ্ছেন। দু’টো জিনিস দেখে নিশ্চিত হলাম, আর যাই হোক এই স্টেশনে ভূত থাকতে পারে না। এক, ওয়েটিং হলে একটা কুকুর নিশ্চিত মনে ঘুমোচ্ছে। কুকুর অশরীরীর উপস্থিতি টের পায়। এত গভীর ঘুম সে দিত না। বুক কাঁপানো উঁউউউউ… করে ডাক ছাড়ত। ভূত বিশেষজ্ঞেরা তো তা-ই বলেন। আর দুই, বিল্ডিংটার ঠিক গায়েই একজন মূত্র বিসর্জন করছে। বাঙালির স্বভাব। দেখাদেখি ইন্দ্রও গেল। ভূত থাকলে এই কম্মটি সারার হিম্মত লোকের থাকত না। ঘাড়ে চেপে বসত তারা। ইন্দ্র ফিরে এসে বলল, ‘ওখানে সবাই প্রাকৃতিক কাজ সারে। তুমি যাবে?’

আমরা প্রথমে গেলাম হকারদের কাছে। মশলা তৈরি করছেন মানেই পরের একটা ট্রেন আছে। অথচ সংবাদ ওয়েবসাইটের দাবি মতো, বিকেল ৫.৫০-এ রাঁচি-চন্দ্রপুরা-ধানবাদ প্যাসেঞ্জারের পরে কোনও ট্রেনের স্টপ নেই। আমরা শুরু করলাম তথ্য নিতে। ফেরিওয়ালারা যা বললেন তার মর্মার্থ, বিকেলের পরেও অনেক ট্রেন আছে। এই স্টেশনে শেষ ট্রেন থামে রাত সাড়ে ন’টায়। সব তথ্য নেওয়ার পরে করলাম আমাদের অভীষ্ট প্রশ্ন, ‘দাদা, এই স্টেশনে নাকি ভূত আছে? লোকে নাকি স্টেশনে সন্ধ্যের পরে আসে না?’ ফেরিওয়ালারা বললেন, ‘ভূতের কথা বলতে পারব না। আমরা দেখিনি। আমরা সন্ধ্যের পরেও এখান থেকে ট্রেন ধরি। আপনারা রেলের লোকেদের সঙ্গে কথা বলুন।’

গেলাম টিকিট খিড়কির সামনে। ভিতরে তখন জনাতিনেক লোক। তিনজনের মধ্যে দু’জনের বয়স আন্দাজে ৫০-এর কোটায় আর একজন ৩০-এর এপাশ ওপাশ হবে। ইন্দ্র ক্যামেরা বাগিয়ে ধরল। রেকর্ডিং করা হবে। আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে কাউন্টারের সামনে এগিয়ে এলেন অমূল্য রতন মাহাত। স্টেশনের কাছেই নলকুপি গ্রামের বাসিন্দা।

টিকিট খিড়কির অমূল্যবাবু।

অমূল্যবাবুর তথ্যের সারমর্ম, ৪২ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকার পরে গত ০১.০৯.২০০৯ সালে নতুন করে চালু করা হয়। এই স্টেশনে প্রতিদিন পাঁচ জোড়া ট্রেন থামে। শেষ ট্রেন থামে রাত সাড়ে ন’টায়। কিন্তু কেন এতদিন ধরে স্টেশনটা বন্ধ ছিল সে বিষয়ে কিছুতেই মুখ খুলতে চাইলেন না তিনি। অমূল্যবাবুর একটাই কথা, ‘সেটা আমি কী করে বলব?’’ বুঝলাম, চাকরির শর্তের কোনও বাধ্যবাধকতায় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। চাপ দিলাম না। চাকরির এই দুর্মূল্যের বাজারে কারও চাকরি নিয়ে টানাটানি করা ঠিক নয়।

তবে অমূল্যবাবুই নিজেই জানালেন, স্টেশন বন্ধ থাকার কারণে জানতে গাঁয়ের বৃদ্ধ মানুষের সঙ্গে যেন কথা বলি। বৃদ্ধ মানুষ বলতে স্টেশনের সিমেন্টের বেঞ্চে বসে থাকা একজনকে দেখালেন তিনি। আমরা উঁকি মেরে দেখলাম। হাতে লাঠি নিয়ে বসে আছেন সেই বৃদ্ধ। গরু চরাচ্ছেন।

ক্যামেরা বাগিয়ে এগিয়ে গেলাম বেগুনকোদরের মোজেসের দিকে।

দূর থেকে মোজেসের হাতে যেটা লাঠি মনে হয়েছিল সেটা আসলে ছাতা। এবং যাকে আমরা দাদুর ছাতা বলি সেইরকম। গালে সাদা দাড়ি। গায়ে ফতুয়া। পরনে হাঁটুর উপরে তোলা ধুতি। শুধু ছাতাটা মোজেসের লাঠির মতো বাগিয়ে নিলেই…ব্যস!

গিয়ে বসলাম বৃদ্ধের কাছে। ইন্দ্র আবার ক্যামেরা বাগিয়ে ধরল।

আমাদের বেগুনকোদর অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ভূত খোঁজা। আসলে ভূতের উৎস খোঁজা। ভূতে আমাদের কোনও বিশ্বাস নেই। কিন্তু কোথা থেকে, কীভাবে এমন সুন্দর স্টেশনে ভূতের গুজবের আমদানি হল? তার তো একটা বাস্তব ভিত্তি আছে। সেটা কী? বৃদ্ধ কিন্তু ভূতের কথা কিছুই বললেন না। যতবার প্রশ্ন করি ততবারই স্থানীয় টানে বলেন, ‘কী বলব। স্টেশনমাস্টার বলে দিয়ে চলে গেলেন, এখানে ভূত আছে। ভূত ইখানে নাচানাচি করে। সেই ভয়ে পালাইল।’ অনেকক্ষণ ধরে খোঁচালাম। বৃদ্ধ অনেক কথা বললেন। জানালেন, এখানে আগে ছোট ট্রেন চলত। বুঝলাম, ন্যারোগেজের ট্রেনের কথা বলছেন। পুরুলিয়া স্টেশনের বাইরে সেই ট্রেনের একটা ইঞ্জিন রাখা আছে, ‘পুরুলিয়া কুইন’। আমরা তার ছবি তুলেছি। তারপর জানালেন, স্টেশনটা আগে এখানে ছিল না। ছিল আরেকটু এগিয়ে। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এখনকার স্টেশন বিল্ডিংটা ভাঙাচোরা হয়ে পড়েছিল। সেটাকে সারাই করা হয় ট্রেন আবার চালু হতে। সেইসময় স্টেশনমাস্টার স্থানীয় কেউ ছিলেন না। বাইরে থেকে এসেছিলেন।

বেগুনকোদরের মোজেস।

কিন্তু ভূত? ইন্দ্র জিজ্ঞাসা করল, ‘খুন, আত্মহত্যার কথাটা জিজ্ঞাসা করো।’ করলাম, ‘এখানে নাকি কেউ আত্মহত্যা করেছিলেন বা খুন হয়েছিলেন? তারপর থেকেই ভূত দেখা যেত?’ বৃদ্ধ শব্দ করে হাসলেন। তারপর জানালেন, সেসব কিছু ঘটে নাই। আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সন্ধ্যের পরে নাকি স্টেশন চত্বরে কেউ আসেন না? কেউ থাকতে চাইতেন না?’ বললেন, ‘না গো! এখানে কোয়ার্টারও তো ছিল। স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে মেয়েছেলেও ছিল (বুঝলাম স্ত্রীয়ের কথা বলছেন)। ওই তো সামনে। ভাঙা পড়ে আছে।’

এর মাঝে একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের কথাবার্তা রেকর্ডিংয়ের সময়ে ক্যামেরার ফ্রেমে ঢুকে পড়েছিলেন লুঙ্গি পরা গ্রামের এক বাসিন্দা। ইন্দ্র গেল খেপে। গাঁয়ের বাসিন্দা বা লুঙ্গি পরিহিত বলে নয়। ভদ্রলোকের হাতে বিড়ি ছিল বলে। ও সাংঘাতিক যুক্তিবাদী আর প্রবল ধূমপান বিরোধী। বোঝাবার চেষ্টা করলাম, ‘আরে রেকর্ডিংয়ে থাক না গাঁয়ের মানুষ।’ পরে ওকে বুঝিয়েছিলাম, ‘যাঁর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে তিনি ছাড়াও ফুটেজে লোকজন থাকা ভাল। না হলে ফ্রেম ন্যাড়া ন্যাড়া লাগে। সিনেমায় দেখিস না, নায়ক-নায়িকা হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাওয়ার সময়ে আশপাশ দিয়ে কতজন যাতায়াত করেন? ওঁরা কি আর নিজেরা করেন? পরিচালকই এক্সট্রাদের ওভাবে হাঁটান। তুই তো পয়সা না ফেলেই এক্সট্রা পাচ্ছিস।’

ক্যামেরা-ফ্রেম এসব কথা চিন্তা করতে করতে একটা বিষয় মনে হল। ক্যামেরা মুখের কাছে চালু রাখলে মোজেস খোলামেলা হতে পারছেন না। স্টেশনমাস্টার হঠাৎ কেন ভূত আমদানি করলেন? কোথা থেকে করলেন? সেসবের একটা ধারণা দরকার। ক্যামেরা বন্ধ করে গল্প জুড়লাম। প্রথমে স্বগতোক্তির মতো বললাম, ‘কারা যে এসব ছড়ায়!’ তাতে কাজ হল। বৃদ্ধও বললেন, ‘কী আর বলব? দু’একজনের জন্য এলাকার বদনাম হয়।’ একটা সুতো পেলাম মনে হচ্ছে। এবার তাহলে টান দেওয়া যাক। কিন্তু অনেক টানাটানি করেও তেমন লাভ হল না। শুধু কতকগুলো ইঙ্গিত মিলল।

এলাকাটা খুব একটা সুবিধেজনক নয়। নতুন স্টেশনবিল্ডিংয়ের উপরেও হামলা হয়েছে। ইট চুরি গিয়েছে। কেউ বা কারা নতুন বিল্ডিং ভেঙে দিয়েছে। সেই ‘কেউ বা কারা’র জন্যই এলাকার বদনাম। কথা শেষে বৃদ্ধ আক্ষেপ করলেন, ‘আমাদের এখানে তো কোনও সমস্যা নাই। গণেশ দেবতার অত্যাচার নাই। শুধু ওদের জন্য…।’ বুঝলাম, গণেশ দেবতা মানে হাতির কথা বলছেন। আমাদের মা-পিসি-ঠাকুমারা সাপকে যেমন লতা বলেন তেমনই আরকী।

স্টেশন বিল্ডিং।

আমরা কথা বলছি। বুকিং কাউন্টারের সেই তিরিশের কোটার ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনারা এখন কোথায় যাবেন?’ যাব তো মুরগুমা। কিন্তু আজ রাতটা তো স্টেশনে কাটানোর পরিকল্পনা ছিল। ভূতের কোনও উৎসই তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! স্টেশনে রাত কাটালেও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। কারণ স্টেশনকর্মীরাই স্টেশনে থাকবেন অন্তত রাত ১০টা পর্যন্ত। সন্ধ্যের পরে স্টেশনে আলো জ্বলবে। সোলার প্যানেল লাগানো আছে। আশেপাশের বাড়ি, স্টেশনের পিছন দিকের হোটেল, এত ভিড়ের মধ্যে ভূত বেরোবে? মনে তো হয় না।

আমার তো প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল, এই স্টেশনটা ভূত থাকার উপযুক্ত নয়। এত আলো, হট্টগোলে ভূত থাকতে পারে না। ভূত বিশেষজ্ঞ এবং ভৌতিক কাহিনীর লেখকেরা তো তাই দাবি করেন। রকমারি ভূতের সেরা কারবারি ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় পরিষ্কার বলে গিয়েছেন, ‘অন্ধকার জমে জমে ভূত হয়।’ এখানে অন্ধকারই নেই তো ভূত আসবে কোথা থেকে!

দক্ষিণবাড়ি স্টেশন। হাওড়া-আমতা লাইন।

ভূত থাকার আদর্শ স্টেশন হল আমাদের হাওড়া-আমতা লাইনের দক্ষিণবাড়ি। চারপাশেই জমির পর জমি। এক বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনও বসতি নেই। তবুও সেখানে ভূত নেই। আর এখানে অন্ধকার জমবে কখন? ৪০-৪২ বছর আগে এলাকাটা স্বাভাবিক ভাবেই এখনকার তুলনায় ফাঁকা ছিল। এত আলোও ছিল না। তখন স্টেশনমাস্টারের রজ্জুতে সর্পভ্রম হলেও হতে পারে। কিন্তু এত বছরে সেই রজ্জুও পচে ঝুরঝুরে হয়ে গিয়েছে। অন্তত সেটাই হওয়া স্বাভাবিক।

আমরা রেলকর্মী ভদ্রলোককে মুরগুমা যাওয়ার কথা বললাম। উনি বললেন, ‘এখনই একটা বাস আছে। বেগুনকোদর যাবে। ওখান থেকে মুরগুমা যাওয়ার টেম্পো পেয়ে যাবেন।’ মনে হল, ভদ্রলোক আমাদের তাড়াতাড়ি স্টেশন ছাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আমাদের বোঝার ভুলও হতে পারে। হয়তো সাহায্যই করতে চাইছেন। আমরা উঠে পড়লাম। তার আগে বৃদ্ধের কাছ থেকে বেগুনকোদর-বামনিয়া-বেগুনকোদর ভুলভুলাইয়ার তার রহস্য জেনে নিয়েছি। আর উত্তর পেয়ে গিয়েছি, পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে স্টার্টার ভদ্রলোক কেন বলেছিলেন, ‘বেগুনকোদরে কোনও স্টেশন নাই।’

স্টেশনটা অবস্থিত বামনিয়া গ্রামে। আর বেগুনকোদর নামে জায়গাটা সেখান থেকে বেশ দূরে। বাসে মিনিট দশ-পনের লাগে। যেহেতু মৌজার নাম বেগুনকোদর তাই সেই নামেই স্টেশন হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা কলকাতা স্টেশনের মতো। যারা দুই হুগলি সেতু দিয়ে কলকাতা ঢোকেন তাঁদের কাছে এসপ্ল্যানেড বা হেস্টিংস বা রবীন্দ্রসদনই কলকাতা। কিন্তু কলকাতা রেলস্টেশন? সেখানে যেতে গেলে সেই উজিয়ে উত্তরে যেতে হবে। বাসস্ট্যান্ডের ভদ্রলোক আসলে হুগলি সেতু দিয়ে কলকাতায় ঢোকা লোক। তাঁকে যদি কলকাতা স্টেশনের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি তো বলবেনই, ‘কলকাতায় কোনও রেললাইনই নাই! স্টেশন আসবে কোথা থেকে?’

হাঁটতে শুরু করেছিলাম। স্টেশনবিল্ডিংয়ের পিছন দিয়ে আলপথ, মাঠ পেরিয়ে এগোচ্ছিলাম বামনিয়া বাসস্ট্যান্ডের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে ভূত-গুজবের জট খোলার চেষ্টা করছিলাম তিনজনে। একটা কারণ, একটা উৎস তো আছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই গুজবের! না, কোনও রক্তপাতের গল্প নেই। রেলে কাটা পড়া নেই। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেনি। খুনখারাবিও নয়। তাহলে? দ্বিতীয় পর্বের বেগুনকোদর স্টেশন উদ্বোধনের সময় রেলের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া বিবিসি’কে জানিয়েছিলেন, রেলকর্মীরাই ভূতের গল্পটি বানিয়েছিলেন। যাতে তাঁদের এই নির্জন (এখনকার তুলনায়) স্টেশনে পাঠানো না হয়। হতে পারে। কিন্তু সেটা কি রেল কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করবেন? কর্মীদের কথায় ভূতের ভয়ে স্টেশন বন্ধ করে দেবেন? তা যদি হতো তাহলে রাইটার্স বিল্ডিং, কলকাতা জিপিও আর কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার বন্ধ করে দিতে হতো। অমন লোক গিজগিজ কলকাতার এই তিনটি ঐতিহাসিক ভবনে ভূত থাকার গুজব আছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এই যুগেও যে কোনও পত্রিকার ভূত সংখ্যায় এই তিনটি ভবন নিয়ে লেখা হবেই।

আমাদের সঙ্গে হাঁটছিলেন এলাকার বাসিন্দা আগলু মাহাতো। মোজেসের সঙ্গে কথা বলার সময়েও উনি ছিলেন। মাঠ পেরোচ্ছি। উনি ভাঙাচোরা দু’টো ঘর দেখালেন। রেলের পুরনো কোয়ার্টার। এখানেই থাকতেন স্টেশনমাস্টার। আগলুকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কী ঘটেছিল তখন? উনি যে বারবার বলছিলেন, এলাকার লোকের জন্যই এত বদনাম?’ আগলুর বয়স তিরিশের মধ্যে। বললেন, ‘আমরা শুনেছি স্টেশনমাস্টারের একটা মেয়ে ছিল। তার ওপরে অত্যাচার হতো।’

স্টেশন থেকে তোলা প্রকৃতি।

অঙ্কটা মিলে গেল ফট করে। যে অঙ্কের সূত্র দিয়েছিলেন মোজেস। এলাকার বদনামের কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। ওঁর বয়স সত্তরেরও বেশি। ঘটনাটি যখন ঘটে তখন ওঁর বয়স তিরিশের কোটায়। কী ঘটেছিল সেটা স্পষ্ট মনে থাকার কথা তাঁর। এমনকী সেই কাণ্ডের কান্ডারিদের চেনাও অসম্ভব নয়। মোজেস স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে ‘মেয়েছেলে’ থাকার কথা বলেছিলেন। এখন বুঝতে পারছি, উনি স্টেশনমাস্টারের স্ত্রী-কন্যার কথাই বলতে চেয়েছেন। শুভ একটা কথা বলল। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে খোঁজখবর নেওয়ার সময়ে এক দোকানদারও বলেছিলেন, এলাকাটার বদনাম আছে। চুরি-ছিনতাই হয়। মোজেসের ‘এলাকার লোকের জন্য বদনাম’, আগলুর স্টেশনমাস্টারের মেয়ের ওপরে অত্যাচার হতো’ আর বাসস্ট্যান্ডের দোকানদারের ‘এলাকাটার বদনাম আছে’— তিনটে সূত্র এক করলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়। ভূতের গল্প ছড়িয়ে স্টেশনমাস্টার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে চাইছিলেন। তাতে তিনি সফল। বাসুদেব আচারিয়ার কথাতেও সেই যুক্তি।

ইন্দ্রর অবশ্য অন্যমত। ওর মতে, ‘স্টেশনমাস্টার প্রতিশোধ নিয়েছেন। এমন একটা গুজব ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছেন যে এলাকাটাই ৪০ বছর পিছিয়ে গিয়েছে।’ ওর কথাতেও যুক্তি আছে। খবরের কাগজ আর সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন বলছে, নতুন করে স্টেশন চালুর দাবিতে এলাকাবাসীই জোট বেঁধেছিলেন। তার মানে তাঁরা ভূতের পরোয়া করেন না। আমরাও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, স্টেশনটির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ২০০৯ সালে শুরুর সময়ে তিন জোড়া ট্রেন থামত এই স্টেশনে। এখন থামে পাঁচ জোড়া। ও আর একটা কথা, ভূতের ভয়ে আসতে চান না বলে এখানে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়নি— এই তথ্যটি ভুল। অপপ্রচার। এখন রেলের বহু স্টেশনই কমিশন এজেন্ট দিয়ে চালানো হয়। আমাদের হাওড়া-আমতা রুটের বহু স্টেশন আছে। একাকী সেই দক্ষিণবাড়ি স্টেশনেও কমিশন এজেন্ট।

তখন বাসরাস্তায় উঠে পড়েছিলাম আমরা। একপাল গরু নিয়ে কোনও রাখাল গোধূলি বেলায় বাড়ি ফিরছেন। একবার পিছন ফিরে তাকালাম। স্টেশন বিল্ডিংটা দেখা যাচ্ছে। ভাঙা কোয়ার্টারগুলো। কোয়ার্টারগুলো দেখে কানে বাজছে আগলু মাহাতোর কথা, ‘স্টেশনমাস্টারের মেয়ের ওপরে অত্যাচার হতো’। কেমন সেই অত্যাচার? বহিরাগত স্টেশনমাস্টার বাঁচাতে পেরেছিলেন পরিবারের সম্ভ্রম?

৪০ বছরেরও বেশি সময়ের বিস্মৃতির পলি পড়েছে সেই ঘটনার ওপরে। বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ভৌতিক সাদা চাদর। আবার খোঁচাখুঁচি করে লাভ কী?

‘সে ইতিহাস গোপন থাকাই ভাল’!

সমাপ্ত

4 thoughts on “একটি ভূতুড়ে স্টেশন আর তিন শঙ্করের কাহিনি

  1. Lekha stti darun!! Pore khub valo laglo…👍..smy niye puro ta porlm besh moja moja lagchilo porte,tai…

    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এই লেখাটি লিখে আমিও খুব আনন্দ পেয়েছি। আমাদের গ্রুপ এই অভিযানটি করেছিল শুধু ওই সুন্দর স্টেশনটির নামে অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য। আমরা খুশি, কিছুটা হলেও লোকে বুঝতে পেরেছেন, ভূতের গল্পটি বানানো। সঙ্গে থাকুন। আপনাদের উৎসাহ প্রয়োজন আমাদের।

  2. Darun….amio akrat katiye asechi Ai station a… Jato sob faltu kotha…. Specially thanks…lekhata likhe…manuser moner theke..voi tariye…begunkodar…bamniya..murghuma ..Ajodhya…(Purulia tourism) k manusher kache tule dhorar janno…

    1. অনেক ধন্যবাদ দাদা। আপনার স্বীকৃতি আমাদের উৎসাহ দেবে। আমরা বেগুনকোদর থেকে মুরগুমা গিয়েছিলাম। তা নিয়ে লেখাও সাইটে পেয়ে যাবেন। আবার ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *