খাদ্য সফর বিশেষ ভ্রমণ

মুগের জিলিপির উৎস সন্ধানে

দীপক দাস

গুরুর অভাব পূরণ করে দিল শিষ্য। আমতা লোকাল গুড়গুড়িয়ে ঢুকছে বড়গাছিয়া স্টেশনে। আমরা তিনজন প্ল্যাটফর্মের সিঁড়ির মুখে। হঠাৎ দেখি গার্ডবাবু নেই। দীপুকে বলতেই ও বাজখাঁই গলায় ‘সৌগত সৌগত’ করে চিৎকার শুরু করল। ফিরতি কোনও সাড়া নেই। আসলে তরঙ্গে মিলছিল না। মিলবে কী করে! গার্ডবাবু কবেই ওর সৌগত নাম ভুলেছে। অফিসে ওকে নিশ্চয় পালবাবু বলে ডাকে। আমরা ডাকি ভজা বলে। কখনও শুভ। সৌগত ডাক কতদিন শোনেনি ও। অচেনা তরঙ্গ নিশ্চয় চিনতে পারছিল না। চিৎকার করে বললাম, ‘ভজা বলে ডাক।’ কথা শেষ হতে না হতেই দেখি, ওয়েটিং হল থেকে মুখে ক্যাবলা হাসি ঝুলিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসছে ভজা ইয়ে শুভ ইয়ে গার্ডবাবু সৌগত পাল।

যাত্রার শুরুতেই খোরাক। আর ছাড়া যায়! ওয়েটিং হলে কী করছিলি রে হতভাগা? ট্রেনে উঠে মিনমিন করে বলল, ‘একটা বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।’ আমরা রে রে করে উঠলাম, এলি কেন তবে? স্টেশনে বসে গল্প করে বাড়ি ফিরে যেতে পারতিস তো?’ ব্যাস মুখে কুলুপ গার্ডবাবুর। এটাই ওর স্বভাব। চাপ খেলে বোলতি বন্ধ।

এবার খাদ্য সফরে। অনেকদিন হয়নি। চোখ ভরাতে গিয়ে জিভ শুকিয়ে গিয়েছিল। তাই একটু রসস্থ করার চেষ্টা। এই সফরে ইন্দ্রবাবু সঙ্গ দেননি। ধীরে ধীরে ওর মধ্যে একটা পারিবারিক মন জেগে উঠছে। সংসারি সংসারি ভাব। ও থাকলে যাত্রাপথ একেবারে রাজপাল যাদব, জনি লিভারের ভাগম ভাগ। প্রতি পদে গুবলেট করতে করতে চলে। আর আমাদের মন খুশ। তবে শুভর শুভারম্ভে ইন্দ্রর অভাব অনেকটাই পুষিয়ে গিয়েছে। ওরই শিষ্য কিনা। এই সফরে ছোটা ডনও নেই। ফ্লুয়ে কাবু বাবলা। ওর ছোট ছোট ব্যঙ্গের তির মিস করব। দলের নবতম সঙ্গী চিনি। খেতে যাচ্ছি মিষ্টি। সঙ্গে আরেকটু চিনি থাকে ক্ষতি কী! গন্তব্য হাউর। পূর্ব মেদিনীপুর। দূরতম দোস্ত তরুণ সিংহ মহাপাত্র জানিয়েছিলেন, হাউরের একটা দোকানে অসাধারণ মুগের জিলিপি করে। ন’টার পর থেকে মেলে। কিন্তু বেশ দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। জিলিপির প্যাঁচ খুলতেই সকাল সকাল চারমূর্তি হাউর পানে।

বুল্কাদার সেই দোকান।

যাত্রাপথে তেমন রোমাঞ্চকর কিছু নেই। সেই ভোরে ওঠার ধকলে ট্রেনে বসে ঝিমুনি। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে খুনসুটি। আবাদা স্টেশন নিয়ে আমার একটু আগ্রহ ছিল। দীপুকে বলেছিলাম, স্টেশনের একটা ছবি নিতে। কিন্তু আবাদা হতাশ করল। আগে নিঝুম একটা স্টেশন ছিল। ফাঁকা। গাছগাছালিতে ভরা। সব ট্রেন আবাদাকে পাত্তাও দিত না। ওই একা স্টেশনটাই ছিল মনোহরা। অনার্স পড়ার সময়ে দেখেছি, কোচিং সেন্টারের এক সিনিয়র দাদার লেখায় ঘুরেফিরে আসত আবাদা স্টেশনের কথা। বছর পনেরো আগে আমি যখন আবাদাকে দেখি তখনও সুন্দর লেগেছিল। কিন্তু এখন স্টেশনের চারপাশটা ঘিঞ্জি। একটা লাইনে মালগাড়ি শান্টিং করা। লোকজন। মন খারাপ হয়ে গেল। একদিন পৃথিবীতে গাঁ ঘেঁষাঘেষি করে শুধু বাড়িঘরই থাকবে মনে হয়।

চলছে চেখে দেখা। হাউরে।

উলুবেড়িয়ায় গিয়ে ট্রেন থমকে গেল। আর নড়ে না। শুভ রেলের লোক। নানা সম্ভাবনার কথা বলছিল। এই হতে পারে। ওই হয়েছে হয়তো। কিন্তু আমার চিন্তা, জিলিপি যদি ফুরিয়ে যায়! দোকানের ফোন নম্বর জোগাড় করে দিয়েছিলেন তরুণবাবু। ফোন করলাম। ট্রেন আটকে। মিলবে তো? ফোনের গলা আশ্বস্ত করল, এই ভাজছি। নিশ্চিত হওয়া গেল। ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যে নিশ্চয় হাউরের লোক মুগের জিলিপি খেতে ঝাঁপিয়ে পড়বে না।

হাউর স্টেশনে ১০টা ২০ টুড়ির দিকে নেমেছিলাম। অপরিসর ওভারব্রিজ পেরিয়ে স্টেশনের বাইরে। দু’চার পা হাঁটতেই দোকানটা। বাজারের মধ্যেই। ভৌমিক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। আনাজের দোকানের পাশেই। দোকানের শ্রী-ছাঁদে তেমন আহামরি কিছু নয়। মানে মোটেই ঝাঁ চকচকে নয়। আধুনিক কেতার কোলাপসিবল গেট বা শাটার কিছু নেই। পুরনো আমলের ঝাঁপ ফেলার ব্যবস্থা। এই দোকানের এত নাম! ঢোকা হল দোকানে। কাচের শো কেসের কাছেই মেঝেয় বড় গামলায় রসাম্বুতে ঠাসাঠাসি হয়ে ভাসছে জিলিপি। দোকানদারকে জানানো হল, আমরাই সেই আশঙ্কিত ক্রেতা। যাঁরা একটু আগে উলুবেড়িয়া থেকে ফোন করেছিল। খালি পেটে তো মিষ্টি খাওয়া যায় না। পেটে কিছু দিয়েই আমরা ফিরে আসছি।

সৃষ্টিসুখে বিশ্বনাথবাবু।

মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দু’টো দোকান আগেই একটা জলখাবারের দোকান দেখেছি। বুল্কাদার স্পেশাল ঘুগনি মুড়ি দোকান। আরও কিছু মেলে দোকানে। চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, দেশি। ইয়ে ও এগরোল, চাউমিন, ডিম পাউরুটি আর কী! কিন্তু বুল্কাদার গর্ব মুড়ি, ঘুগনিতেই। মানবজীবনের এ এক অপার রহস্য। কার স্পেশালিটি যে কী সে ফুটে ওঠে! আমার এক সহপাঠী। সে পড়াশোনায় ভাল। ভাল ক্রিকেট খেলে। কিন্তু চুল নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত। ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুলের সে কী যত্ন। চুলে ঘেঁটে যাবে বলে ঘাড়টা সবসময় শক্ত করে রাখত। গিয়ে বসলাম বুল্কাদার দোকানে। এক চিলতে দোকান। আনাজপত্র সব টেবিলেই রাখা। একটাই টেবিল। বাঁধাকপি গাজর সরিয়ে বসলাম। চিনি দেখি, টেবিল সাফ করতে শুরু করল। সবজির টুকরোগুলো পরিষ্কার করেই চলেছে। দীপু জিজ্ঞাসা করল, ‘কী রে ওগুলো কি থালা ফুঁড়ে উঠবে নাকি?’ মুড়ি ঘুগনি খেয়ে তেমন স্পেশাল কিছু মনে হল না। আমাদের অন্য স্বাদে অভ্যস্ত জিভ বলে হয়তো!

মুগের জিলিপি খেয়ে জিভ কেমন সাড়া দেয় দেখি। তার পর ইতিহাসের খোঁজ। রাবড়ির খোঁজে গিয়ে বুঝেছিলাম, প্রথমেই ইতিহাসের পড়া ধরলে লোকে কেমন যেন ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে যায়। মনের দেওয়ালে ছেঁদা করার বড় অস্ত্র হল অর্থনীতি। না হলে এমনি সারা ভারত জুড়ে ডোল রাজনীতির এমন রমরমা। চাখার জন্য দু’টো করে জিলিপি নিলাম। গরম তখনও। মুখে মাখার ক্রিমের কাছাকাছি নরম। দু’বার মুখে নাড়াচাড়া করতেই সারা জিভে ছড়িয়ে পড়ল স্বাদ। জিভের সঙ্গে মন ভরল। খেতে খেতে অর্ডার। অর্থনীতির দ্বিতীয় ধাপ। আমরা চারজন তো নেবই। বাবলা আর ইন্দ্রকে ফোন করে ওদের চাহিদাও জেনে নেওয়া হল। আমরা খেতে থাকি। দোকানদার প্যাক করুন।

হাউরের দোকান।

খাওয়া শেষ হলে ছবি তোলার অনুমতি প্রার্থনা। মিলল। দোকানে বেশ ভিড়। লোকজনের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। তাঁরা আমাদের দিকে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি, এবার ইতিহাসের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। দোকানের বর্তমান মালিক বিশ্বনাথ ভৌমিক। উলুবেড়িয়া থেকে এঁকেই ফোন করা হয়েছিল। বিশ্বনাথবাবু জানালেন, মুগের জিলিপি তৈরি হচ্ছে তাঁর বাবা পুলিনবিহারীর আমল থেকে। এই দোকানটা ৮০ বছরের। রেলের জায়গায় তৈরি। রেল কোম্পানি মাঝে মাঝে দোকান ভেঙে দেয়। কিছুদিন কারবার বন্ধ রেখে আবার দোকান দেন। এবার বোঝা গেল, দোকানের কাঠামোয় কেন আধুনিক ব্যাপারস্যাপার নেই।

বাবার কাছ থেকেই জিলিপি করা শিখেছেন বিশ্বনাথবাবু। কিন্তু এমন একটা জিনিস এল কোথা থেকে? বিশ্বনাথবাবু জানালেন, তাঁর বাবা আগে মেলায় দোকান দিতেন। তার পর এই দোকানটি করেন। বাবার আমলে সবদিন জিলিপি হত না। হতো বছরে দু’বার। একবার ভাইফোঁটায়। আরেকবার জামাইষষ্ঠীতে। চাহিদা দেখে রোজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন কেমন চাহিদা? সেটা ছোট একটা হিসেবেই বোঝা যাবে। সকালে ৬০০ পিস আর বিকেলে ৬০০ পিস মুগের জিলিপি হয়। কোনওদিনই ফেলা যায় না একটা পিসও।

মুগের জিলিপি দেখতে অনেকটা ছানার জিলিপির মতো। সাধারণ জিলিপির মতো আড়াই প্যাঁচ দেওয়া যায় না। একটাই প্যাঁচ। কিন্তু প্যাঁচের দু’টো মুখ পরস্পরের কাছাকাছি এসে লাজুক ভাবে গুটিয়ে নেয়। সেই জন্য মনে হয় অর্ধেক অর্ধেক প্যাঁচ মিলে এক প্যাঁচ হয়েছে। উপকরণ সামান্যই। মুগ ডাল। ডালের কাই ধরে রাখার জন্য সামান্য ছাঁটাই বিড়ি ডাল মেশানো হয়। সেই মিশ্রণ প্যাঁচ মেরে তেলে ভাজা। তার পর রসের সাগরে ছেড়ে দেওয়া। আগে হাতে বাটা হত ডাল। শিলনোড়ায়। পাড়ার মেয়েদের কেজি প্রতি পয়সা দিয়ে ডাল বাটা চলত। সেই বাটা ফেটাতে হত ভাজার আগে। ফেটানোর কাজটা বিশ্বনাথবাবু করতেন। তিনি জানালেন, ফেটানোর ওপরেই নির্ভর করে জিলিপির স্বাদ। যেদিন উনি ফেটান না সেদিন জিলিপির স্বাদের তফাৎ হয়ে যায়। খদ্দের সেটা বুঝতেও পারেন। এখন অবশ্য বাটা এবং ফেটানোর কাজটা মেশিনে হয়। জিলিপির জন্য ডাল বাটা ফেটাতে ফেটাতে এক সময়ে ডান হাতের পেশি জখম হয়ে গিয়েছিল বিশ্বনাথবাবুর। ভেলোরে গিয়ে অপারেশন করাতে হয়। জামা খুলে দেখালেন কাটা দাগ। তার পর থেকে মেশিন। তবে ফেটানোটা এখনও যন্ত্রবিদের হাতের কৌশল। স্বাদের ফারাক হয় তাতে।

আষাড়ির জিলিপি।

ট্রেনে কথায় কথায় বেরিয়ে গিয়েছিল, হাউরে আমরা মুগের জিলিপি খেতে যাচ্ছি। এক সহযাত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি শুনেছেন ডেবরায় নাকি মুগের জিলিপি বিখ্যাত। ওখানেই নাকি জন্ম এই মিঠাইয়ের। বিশ্বনাথবাবু জানালেন, উনিও শুনেছেন সে কথা। ডেবরা ব্লকের লোয়াদার আষাড়িতে নাকি মুগের জিলিপির জন্ম। কিন্তু তিনি কোনওদিন আষাড়ি যাননি। হাউর পূর্ব মেদিনীপুরে। আষাড়ি পশ্চিমে।

এই রহস্যের সমাধান প্রয়োজন। চালাও পানসি আষাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই টোটো করে রাতুলিয়া বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাস সহযোগে আষাড়ি মোড়ে। সামান্য পথ। জিজ্ঞাসাবাদ করে পৌঁছনো গেল রাহুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। এই দোকানের কথাই শোনা গেল চারপাশে। মুগের জিলিপি অর্ডার দিলাম। শুভ হঠাৎ বলল, ‘এখানেও ক্ষীরের চপ।’ এই কথাটা ও ভৌমিক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেও বলেছে। তার মানে ও খেতে চায়। বললাম, খাবি? ও চুপ। মানে খেতে চায়। এটাই ওর বড় মুশকিল। জিলিপির সঙ্গে এল ক্ষীরের চপ। এখানকার জিলিপিটা খেতে একটু আলাদা মনে হল। আকারে একটু ছোট। প্যাঁচের মুখগুলো জড়ামড়ি করে রয়েছে। খেতেও হাউরের মতো মোলায়েম নয়। একটু যেন দানা দানা মনে হল। স্বাদে অপূর্ব।

খেতে খেতে টুকটাক গল্প জুড়লাম দোকানদারের সঙ্গে। দোকানদারের নাম হরিপদ রাহুল। তিনি নীলমাধববাবুর ভাই। বাড়ি লোয়াদার ধোবাডাঙ্গিতে। দোকান করেছেন আষাড়ির বিষ্ণুপুরে। বছর ৩৫ এর দোকান। আগে চাষবাস করতেন। এই দোকানে মুগের ডাল এখনও হাতে বাটা ও ফেটানো হয়। সেই জন্যই এই দোকানের জিলিপি খেতে একটু দানা দানা। সেই জন্যই বলছিলাম, দুই দোকানের জিলিপির তুলনা করা চলে না। দুই দোকান নিজের নিজের বৈশিষ্ট্যে ভাল। গ্রামের মেয়েরা বাটার কাজ করেন। কেজিতে ৫০ টাকা পান। বাটায় মেশানো হয় ছাঁটাই বিড়ির ডাল। মাখায় চিট আনার জন্য। হরিপদবাবুদের মুগের জিলিপি মুম্বই, চেন্নাই যায়। কলকাতায় তো যায়ই। উনি আমাদের আরেকটা মিষ্টি দিলেন। কালাকাঁদ। সে-ও অপূর্ব খেতে। কালাকাঁদ সব জায়গাতেই মেলে। কিন্তু এর স্বাদ সত্যিই আলাদা।

চিনি বাড়ির জন্য জিলিপি নিল। শুভ নিল কালাকাঁদ। হরিপদবাবু সেসবের দাম নিলেন। কিন্তু আমরা যেগুলো খেলাম, ক্ষীরের চপ, জিলিপি, কালাকাঁদ, সে সবের দাম নি‌লেন না। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও নয়। ক্যামেরাট্যামেরা দেখে। মহাজনেরা সেই জন্যই বোধহয় বলেন, ভেক না ধরিলে…।

আষাড়ির রাহুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।

দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু মুগের জিলিপির পূর্ব পুরুষদের পেলাম কী? মনটা খচখচ করছিল। আলোচনা করলাম চারজনে। প্রথমে মনে হয়েছিল, এই এলাকায় খুব মুগ ডালের চাষ হয়। তাই বাড়তি জিনিস দিয়ে কেউ কোনওদিন কোনও এক খেয়ালে জিলিপি বানিয়েছিলেন। সে তত্ত্ব খারিজ করতে হল। হরিপদবাবু জানালেন, তাঁর দোকানের মুগ ডাল আসে কলকাতা থেকে। সোনার বাংলা। দাম সাধারণ মুগ ডাল থেকে বেশি। আবার হরিপদবাবুর দোকানের বয়স হাউরের বিশ্বনাথবাবুর দোকানের বয়স থেকে অনেকটাই কম। তাহলে? একটা অনুমান করা যায়। হয়তো ডেবরাতেই তৈরি হয়েছিল প্রথম মুগের জিলিপি। কিন্তু তা কোনও স্থায়ী দোকানদারের হাতে নয়। করেছিলেন মেলায় জিলিপির দোকান দেওয়া কোনও কারিগর। তাঁর হয়তো উদ্ভাবনী প্রতিভা ছিল। জনপ্রিয় হয় তাঁর মিষ্টি। তাঁর দেখাদেখি অন্য মেলাদাররাও তৈরি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এলাকায় জনপ্রিয় হয়। সেই জনপ্রিয়তা দেখে কেউ কেউ দোকানে তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। যেমন করেছিলেন হাউরের বিশ্বনাথবাবুর বাবা, পুলিনবিহারী। উনি কিন্তু প্রথমে মেলায় দোকান দিতেন। জিলিপির আধ প্যাঁচ খোলা যায় কী ভাবে?

আলোচনা করতে করতেই টোটোয় চড়ে বসলাম। একবার ক্ষীরাই নামতে হবে। নদীর নামে স্টেশন। জায়গাটায় প্রচুর ফুল চাষ হয়। মনোরম নিশ্চয়। তার পর তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। পরদিন আরও তিন মিষ্টিমহলের আনাচেকানাচে ঘোরাঘুরি আছে যে!

ছবি— চিনি, শুভ, দীপু।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *