অন্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

ইতিউতি হাওড়ার জীবজগৎ— তৃতীয় পর্ব

যথা ইচ্ছা তথা যা

যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি আমরা। বেশিদূর যেতে হচ্ছে না। কাছাকাছি চোখ-কান খোলা রাখলেই ধরা পড়ছে নানা প্রাণী। আজ সেগুলোরই কয়েকটা।

১। কসাই পাখি

আমতার দহের পাশে তোলা।

গিয়েছিলাম আমতায়। সাত হ্রদের খোঁজে। সেখানেই মিলল একটা পাখি। চুপটি করে বসে রয়েছে বাবলা গাছের ডালে। একটু দূরে। আমরা কথা বলছি, হাসছি। কিন্তু পাখির কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। দীপু ছবি তুলল। কিন্তু আলোর বিপরীত দিকে বলে আবছায়া ছবি উঠল। তবুও সেই ছবি দেখে পাখিটিকে শনাক্ত করেছেন প্রকৃতিপ্রেমী সৌম্য চট্টোপাধ্যায়। পাখি নিয়ে তিনি মনোগ্রাহী চর্চা করেন। সৌম্য জানালেন, এটি কসাই পাখি। অনেক রকম ভাগ রয়েছে পাখিটির। কিন্তু ছবির আবছায়ার জন্য নির্দিষ্ট ভাগ বলা সম্ভব হয়নি।

কসাই পাখির নাম শুনেছিলাম। এই পাখি শিকার ধরে নাকি গাছের কাঁটায় গেঁথে রাখে। ঠিক মাংসের দোকানে যেমন কাটা প্রাণী ঝোলে, সেরকম অনেকটা। তাই এমন নাম।

২। ফটিকজল

মিষ্টি দেখতে। পাতিহালে তোলা।

কত নাম শুনেছি পাখিটির। কিন্তু নিজেদের গ্রামেই তাকে দেখতে পাব, আমরা ভাবতে পারিনি। ক’দিন থেকেই একটা বাড়ির গাছে গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক জোড়া নতুন পাখি। ছোট মতো। কিন্তু সুন্দর দেখতে। দীপু একদিন ছবি তুলল। ঝাড়গ্রামের বিশ্বরূপ মণ্ডলদা শনাক্ত করে দিলেন। বললেন, এটা ফটিক জল। আমাদের আনন্দ দেখে কে!

৩। মুনিয়া

এদের খুঁজে পেয়ে আমরা খুশি।

বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল, বড় রাস্তার ধারে এত ঘন শরবন। এখানে তো পাখি থাকার আদর্শ স্থান। বড়গাছিয়া যাওয়ার সময়, একদিন দুপুরে হাঁটতে হাঁটতে এসে তাকিয়ে থাকা গেল। এবং দেখা গেল ছোট্ট ছোট্ট পাখির ছোট ছোট উড়ান। একদিন ভরদুপুরে দীপুকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে ছবি তোলা হল। দেখে নিজেরাই চিনতে পারলাম মুনিয়া বলে। কিন্তু মুনিয়ার তো অনেক ভাগ। এরা কোন ভাগের? ঝাড়খণ্ডের শিবশঙ্কর গোস্বামীদা বললেন, এগুলো ট্রাই কালার মুনিয়া। বাংলায় তিন রঙা মুনিয়া। সাধারণ অনুবাদ।

৪। ভোমরা ছোটন

বড়ই দুর্বল। তবু আমাদের গ্রামের সম্পদ।

ওই শরবনেই খোঁজ মিলেছিল। একদম ছোট্ট পাখি। ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে একটা শর ডাঁটি থেকে আরেকটা শর ডাঁটিতে উড়ে যাচ্ছে। ডাকছে। শিবশঙ্করদাই চিনিয়ে দিয়েছিলেন। এই পাখির আরেকটা নাম আছে বোধহয়। ডিগডিগ। রোগা চেহারার জন্য? নাকি অন্য কারণ!

৫। প্রজাপতি

প্রজাপতি বলেই জানি। সৌম্য বললেন, বাংলায় হরতনি বলে। ইংরেজিতে Common Jezebel

কত ধরনের প্রজাপতি যে ঘরের কাছে মেলে! ইয়ত্তা নেই। এই পর্বে দু’টি দেওয়া হল। একটা কভার পিকচারে। আরেকটি বর্ণনায়। আমাদের নাম জানা ছিল না। সৌম্য চট্টোপাধ্যায় জানালেন, কভারের প্রজাপতিটির নাম, Common Mormon। বাংলায় কালিম বলে। ছবির প্রজাপতিটি স্ত্রী। উপরের ছবির প্রজাপতিটিকে বাংলায় হরতনি বলে। ইংরেজিতে Common Jezebel।

৬। জোনাকি

ঘরে ঢুকে পড়া জোনাকি।

একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন কী? জোনাকি কমে গিয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আগে বাঁশবাগানের মাথায় গুচ্ছ গুচ্ছ জোনাকি ঝিকমিক করত। এখন তেমন দেখি না। প্রায় দেখাই যায় না। কাজের প্রয়োজনে হঠাৎ নজর করতে শুরু করি। দেখতে পাইনি তেমন। শুধু বনতুলসীর ঝোপে আর ধান জমির উপর দিয়ে গুটিকয়েকের ওড়াওড়ি। দু’একটা মাঝে মাঝে ঘরে ঢুকে পড়ে। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে জোনাকির খুব ক্ষতি হয়েছে। আর আলোয়। জোনাকির আলো মিলনের সংকেত। বিদ্যুতের আলোয় স্ত্রী জোনাকি পুরুষের সংকেত ধরতে পারে না। ফলে মিলন হয় না। প্রকৃতির এমন এক অমূল্য সৃষ্টি মানুষের জন্য ধ্বংস হতে বসেছে।

৭। ভোমরা

ভোমরা।

ছোটবেলায় একটা খেলা খেলতাম। একটা পুরনো বাড়ির ভাঙাচোরা জানলার শিকগুলো সব ঝরে গিয়েছিল। বা চুরি হয়ে গিয়েছিল। জানলার ফ্রেমে যেখানে শিকগুলো লাগানো থাকত সেই গর্তে কাঠি দিয়ে খোঁচালেই ভোঁ ভোঁ করে আওয়াজ উঠত। ওগুলোতে ভোমরা থাকত।

এটা কি আগেরটা থেকে আলাদা?

হাওড়া জেলার প্রাণী খুঁজতে গিয়ে পেলাম দু’টো ভোমরা। জাতি-বর্গ আছে নাকি কিছু?

৮। খঞ্জনা

খঞ্জনা।

বাংলার নিজস্ব পাখিগুলোর অন্যতম। দীপু আর বাবলা একদিন ঘুরতে বেরিয়া হঠাৎই দেখতে পায়। মোবাইলে কোনও মতে ছবি তোলে। তা দেখে শনাক্ত করা খুবই মুশকিল। তবুও বিশ্বরূপদা শনাক্ত করে দেন।

(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *